সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনার (RG Kar Doctor Death) বিচার চেয়ে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছেন টলিউডের তারকারা। আগামী ২৫ আগস্ট রাস্তায় নামবে বাংলা টেলিভিশনের অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীরা। এমন পরিস্থিতিতে হাতজোড় করে ভিডিও বার্তা দিলেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তনিমা সেন (Tanima Sen)। আর তাতেই নিজের ‘পুলিশ ভাই-বোনদের’ বোঝলেন উর্দির গুরুত্ব।
সিরিয়ালের শুটিংয়ের মাঝেই ভিডিওটি রেকর্ড করেছেন তনিমা সেন। বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বলেন, “আজকে আমার পুলিশ ভাই-বোনদের উদ্দেশে আমি কিছু কথা বলছি। হ্যাঁ, আমি ভাই-বোনই বললাম কারণ যারা এখনও চাকরি করছে, মানে শেষের দিকে আছে চাকরির, তারাও আমার থেকে একটু অন্তত ছোট। আর তাদের আমি হয়তো দিদির বয়সি। অনেকেরই আমি মায়ের বয়সি। আমি আপনাদের কাছে আজকে হাতজোড় করে একটা অনুরোধ করার জন্য এই ভিডিওটা করছি। আমাদের ছোটবেলা থেকে আমরা শুনে এসেছি, কলকাতা পুলিশকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তাঁদের এত দ্রুত সবকিছু সমাধান করে ফেলা, এত দ্রুত তাঁদের কাজের পদ্ধতি। তাতে নাকি বিদেশের, আচ্ছা আচ্ছা দেশের পুলিশরা মাথা নিচু করে ফেলত। আমি জানি আপনাদের মাথাতে এখনও সেই বুদ্ধি আছে। আপনারা ইচ্ছে করতে সব পারেন।”
এর পরই অভিনেত্রী বলেন, “দেখুন আমরা কাজ করতে এসে অনেক কিছুর সঙ্গে সমঝোতা করি। টাকা-পয়সার সঙ্গে, সময়ের সঙ্গে, নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ, অনেক কিছুর সঙ্গে। কিন্তু এমন কিছু কাজ আমরা করতে আসি না বা করতে বাধ্য হই না যে নিজের মনুষত্বর সঙ্গে আপস করতে হবে। আমার কী মনে হচ্ছে জানেন?… খুব লজ্জা করছে। একটা বাচ্চা ছেলেকেও যদি দলে খেলতে নিয়ে আমরা বের করে দিই যে তুই পারবি না বেরিয়ে যা, সেই ছোট ছেলেটারও যে লজ্জাটা আছে আমার পুলিশ ভাই-বোনেরা কিন্তু আজকে সেই লজ্জাটা হারিয়ে ফেলেছে।”
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সিআইএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে। সেকথা উল্লেখ করে অভিনেত্রীর বক্তব্য, “রাজ্য পুলিশ বা কলকাতা পুলিশ সবাই অপারগ, এই কাজটা করতে পারছে না। অন্যদের নিয়ে এসে এখানে দিয়ে দেওয়া হল। সেটা আমার থেকেও আপনাদের বেশি লজ্জা। কোথা থেকে যেন আপনারা একেবাবে শূন্যে নেমে গেলেন। আপনাদের এই মানসিকতা একেবারে শূন্য। মানে একে গুণ, ভাগ, যোগ-বিয়োগ যাই করা হোক না কেন ফলটা শূন্য। কিন্তু একটা কথা বলি, শূন্যর কিন্তু অনেক দাম আছে। এই একটা শূন্যের সামনে এক থাকলে দশ হয়। তেমনি আরও শূন্য এসে হাজার হাজার হয়ে যায়। আমি জানি আপনারা সবাই মিলে যদি একবার ওই মেয়েটির মুখের উপরে নিজের প্রিয় কোনও মানুষের মুখ ভাবেন, নিজের বোন, নিজের মা, নিজের বউ, নিজের বউদি, মাসি, পিসি যাই হোক না কেন? নিজেদের মানুষের মুখটা একবার ভাবুন। দেখুন, আপনার মনুষত্ব কিন্তু আবার জেগে উঠবে। আপনারা কিন্তু পারবেন।”
“আমি আপনাদের কাছে হাতজোড় করেই এই মিনতিটা করছি, আপনারা কিছু করুন। তবে একটা কথা, বারবার করে হাতজোড় করছি মানে এই নয় যে আমরা ভীষণ অসহায়। আজকে দেখেছেন তো! প্রচুর অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কিন্তু নেমে পড়েছে। তাঁদের মুখের দিকে একবার তাকান। তাতে নিজের বাবা-মায়ের মুখটা বসান। নিজের দাদু-দিদিমার মুখটা বসান। তাহলেও আপনাদের মনুষত্ব জেগে উঠবে। একটা কথা আছে না! কামারের এক ঘা। কামাররা কিন্তু পথে নেমে পড়েছে। শত শত, হাজার হাজার, কোটি কোটি কামার আজ পথে নেমে পড়েছে। প্রত্যেকে যদি একটি করে ঘা দেয় তাহলে ওই বাঁকা-ত্যাবড়া লোহাগুলো পিটিয়ে তারা সোজা করে দিতে পারবে… এখনও সময় আছে, আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ান। মানুষ হয়ে দাঁড়ান। আপনাদের যে পোশাকটা আছে তার অর্থ আপনারা নিশ্চই জানেন? ওটা সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। সেই পোশাকটার মান রাখুন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.