গৌতম ভট্টাচার্য: সম্পর্ক প্রায় ১০ বছরের। কিন্তু সেভাবে রাজনৈতিক মঞ্চে দেখা যায়নি। তিনি যে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ, সেটাই বোঝা যায়নি এতদিন। গত ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল (TMC) ভবনে এসে যোগদান করার পর খানিকটা আঁচ পাওয়া গেল। আর মার্চে তৃণমূল নেত্রী প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার পর তা একেবারে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হল। একুশের নির্বাচনে সোনারপুর দক্ষিণ কেন্দ্রে ঘাসফুল শিবিরের সৈনিক ছোটপর্দার নায়িকা লাভলি মৈত্র (Lovely Moitra)। এখন শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত। দিনশেষে প্রচারের পর সোনারপুরের তৃণমূল কার্যালয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে’র মুখোমুখি হলেন তিনি। রাজনীতিতে নবাগতা প্রার্থীর সঙ্গে কথা হল বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে। সপ্রতিভভাবে, নিজস্ব ভাবনা দিয়েই সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন লাভলি।
ছোটপর্দায় মেগা সিরিয়ালের অভিনেত্রী, দিনের বেশিরভাগ সময়েই ব্যস্ত থাকেন। তবে কেন জনপ্রতিনিধি হিসেবে লাভলি মৈত্রকে বাছবেন সোনারপুর দক্ষিণের মানুষজন? শুরুতেই এই কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়ে মোটেই বিভ্রান্ত নন নবাগতা। স্পষ্ট বললেন, ”সেভাবেই নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। মানুষের মনে ভরসা জোগাতে হবে। কাজের জায়গা যেমন সামলাব, তেমনই এখানকার মানুষজন যদি আমায় নির্বাচিত করেন, তাহলে তাঁদের প্রতিও আমার দায়িত্ব পালন করব।” টেলিদুনিয়া থেকে রাজনীতির আঙিনা – এই পরিবর্তনটা কেমন? কতটা কঠিন ছিল পথ? মেগা ধারাবাহিকের ‘তিতির’-এর জবাব, ”আগে আমাকে মানুষজন টিভিতে দেখে চিনেছেন আর এখন ঘরের সামনে আমাকে দেখছেন। খুবই অভিভূত আমি সকলের ভালবাসা পেয়ে। অনেকেই জড়িয়ে ধরে বলছেন, ‘অভিনয় ভাল লাগে, ওটা কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে। আরও বেশি করে দেখতে চাই।’ দুটো জায়গার অভিজ্ঞতা দু’রকমের।”
এসব পর্ব পেরিয়ে সরাসরি রাজনীতির প্রশ্ন রাখা হল লাভলির সামনে। বিজেপিকে (BJP) কেন ভোট দেওয়া উচিত নয়? এই প্রশ্নটিই সবচেয়ে সহজ মনে হল নবাগতা লাভলির। হেসে নিজের উত্তর দিলেন তিনি। বললেন, ”খুবই সহজ উত্তর। বিজেপিকে ভোট দিলে মানুষ ঠকবেন। শুনছি নাকি আমাদের প্রধানমন্ত্রী দশ লক্ষ টাকার স্যুট পরেন। কিন্তু তিনি একাই শুধু পরেন না, তিনি মানুষকে ১৫ লক্ষ টাকার টুপিও পরান। প্রতিশ্রুতি যা দেন, তা পালন করেন না। এই তো গত লোকসভা ভোটে প্রচুর প্রতিশ্রুতি দিলেন ওদের প্রার্থীরা। মানুষও বিশ্বাস করে ১৮টি আসনে তাঁদের নির্বাচিত করলেন।কিন্তু তারপর আর দেখা যায়নি তাঁদের। ফলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর রাখা থেকে বহু দূরে বিজেপি। সেটা একমাত্র করে তৃণমূল সরকার। এছাড়া বিজেপি মহিলাদের সম্মান করতে পারে না। দেখুন না, আমাকেই ‘অমুকের স্ত্রী’ বলে বারবার চিহ্নিত করছে। আসলে ওরা মেয়েদের আলাদা পরিচিতি তৈরি হোক, সেটাই চায় না। মা-বোনেদের সম্মান যাঁরা করতে পারেন না, তাঁদের ভোট দেওয়ার অর্থ নেই বলেই মনে করি।”
সোনারপুর দক্ষিণ (Sonarpur Dakshin) কেন্দ্রে কার্যত দুই অভিনেত্রীর লড়াই। এখানে বিজেপি প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন আরেক টেলি অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু (Anjana Basu)। তাঁর সঙ্গে লড়াইটা কেমন? প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই লাভলি বললেন, ”ওঁর সঙ্গে আমার আলাপও নেই, লড়াইও নেই। উনি ওঁর মতো করে লড়াই করবেন, আমি আমারটা করব। এমনিতে কাজ কখনও একসঙ্গে করিনি। মাঝেমধ্যে দেখা হয়েছে। তাই কোনও বন্ধুত্ব বা ঘনিষ্ঠতা নেই। তবে একটা কথা, মানুষ কিন্তু তারকা পরিচিতি দেখে ভোট দেবেন না। সেখানে মানুষের পাশে থাকার আস্থা অর্জন করতে হবে। তাঁদের জন্য কাজ করতে হবে।” মিনিট কুড়ি তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, রাজনীতির যাত্রাপথ তাঁর কাছে নতুন হলেও সাফল্যের সঙ্গেই সেই পথ পরিক্রম করতে পারবেন, এই ভরসা রাখেন ‘জলনুপূর’এর ‘কাজু’, ‘মোহর’-এর প্রতিবাদী মেয়ে ‘তিতির’। কারণ, জনতার দরবারে তিনি যে শুধুই লাভলি মৈত্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.