গণনাকেন্দ্রের বাইরে এক অনুগামীর সঙ্গে লকেট চট্টোপাধ্যায়
সৌম্য মুখোপাধ্যায়: দু’বারের তৃণমূল সাংসদ রত্না দে নাগকে হারিয়ে হুগলি লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হলেন বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। আর এই জয়ের মধ্যে দিয়েই ইতিহাসকে স্পর্শ করলেন তিনি। জনসংঘ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫২ সালের লোকসভা নির্বাচনে কয়েকজনকে প্রার্থী করেছিলেন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ভোটের ফল প্রকাশিত হতেই দেখা যায়, দক্ষিণ কলকাতা থেকে তিনি আর হুগলি থেকে জয়ী হয়েছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
এরপর কেটে গিয়েছে ৬৭ বছর। হয়ে গিয়েছে ১৭টি লোকসভা নির্বাচন। ভারতকেশরী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের তৈরি জনসংঘও নবকলবরে ফিরেছে ভারতীয় জনতা পার্টির নামে। ১৯৯৯ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর পর ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন নরেন্দ্র মোদি। একসময়ে মাত্র দু’জন সাংসদ থেকে ২৮১ সাংসদের দলে পরিণত হলেও হুগলি থেকে গিয়েছিল অধরাই।
২০১৪ সালে এই আসন থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে ওঠে বিজেপি। তাই দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল তৎকালীন দলের থিঙ্কট্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও বিশিষ্ট সাংবাদিক চন্দন মিত্রকে। কিন্তু, সারা দেশে মোদি ঝড় বইলেও রত্না দে নাগকে পরাজিত করা যায়নি। বিজেপির ভোট কিছুটা বাড়লেও ছিনিয়ে নেওয়া যায়নি হুগলি লোকসভা আসনটি। বরং সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহার পিছনে তৃতীয় স্থানে থেকেই সন্তুষ্ট হতে হয় তাঁকে। গতবছর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগও দেন তিনি।
তাই এবছর লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর চিন্তায় ছিলেন হুগলির বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। প্রার্থী কে হবেন, তার থেকেও বড় প্রশ্ন ছিল এবারও কি অধরাই থাকবে জয়? কিন্তু তাঁদের মুখে হাসি ফোটালেন রাজ্য বিজেপির মহিলা সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। দলের তরফে হুগলি লোকসভা আসন থেকে তাঁর নাম ঘোষণা হতেই শপথ নিয়েছিলেন জয় ছিনিয়ে আনার। তাই ব্যান্ডেলের একটি বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজেই লেগে পড়েছিলেন স্বপ্নপূরণের লড়াইয়ে। ৪৫ দিন ধরে দলের নেতা-কর্মী ও ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অনুগামীকে নিয়ে চষে ফেলেছিলেন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের অলিগলি, পথঘাট।
গত ৬ মে ভোটের দিন দুপুরে ধনিয়াখালিতে ভোট লুট ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয় তাঁকে। সেই খবর করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিকও জখম হন। পরে চন্দননগরের দুটি ওয়ার্ডেও তাঁর উপর হামলা চালানো হয়। কিন্তু, তারপরও লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যাননি তিনি। আর তারই সুফল পেলেন বৃহস্পতিবার। মোদি সুনামিতে গোটা দেশ যখন গেরুয়া রঙে রাঙিয়েছে, তখন হুগলিতে রত্না দে নাগকে ৭৩ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করে ইতিহাস স্পর্শ করলেন তিনি।
এপ্রসঙ্গে হুগলির ভাবী সাংসদ লকেট বলেন, “সবাইকে ধন্যবাদ আমাকে ভরসা করার জন্য। মানুষের জন্য কাজ করব বলেই ঠান্ডা ঘরের নিশ্চিন্ত জীবন থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। আমার কেন্দ্রের ভোটাররা সেই কথা বুঝতে পেরে আমাকে সম্মানিত করেছেন। তাঁদের এই বিশ্বাসের মর্যাদা আমি রাখবই। ১৯৫২ সালে দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে এই আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তারপর আর জয় আসেনি। তাই দল যখন এখন থেকে প্রার্থী হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করে তখন নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়েছিল। মনে মনে শপথ নিয়েছিলাম আমাকে জিততেই হবে। তবেই সম্মান জানাতে পারব দলের ও পশ্চিমবঙ্গের জনক ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে। আজ সেই স্বপ্নপূরণ হওয়ায় নিজেকে তৃপ্ত মনে হচ্ছে। তবে আসল কাজ বাকি রয়েছে। সাংসদ হিসেবে এই এলাকার প্রতিটি সমস্যার সমাধানে ১০০ শতাংশ মনোনিবেশ করাই এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.