সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এটা এভারেস্ট নাকি চিড়িয়াখানা? বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে সুদূর অ্যারিজোনা থেকে নেপালে এসেছেন পেশায় চিকিৎসক এড ডরিং। এভারেস্টে চড়ার লাইন দেখে হতভম্ব ডরিং সংবাদমাধ্যমকে বললেন, “এটা কী? এভারেস্ট নাকি চিড়িয়াখানা যে, মানুষের এমন ঢল?”
কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমলাইনে ঘুরছে একটা ছবি। হিমালয়ে উঠতে গিয়ে ট্রাফিক জ্যামে ফেঁসেছেন অভিযাত্রীরা। সেই নিয়ে কম ট্রোলিং হয়নি। এর মধ্যেই ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের’ রিপোর্ট জানান দিল ডরিংয়ের স্বপ্নভঙ্গের কথা। ছোট থেকে এভারেস্টের চূড়োয় ওঠার স্বপ্ন দেখতেন এড ডরিং। ভয় কাটিয়ে মনস্থির করেছিলেন এবছরই স্বপ্নটা পূরণ করে নেবেন। কিন্তু তেমনটা আর হচ্ছে কোথায়? দিন চারেক আগে নেপালে এসে আবেদনপত্র জমা দেন। কিন্তু এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন ভুলে আপাতত নেপালের হোটেল বিশ্রাম নিচ্ছেন ডরিং। সংবাদমাধ্যমকে ডরিং বলেছেন, “অভিযাত্রীরা জ্যামে ফেঁসেছেন, সেটা সত্যি। ছোট্ট টেবিল টেনিস খেলার বোর্ডের মতো সরু যাত্রাপথ। তাতেই দাঁড়ানোর জন্য ঠেলাঠেলি লেগে রয়েছে। আর পাহাড়ে উঠতে গিয়ে সেলফি নেওয়ার যা ধুম দেখলাম, সেটা দেখে কষ্টই হল।” এড ডরিং আরও বলেন, “সবচেয়ে ভয়ংকর হল, যখন এক মৃত অভিযাত্রীর দেহের উপর দাঁড়িয়েছিলাম। জানতামই না পায়ের তলায় শব।” প্রসঙ্গত, এই এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে ১১ জন পর্বতারোহী প্রাণ হারিয়েছেন।
শুধু এড ডরিং নয়, এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন নিয়ে জ্যামের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ভারতের আমিশা চৌহানও। তাঁরও সেই এক অভিজ্ঞতা। আপাতত পায়ে বরফের কামড় খেয়ে আমিশা শুয়ে কাঠমাণ্ডু হাসপাতালের বেডে। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে আমিশা বলেছেন, “প্রচুর লোকের ভিড়। পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ কার আছে, কার নেই, সেসব দেখার কোনও লোক নেই। আমিও ওই জ্যামে ছিলাম। কিন্তু উপরে অক্সিজেন-প্রবাহ কম থাকায় ফিরতে বাধ্য হয়েছি।” আমিশা জানিয়েছেন, গত ১৬ মে তাঁর দলের দুই অভিযাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে। মঙ্গলবার প্রাণ হারিয়েছেন কলোরাডোর অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কুলিস। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। গত বছর এই অভিযাত্রীদের ঢলের ফায়দা নিয়েছে বিমা সংস্থাগুলো। এভারেস্টের চূড়োয় ছুঁতে চাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময়ই বিমার প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থা নিয়েছিল। কিন্তু পাহাড়ে উঠতে গিয়ে সামান্য অসুস্থতা দেখলেই অভিযাত্রীকে নামিয়ে আনে শেরপারা। এড ডরিংয়ের মতো অভিযাত্রীরা বিমা সংস্থাগুলোর জন্য নিয়ম বেঁধে দেওয়ার কথা জানাচ্ছেন। এমনকী, উপরে ওঠার জন্য ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দুর্নীতি কমানোর জন্যও আর্জি করেছেন। নেপাল সরকার অবশ্য এত কিছু মানতে নারাজ। নেপালের পর্যটন বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক কর্তা জানিয়েছেন, অভিযাত্রীদের পারমিট নিয়ে কিছু করতে তারা পারবেন না। এই মৃতু্যর জন্য নেপাল সরকার দায়ী নয়। কারণ, অভিযাত্রীরা স্বেচ্ছায় এভারেস্ট জয় করতে আসেন।
এ বছর এই মে-জুন মাস বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়োয় ওঠার আদর্শ সময়। পরিসংখ্যান বলছে, আরোহণের ব্যস্ততম মরশুম প্রত্যক্ষ করছে এভারেস্ট। পাঁচশোর বেশি মানুষ এভারেস্ট অভিযানে পা বাড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে জানিয়ে রাখা ভাল, চলতি বছরের ‘উইন্ডো’ অর্থাৎ লাগাতার খারাপ আবহাওয়ার মঝ্যে যেটুকু সময় আকাশ পরিষ্কার থাকে, তা মাত্র চার দিনের। এদিকে মাকালু পর্বত জয় করে ফেরার পথে তুষারঝড়ে মারা গিয়েছেন বাঙালি পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষ। তাঁর দেহ এসে পৌঁছল বালির নিশ্চিন্দার বাড়িতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.