শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: এশিয়াডে প্রথমবার হেপ্টাথলনে সোনা। বাংলা তথা গোটা দেশ এখন জলপাইগুড়ির স্বপ্নার সোনার দৌড়ে বুঁদ। তার মধ্যেই আরও খুশির খবর দিল রাজ্য সরকার। ইতিহাস গড়ে বাংলা তথা ভারতের মুখ উজ্জ্বল করার পুরস্কার স্বরূপ ১০ লক্ষ টাকা স্বপ্নাকে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। বুধবার ইতিহাস সৃষ্টির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জলপাইগুড়ির পাতকাটা গ্রামের ঘোষপাড়ার বাড়িতে স্বপ্নার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব। তারপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বপ্নার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। স্বপ্নাকে সরকারি চাকরির পাশাপাশি ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কারও দিচ্ছে রাজ্য। স্বপ্নার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী বুধবারই টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এবার সরকারি চাকরি ও আর্থিক পুরস্কারের কথা ঘোষণা করলেন তিনি।
এশিয়ান গেমসে সোনা জয় করে শুধু পাড়ার মুখ নয় গোটা দেশের মুখ উজ্বল করেছে পাতকাটার ঘোষপাড়ার মেয়ে। বুধবার টিভির পর্দায় জয়ী মেয়ের মুখ ভেসে উঠতেই আর আবেক চেপে রাখতে পারেননি মা বাসনা বর্মন। আনন্দে কেদেই ফেললেন তিনি। দু’হাত ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জোড় করে তার প্রথম প্রতিক্রিয়া, ভগবান কথা শুনেছেন। মেয়ের সাফল্যের জন্য ভগবানের কাছে মানত করেছিলেন মা বাসনা বর্মন। অসুস্থতার কারণে বিছানা থেকে না নামলেও এদিন উঠে দাঁড়ান বাবা পঞ্চানন বর্মন। তাঁর বক্তব্য, ‘জানতাম স্বপ্না পারবেই। ও পেরে দেখাল।’ উচ্ছ্বসিত পাড়া প্রতিবেশীরাও। পাড়ার মেয়ের সোনা জয়ের আনন্দে এদিন মিষ্টিমুখ করলেন পাড়া প্রতিবেশীরাও।
[‘জ্যাভলিনের পরই নিশ্চিত হয়ে যাই, সোনা পাচ্ছে স্বপ্না’]
প্রতিবেশী দুলাল বর্মন জানান, দুঃখ কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছে স্বপ্না। পাড়ার স্কুলের মাঠ থেকেই শুরু হয়েছিল স্বপ্নের দৌড়। দু’পায়ে ছটি করে আঙুল। মেয়ের অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্নপূরন করতে কম কষ্ট সহ্য করতে হয়নি পেশায় ভ্যানচালক পঞ্চানন বর্মনকে। স্ত্রী চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার। সংসারের জোগান টানার পাশাপাশি মেয়ে স্বপ্নার স্বপ্নপূরণের জন্য চা-বাগানের অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ করতে হয় মা বাসনা বর্মনকে।
দাদা অসিত বর্মন জানান, ‘কষ্টের মধ্যেও পরিবারের সকলেরই স্বপ্ন ছিল স্বপ্নাকে নিয়ে। কালিয়াগঞ্জ স্কুলের মাঠ থেকে বেড়িয়ে জেলা, রাজ্য, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে একের পর এক খেলায় নিজেকে প্রমাণিত করে চলেছিল স্বপ্না। জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাথলিট সচিব উজ্বল দাস চৌধুরি জানান, ‘স্বপ্নার পদক জয়ের খিদেই আজ ওকে এই জায়গায় পৌছে দিয়েছে।’ এশিয়ান গেমসের ময়দানকে এবার লক্ষ্য করে নিজেকে তৈরি করছিলেন স্বপ্না। কাঁধ আর দাঁতের ব্যথা মাঝে মধ্যে সমস্যা হয়ে দাড়ালেও যন্ত্রণাকে আমল দেয়নি সে। অসুস্থতা নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন জাকার্তায়। মুখে নীল ব্যান্ডেড জড়িয়ে মঙ্গলবার ট্র্যাকে নামেন স্বপ্না। শুরু হয় স্বপ্নজয়ের লড়াই। একের পর ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছনে ফেলে সোনা জয়ের স্বপ্নপূরন করেন স্বপ্না।
[দাঁতের যন্ত্রণা চেপেই সোনার দৌড় স্বপ্নার, আনন্দে আত্মহারা জলপাইগুড়ি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.