Advertisement
Advertisement
অক্ষয়

বাল্যবিবাহ অভিশাপ! সচেতনতায় সাইকেলে দেশভ্রমণ পুরুলিয়ার অক্ষয়ের

টানা ৩৯০ দিন প্রায় ২৪টি রাজ্য ঘুরে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে নজির অক্ষয়ের।

Waging war on child marriage youth cycles across India
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:March 29, 2019 5:04 pm
  • Updated:March 29, 2019 5:04 pm  

শুভময় মণ্ডল: বয়স মাত্র ২৩। কিন্তু মনের দিক থেকে অনেকটা পরিণত হয়ে গিয়েছেন পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি এলাকার বুরদার অক্ষয় ভগত। পারিপার্শ্বিক পরিবেশই তাঁকে বয়সের তুলনায় অনেক বড় করে তুলেছে। আর তাই তো নিজের উপলব্ধিকে গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন তিনি। তাও একেবারে অন্যরকমভাবে।

কী সেই উপলব্ধি? আসলে খুব ছোটবেলায় চোখের সামনে দুই নাবালিকা দিদির বিয়ে হতে দেখেছিলেন অক্ষয়। তখনও বাল্যবিবাহ নিয়ে তেমন জ্ঞান ছিল না তাঁর। কিন্তু বিয়ের পর বছরের পর বছর দিদিদের মানসিক ও শারীরিকভাবে নানা সমস্যায় পড়তে দেখেছেন। তখনই ঠিক করেন, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে গর্জে উঠবেন। সমাজকে সচেতন করবেন। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। প্রশাসন বা পুলিশের সাহায্যের অপেক্ষা করেননি। সিদ্ধান্ত নেন একাই শুরু করবেন এই সংগ্রাম। শুরুটা করেন নিজের বাড়ি থেকে। নাবালিকা বোনের বিয়ের আটকে দিয়ে বুরদা গ্রামে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন অক্ষয়। তারপর বেরিয়ে পড়েন গোটা দেশকে সচেতন করতে। গতবছর ৫ মার্চে বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। টানা ৩৯০ দিন প্রায় ২৪টি রাজ্য ঘুরে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করেন মাধ্যমিক পাশ অক্ষয়। আগামী ১০ এপ্রিল অভিযান শেষ করে বাড়ি ফিরবেন অক্ষয়।

Advertisement

[আরও পড়ুন: নো-বল বিতর্কে ক্ষোভ উগরে দিলেন কোহলি, সরব প্রাক্তন তারকারাও]

রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, কেরল, তামিলনাড়ু-সহ প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার পথ সাইকেলে অতিক্রম করেন অক্ষয়। রাজ্যগুলির বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ক্লাবে গিয়ে সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রীদের সঙ্গে বাল্যবিবাহ নিয়ে কথা বলেন। তবে পাঞ্জাব, হরিয়ানার মতো রাজ্যের গ্রামগুলিতে গিয়ে নানা বাধার সম্মুখীনও হতে হয়েছে তাঁকে। অনেকেই বাল্যবিবাহ নিয়ে তাঁর পরামর্শের বিরোধিতা করেন। কিন্তু তাতেও দমানো যায়নি অক্ষয়ের ইচ্ছাশক্তিকে। তাই তো দীর্ঘ সফরে মানুষের ভালবাসাও পেয়েছেন অনেকখানি। বাড়ি থেকে ২০০০ টাকা নিয়ে বেরিয়েছিলেন। বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, সেই ২০০০ টাকাই অক্ষত অবস্থায় ফেরত এনেছেন। অর্থাৎ গোটা সফরে কোনও খরচই হয়নি তাঁর। কখনও মন্দির, গুরুদ্বার তো কখনও আশ্রমে রাত কাটিয়েছেন তিনি। আর মানুষের ভালবাসাতেই পেট চলেছে।

কলকাতা পৌঁছে অক্ষয় বলছেন, “কয়েকটা রাজ্য ছাড়া গোটা দেশে এই অভিযান নিয়ে ভালই সাড়া পেয়েছি। এতো অল্প বয়সে যে কাজটা সফলভাবে করতে পারলাম, সেটাই ভাল লাগছে। আপাতত খুব ক্লান্ত। বাড়ি ফিরে বিশ্রাম নেব। তবে আরও একবার সাইকেলে চেপে এই অভিযানে বেরনোর ইচ্ছা আছে। তখন বাংলার সবকটা জেলা ঘুরে নর্থ-ইস্টের দিকে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।”

অল্প বয়সেই অভাবের সংসারের হাল ধরেছিলেন অক্ষয়। পেপার, দুধ, লটারি বিক্রি করেই সংসার চালাতেন। আবার বিনামূল্যে গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। বাল্যবিবাহ নিয়ে তাদেরও শিক্ষা দেন। অক্ষয়ের আশা, তাঁর গ্রামে শিক্ষার আলো ফুটলে বাল্যবিবাহকে সমূলে বিচ্ছেদ করা সম্ভব হবে। আমির খানের সুপারহিট ছবি রং দে বসন্তিতে একটা সংলাপ ছিল। কোই ভি দেশ পারফেক্ট নহি হোতা, উসে বেহতর বানানা পরতা হ্যায় (কোনও দেশ পারফেক্ট হয় না, পারফেক্ট বানাতে হয়)। তরুণ অক্ষয়ের এই অদম্য ইচ্ছা যেন চোখে আঙুল দিয়ে সমাজকে সে শিক্ষাই দিয়ে গেল।

[আরও পড়ুন: পঞ্চমবার বাবা হচ্ছেন রোনাল্ডো! জোর জল্পনা ফুটবল মহলে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement