দুলাল দে: কান্তিরভা স্টেডিয়াম থেকে মিনিট ১৫ গেলে ‘অনিল কুম্বলে সার্কেল’। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘরের ছেলের ১০ উইকেট নেওয়ার স্মৃতিকে সব সময় সতেজ করে রাখার জন্যই এই গোল চক্করের নাম, অনিল কুম্বলে সার্কেল। সেটাকে বাঁদিকে রেখে মিনিট পাঁচ গেলেই ‘সাউথ ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব।’ কৃত্রিম ঘাসে মোড়া একটি প্রাইভেট ক্লাব। এই সাউথ ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের মাঠই আপাতত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য সুনীলদের প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড।
এমনিতে বেঙ্গালুরুতে যখন-তখন বৃষ্টি নেমে যাচ্ছে। ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচের (Igor Stimac) কথায়, ‘ইংলিশ ওয়েদার।’ হয় সকালের দিকে, নাহলে সন্ধ্যার দিকেই বৃষ্টিটা বেশি নামে। তাতে আর যাই হোক, গরম একদমই নেই। সেরকম শনিবার সামনে নেপালকে পেয়ে ভারতীয় দলের (India) শিবিরও যে মারাত্মক তেতে রয়েছে এরকম ব্যাপারও নেই। তাতে কোচের চেয়ারে ইগর স্টিমাচ বসে থাকুন আর না-ই থাকুন। নেপালকে হারানোর জন্য ভারতীয় দল যে মারাত্মক চাপে আছে এরকম নয়।
আপাতত গ্রুপের যা অবস্থা, তাতে শনিবার নেপালকে (Nepal) হারালেই শেষ ম্যাচে কুয়েতের বিরুদ্ধে খেলার আগেই শেষ চারে পৌঁছে যাবে ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখার জন্য শনিবারের ম্যাচে কোচের চেয়ারে বসতে পারবেন না কোচ ইগর স্টিমাচ। খেলা দেখতে হবে গ্যালারি থেকে।
মাঠের যেদিকে রিজার্ভ বেঞ্চ, তার পিছনের দিকে গ্যালারিতে বসলে, প্রয়োজনে সেখান থেকে নেমে এসে মাঠের ফেন্সিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে নির্দেশ দিলেও দিতে পারতেন ভারতীয় কোচ। কিন্তু নিয়ম বলছে, রিজার্ভ বেঞ্চের উল্টোদিকে কান্তিরভার ভিআইপি গ্যালারিতে বসতে হবে তাঁকে। মানে, দরকার পড়লেও ম্যাচ চলাকালীন ফুটবলারদের কোনও নির্দেশই দিতে পারবেন না তিনি। তাতে যে খুব একটা অসুবিধা হতে পারে মনে করছেন না ইগর স্টিমাচ। বললেন, ‘‘মহেশ গাওলি ঠিক সামলে নেবে। আর এ তো পরীক্ষার আগের দিন পড়া নয়। সারা বছর ধরেই ভালভাবে পড়াশোনা করায়, পরীক্ষার আগে ফুটবলাররা ভালভাবে তৈরি আছে। কোনও অসুবিধা হবে না।’’
তিনি কোচের চেয়ারে বসুন আর না-ই বসুন, যে দলটা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলেছিল, সেই দলটা কিন্তু অনেকটাই বদলে যাচ্ছে নেপালের বিরুদ্ধে। আর গ্রুপের শেষ ম্যাচের আগেই যদি শেষ চারে খেলা নিশ্চিত হয়ে যায়, তাহলে শেষ ম্যাচে পুরো দলটাকেই যে বদলে দেওযা হবে, সেরকমই খবর ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে।
তথ্য বলছে, ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার পর থেকে নেপালের বিরুদ্ধে কখনও হারেননি ইগর স্টিমাচ। স্টিমাচের কোচিংয়ে এখনও পর্যন্ত চারটে ম্যাচ খেলে ভারতীয় দল জিতেছে তিনটি ম্যাচে। একটা ড্র। শেষ বার দেখা হয়েছিল, দু’বছর আগে মালদ্বীপে সাফ কাপের ফাইনালে। যে ম্যাচটায় হারলে তখনই চাকরি যেতে পারত এই ক্রোয়েশিয়ান কোচের। সুনীল ছেত্রীরা নেপালকে হারিয়েছিলেন ৩-০ গোলে। অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর নিজের গোল ছাড়াও বাকি দুটি গোল করেছিলেন সুরেশ সিং এবং আব্দুল সাহাল।
তবে ভারতীয় দল মনে করছে, সেই নেপালের সঙ্গে এই নেপালের অনেকটাই পার্থক্য। কারণ, কিছুদিন আগেই নেপালের জাতীয় কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন, আই লিগে গোকুলাম কেরালাকে পর পর দু’বার লিগ চ্যাম্পিয়ন করা কোচ ভিনসেনজো আলবার্তো আনেসে। দু’বার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ হওয়ার জন্য, মাঠের ভিতর সুনীল ছেত্রীদের প্রতিটি মুভমেন্ট খুব ভালভাবে দেখেছেন। তবে বেঙ্গালুরুতে সাফের প্রথম ম্যাচে কুয়েতের কাছে ১-৩ গোলে হেরে গিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছে নেপাল। ভারতের বিরুদ্ধে এখন তাদের ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৭৪তম স্থানে থাকা নেপাল যদি শনিবার ভারতের কাছে হারে, তাহলে পাকিস্তান ম্যাচের আগেই সাফ থেকে বিদায়। ভারতীয় দল মনে করছে, ঠিক এই কারণেই শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই চালাতে পারেন আনেসের ছেলেরা।
প্রথম দিন কান্তিরভার স্টেডিয়াম কানায় কানায় ভর্তি ছিল। আর টিকিটের যা চাহিদা, তাতে শনিবার ভারত-নেপাল ম্যাচেও বহু দর্শক মাঠে ঢোকার সুযোগ পাবেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.