সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পেশাদার কেরিয়ারে প্রথমবারের জন্য কোনও ট্যুর খেতাবে খেলতে নেমেছিলেন। আর প্রথমবারেই চ্যাম্পিয়নের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়লেন লাতভিয়ার মহিলা টেনিস খেলোয়াড় জেলিন ওস্তাপেঙ্কা। তাও কিনা ফরাসি ওপেনের মতো গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতলেন। এর পাশাপাশি আরও একটি রেকর্ড গড়লেন ওস্তাপেঙ্কা। ফরাসি ওপেনের ইতিহাসে প্রথম অবাছাই হিসাবে চ্যাম্পিয়ন হলেন৷ ফাইনালে তিন সেটের লড়াইয়ে মাত্র কুড়ি বছর বয়সি খেলোয়াড় হারালেন ব়্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বরে থাকা রোমানিয়ার টেনিস খেলোয়াড় সিমোনা হালেপকে। খেলার ফল ওস্তাপেঙ্কার পক্ষে ৪-৬, ৬-৪, ৬-৩।
মাত্র কয়েকবছর আগে গুলবিস যেদিন ফরাসি ওপেন থেকে ফেডেরারকে ছিটকে দিয়েছিলেন, রোলাঁ গারোয় অপ্রত্যাশিত বিজয়ীর প্লেয়ার্স বক্সে বসেছিলেন ছোটখাটো চেহারার টিনএজার মেয়েটি৷ গ্র্যান্ড স্লামে সেবারই প্রথম লাতভিয়ান টেনিস সবার নজর কেড়েছিল৷ ফেডেরার কিনা ফরাসি ওপেন থেকে বিদায় নিলেন লাতভিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীর হাতে! কে জানত, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সেদিনের লাতভিয়ান টেনিসের উত্থানের নিছক এক সাক্ষী স্বয়ং রোলাঁ গারোয় ইতিহাস রচনা করবেন? ভুল৷ গ্র্যান্ড স্লামেই ইতিহাস গড়বেন! অথচ জনপ্রিয় স্পোর্টস ইভেন্ট বলা তো দূরের কথা, লাতভিয়াতে কিন্তু টেনিসের তেমন চল-ই নেই৷ ওস্তাপেঙ্কা নিজের মুখেই কবুল করেছেন সেটা৷ ‘খেলাটা শিখতে, ভাল পারফরম্যান্স করতে সাপোর্ট টিম রাখতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন পড়ে বলে আমার দেশ লাতভিয়ায় টেনিস জনপ্রিয় নয়৷’ এদিকে, টুর্নামেন্টের চার দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিশ্ব ব়্যাঙ্কিয়ের (৪৭) প্লেয়ার হিসাবে জিতলেন খেতাব৷ দু’দিন আগে ২০তম জন্মদিনে লাতভিয়ার প্রথম প্লেয়ার হিসাবে কোনও গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে ওঠার পর প্যারিসে ওস্তাপেঙ্কাকে ফোন করেছিলেন স্বয়ং দেশের প্রেসিডেন্ট রাইমন্ডস ভেওনিস৷ শনিবাসরীয় ফাইনালের আগে ওস্তাপেঙ্কাকে মজা করে টিভি সঞ্চালক জিজ্ঞেসও করেছিলেন, আজ চ্যাম্পিয়ন হলে প্রথম অভিনন্দন-ফোন কার থেকে পাবেন বলে আশা করেন? দেশের প্রেসিডেন্ট? না, আপনার মা-এর? নাকি বয়ফ্রেন্ডের? ওস্তাপেঙ্কার উত্তর, তিনজনেরই৷ আর তাই তো হওয়া উচিত।
ফাইনালের আগেই টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন রোলাঁ গারোর ফাইনালে স্ট্রেট সেটে জিতবেন সিমোনা হালেপ। কিন্তু কোথায় কী! ফিলিপ শাঁতিয়ের কোর্টে প্রথম সেট হেরেও পরের দু’টি সেটে হালেপকে হারিয়ে উল্টে চ্যাম্পিয়ন হলেন ওস্তাপেঙ্কা। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে তাঁকে কোর্টের ভিতর দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি তখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কী কাণ্ডটাই না ঘটিয়েছেন! খুব স্বাভাবিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে নেটের ধারে হাত মেলালেন৷ তারপর গোটাকয়েক বল আর হাতের ব্যান্ড দু’টো ছুড়ে দিলেন গ্যালারির দিকে৷ কোর্টের ধারে নিজের চেয়ারের সামনে গিয়ে এনার্জি ড্রিঙ্কের বোতল খুলে কয়েকবার গলায় ঢাললেন৷ উচ্ছ্বাস-আবেগের চিহ্নমাত্র শরীরীভাষায় নেই! ফরাসি ওপেনের সংগঠকদের তরফে একজন এসে নতুন চ্যাম্পিয়নকে বুঝিয়ে গেলেন, পুরস্কার-মঞ্চে ঠিক কী করতে হবে তাঁকে! ইতিহাস গড়েও যা নির্বিকার হাবভাব এ মেয়ের!
তবে তার আগে কোর্টের ভেতর এমন ম্যাচে ঠিক কী করতে হয় বিশ্বের তিন নম্বর রোমানিয়ান প্রতিপক্ষ হালেপের সঙ্গে সঙ্গেই গোটা টেনিসদুনিয়াকে হাড়েহাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ওস্তাপেঙ্কা৷ ২০০১-এ জেনিফার কাপ্রিয়াতি ইস্তক ফরাসি ওপেনে মেয়েদের ফাইনাল কেউ প্রথম সেট হেরে জিততে পারেননি৷ চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক টেনিসে ওস্তাপেঙ্কা এদিন সেই অসাধ্যসাধনও করেন! ২০১৪ সালে জিতেছিলেন জুনিয়র উইম্বলডন। আর ওই বছরই ফাইনালে মারিয়া শারাপোভার কাছে হেরেছিলেন হালেপ। আর এবছর জিতলে বিশ্বের এক নম্বরের আসনে বসতেন, কিন্তু তার বদলে আবারও তাঁকে হতাশ করল রোলাঁ গারো। এদিকে, টেনিসদুনিয়া পেল এক নতুন মহাতারকাকে, শনিবার থেকেই যাঁর মধ্যে নতুন শারাপোভা-কে দেখতে শুরু করেছেন সবাই!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.