সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রেসলিং ফেডারেশনের কর্তার বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে এবার সরগরম রাজনীতিও। আসলে রেসলিং ফেডারেশনের সভাপতি যার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা করার অভিযোগগুলি উঠেছে তিনি একজন বিজেপি সাংসদ। স্বাভাবিকভাবেই আসরে নেমে পড়েছে বিরোধী দলগুলি। তৃণমূল (TMC) বলছে, দ্রুত রেসলিং ফেডারেশনের সভাপতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চাই। তড়িঘড়ি আসরে নামতে হয়েছে কেন্দ্রকেও।
রেসলারদের যৌন হেনস্তা করার অভিযোগে এই মুহূর্তে রীতিমতো উত্তাল ভারতীয় ক্রীড়ামহল। গতকালই রেসলিং ফেডারেশনের সভাপতি তথা ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের (Brij Bhushan Sharan Singh) বিরুদ্ধে ধরনায় বসেন দেশের প্রথমসারীর কুস্তিগিররা! টোকিও গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী বজরং পুনিয়া, রিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পাওয়া সাক্ষী মালিক, কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ের হ্যাটট্রিক করা ভিনেশ ফোগাট, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোজয়ী অংশু মালিক (Angshu Malik), বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স হওয়া সোনম মালিক, সুমিত মালিক, সরিতা মোর, সত্যবর্ত মালিক, জিতেন্দ্র কিনহার মতো আন্তর্জাতিক কুস্তিগিররা সকলেই শামিল হন ধরনায়।
শুঘু ব্রিজভূষণই নন, ফেডারেশনের (WFI) কোচদের বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্তার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন ভিনেশ। তিনি বলেন, “জাতীয় শিবিরে নিয়মিতভাবে মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্তা করা হচ্ছে। কোচদের পাশাপাশি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংও এই কাজে যুক্ত। জাতীয় শিবিরে থাকা কয়েকজন কোচ বছরের পর বছর এই কাজ করছে। ফেডারেশন সভাপতির বিরুদ্ধেও অনেকে আমার কাছে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেছে। অন্তত ২০ জনকে আমি চিনি যারা জাতীয় শিবিরে যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছে। মহিলা কোচরাও ছাড় পান না!” এক যুগের বেশি ফেডারেশনের সভাপতি পদে থাকা ব্রিজভূষণের আমলে কুস্তিগিরদের কথা শোনা হয় না বলেও দাবি করেছেন এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী এই তারকা।
ফেডারেশনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বজরং বলেন, “আমরা পদক জিতলে সবাই আমাদের সাফল্য উদযাপন করে। কিন্তু ফেডারেশন আমাদের সঙ্গে কী ব্যবহার করে তা লোকে জানতে পারে না। বছরের পর বছর ধরে ফেডারেশনে একনায়কতন্ত্র চলছে! কোনও বিষয়ে আমার মতামত নেওয়া হয় না। এতদিন আমরা সহ্য করেছি। তবে আর নয়!”
প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত এই ধরনা চলবে বলে জানান অ্যাথলিটরা। এমনকী সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দেশের প্রথমসারির কুস্তিগিররা কোনও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন না বলেও হুশিয়ারি দেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই দেশের ক্রীড়াজগতে আলোড়ন পড়ে যায়। আসরে নামে রাজনৈতিক দলগুলিও। তৃণমূলের তরফে টুইট করে বলে দেওয়া হয়, “ফেডারেশনের সভাপতি তথা বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং আসলে জনপ্রতিনিধিদের নামের কলঙ্ক। বিজেপি লাগাতার দেশকে লজ্জায় ফেলছে। আমরা দ্রুত পদক্ষেপ চাই।”
একপ্রকার বাধ্য হয়ে আসরে নামে কেন্দ্র। ক্রীড়ামন্ত্রকের (Sports Ministry) তরফে এক বিবৃতিতে জানিয়ে দেওয়া হয়, রেসলিং ফেডারেশনের কাছে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। বিষয়টি যে কেন্দ্র গুরুত্ব দিয়েই দেখছে সেটা বোঝাতে ফেডারেশনকে মাত্র ৭২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে। এই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রেসলিং ফেডারেশন পুরো ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা না দিতে পারলে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্র। ফেডারেশনের সভাপতি অবশ্য পুরো ঘটনাই অস্বীকার করেছেন। পালটা তাঁর চ্যালেঞ্জ, এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হবেন। রেসলিং ফেডারেশনের সভাপতির দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে শিল্পপতিরা ষড়যন্ত্র করছেন। একজনও সরাসরি অভিযোগ করলে তিনি পদ ছেড়ে দেবেন। যদি এই ধরনের কোনও অভিযোগ থেকেই থাকে তাহলে গত ১০ বছর কেন কেউ অভিযোগ করেনি? প্রশ্ন WFI সভাপতির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.