বিশ্বকাপ থেকে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে টেস্ট, সব মঞ্চে সফল কেএল রাহুল। নিজস্ব চিত্র
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একটা মারাত্মক চোট মানুষের জীবনকে শেষ করে দেয়। কেরিয়ারের বারোটা বেজে যেতে পারে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে চোটের জন্য মাঠের বাইরে থাকা যেন শাপে বর হয়ে দাঁড়ায়। কেএল রাহুলের (KL Rahul) ক্ষেত্রে তো সেটাই হল। এশিয়া কাপের (Asia Cup 2023) পর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ। এবং এর পর বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) বিরুদ্ধে চলতি টেস্ট সিরিজ। ব্যাটিং থেকে উইকেটকিপিং। সব জায়গায় নিজের জাত চেনাচ্ছেন কেএল রাহুল। কাপযুদ্ধে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ও রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ব্যাটে বিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তবে চাপের মুখে কেএল রাহুলও করেছিলেন অনবদ্য পারফরম্যান্স। কিন্তু কীভাবে এমন রাজকীয় কামব্যাক সম্ভব হল? চোটের সময় জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে (NCA) কাটানো সময় কতটা কঠিন ছিল? সেটাই জানালেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) তারকা।
কেএল রাহুল বলছিলেন, “আমি এখন বেশ ভালো আছি। দলে ফিরতে পারার অনুভূতিটা খুবই ভালো। আমি তো অনেকদিনই মাঠের বাইরে ছিলাম। তবে সঠিক সময়ে সব ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ায় আমি সন্তুষ্ট।” এখানেই অবশ্য তিনি থেমে থাকেননি। যোগ করলেন, “চোটের সেই কঠিন সময় জানতাম আমার উপর প্রত্যাশার অনেক চাপ থাকবে। এবং সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ সুস্থ হয়ে জাতীয় দলে কামব্যাক করলে কেউ চোটের কথা মনে রাখবে না। বরং সবাই আমার দিকে চেয়ে থাকবে। একটু ভুল হলেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে।”
গত ১ মে আইপিএল-এর মঞ্চে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে খেলার সময় ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন কেএল রাহুল। কেমন ছিল সেই কঠিন সময়? রাহুল ফের বলেন, “আমি বল তাড়া করছিলাম। আর তখন অনেকেই বলেছিল টেন্ডন ছিঁড়ে যেতে পারে। পরে জানলাম পুরোপুরি টেন্ডন ছিঁড়ে গিয়েছিল। আমার কোয়াড্রিসেপ থেকে টেন্ডন ছিঁড়ে গিয়ে আলাদা হয়ে যায়। যখন এটা ঘটে তখন আমি, আমার পরিবার, ফ্র্যাঞ্চাইজি, দল সকলে এটাই ভাবছিল যে চোট খুব বড় নয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাব। কিন্তু যখন স্ক্যান রিপোর্ট আসে, তখন বোঝা যায় যে, টেন্ডন পুরোটাই ছিঁড়ে গিয়েছে। তখনই বোঝা গিয়েছিল যে, অস্ত্রোপচার করাতেই হবে। ফিজিও বুঝে গিয়েছিলেন এই একটা রাস্তাই খোলা রয়েছে আমার। কয়েক’টা দিন লেগেছিল, শুধু এটা ঠিক করতে যে, আমি কোথায় অস্ত্রোপচার করাব, কার কাছে করাব! তবে আমি সেরা চিকিৎসাই পেয়েছি। এর জন্য় বিসিসিআই এবং সকল ফিজিয়োকে ধন্য়বাদ দেব। খুব দ্রুত সবকিছু হয়েছে।”
গত ১০ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে ফিরেছিলেন কেএল রাহুল। যা ছিল আক্ষরিক অর্থে রাজকীয় কামব্যাক। এশিয়া কাপের সেই ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে ১১১ রানে অপরাজিত ছিলেন। শুধু তাই নয়। বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুটি একদিনের ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল অপরাজিত ৫৮ ও ৫২ রান। কাপযুদ্ধে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই অজিদের বিরুদ্ধে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল ভারত। তবে বিরাটের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ১৬৫ রান যোগ করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন কেএল রাহুল। শুধু তাই নয়। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে মাত্র ৬৪ বলে ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন। যা বিশ্বকাপে ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম শতরান। ফলে ১১ ম্যাচে ৪৫২ রান করেছিলেন। একইসঙ্গে কিপার হিসেবে ১৬টি ক্যাচ ধরার পাশাপাশি ১টি স্টাম্প করেন। আর এবার সেঞ্চুরিয়ান টেস্টের প্রথম ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ১০১ রান। ভারত টেস্ট হারলেও, কেএল রাহুল নিজের কাজটা করেছেন। এবার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনি কীভাবে এগিয়ে যান, সেটাই দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.