Advertisement
Advertisement

Breaking News

সবার অলক্ষ্যে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ‘স্বপ্নের নায়ক’, ধোনির জন্মদিনে স্মৃতিচারণায় ‘সুপারফ্যান’

ধোনি ইংল্যান্ডে, তাই মহাভক্তের সঙ্গে এবার দেখা হল না।

Superfan Rambabu remembering MS Dhoni on his birthday । Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:July 7, 2022 5:07 pm
  • Updated:July 7, 2022 8:01 pm  

কৃশানু মজুমদার: সারা গায়ে তেরঙা এঁকে, দেশের পতাকা হাতে নিয়ে গ্যালারির এপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়তে দেখা যায় তাঁকে। ক্রিকেট তাঁর প্যাশন। তাঁর কাছে সবার আগে দেশ। আর তাঁর হৃদয়ে একজনেরই নাম লেখা। 
এতপর্যন্ত পড়ার পরে অনেকের মনে হতেই পারে শচীন তেণ্ডুলকরের সুপারফ্যান সুধীর গৌতমের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তিনি সুধীর গৌতম নন। তিনি চণ্ডীগড়ের মোহালির বাসিন্দা রামবাবু (Ram Babu)। যিনি মহেন্দ্র সিং ধোনির দারুণ ভক্ত বলে পরিচিত দেশে-বিদেশে।

সুধীর গৌতমকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’। রামবাবুর অকূলের কূল, অগতির গতি, অনাথের নাথ রাঁচির রাজপুত্র। মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)।

Advertisement

আজ ধোনির জন্মদিন। ইংল্যান্ডে জন্মদিন পালন করছেন দেশের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। দেশের বাইরে ধোনি, তাই ‘আরাধ্য দেবতা’র সঙ্গে এবার সাক্ষাৎ হল না রামবাবুর। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের তরফে রামবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ধোনির ‘সুপারফ্যান’ বলছেন, ”আজ ধোনি স্যরের জন্মদিন। ইংল্যান্ডে রয়েছেন, না হলে আজ ওঁর বাড়িতে যেতাম। দিনদুয়েক আগে ধোনি স্যরের এক বন্ধু ফোন করে বললেন, এসো না এখন। এবার দেখা হল না, ধোনি স্যরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। উনি নিশ্চয়ই আমার মেসেজ দেখবেন।” দু’ জনের মধ্যে মেসেজ বিনিময় হয়, পাঠানো হয় শুভেচ্ছাবার্তাও। সম্পর্কের বাঁধনে আবদ্ধ ‘গুরু’ ও ‘ভক্ত’। 

[আরও পড়ুন: জন্মদিনে বিদেশে থেকেও মন কলকাতায়, নিজেকে নিয়ে তথ্যচিত্র লন্ডনে বসেই দেখবেন সৌরভ]

একসময়ে ধোনির মতো লম্বা চুল রাখতেন রামবাবু। চণ্ডীগড়ের জনতা তাঁকে ‘ধোনি-ধোনি’ বলে ডাকতেন। দারুণ উপভোগ করতেন ধোনির সুপারফ্যান। একসময়ে পাঞ্জাবের ক্লাব স্তরে মনপ্রীত গোনি, গুরপ্রীত মানের সঙ্গে খেলেছেন রামবাবু। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় ক্রিকেট নিয়ে আর এগোতে পারেননি। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যায়। কিন্তু রামবাবুর প্যাশন যে ক্রিকেট। তাই ভারতের খেলা থাকলেই রামবাবু ছুটে যান দেশেবিদেশের মাঠ-ময়দানে। দেশের হয়ে চিৎকার করেন। দ্বাদশ ব্যক্তির কাজটা করে দেন রামবাবুই। 

শুরু থেকেই ধোনি-প্রেমে মজেছিলেন রামবাবু। বাংলাদেশে অভিষেক হয়েছিল ধোনির। টিভির পর্দায় সেই ম্যাচ দেখেছিলেন রামবাবু। সেই শুরু। নস্ট্যালজিক রামবাবু স্মৃতির পাতা উলটে বলছেন, ”গোড়ার দিকে আমার শরীরে ট্যাটু করা ছিল না। টি শার্ট, কালো চশমা পরে মাঠে গিয়ে খেলা দেখতাম। বিশ্বকাপের পরে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ধর্মশালায় ভারত-ইংল্যান্ড ওয়ানডে ম্যাচ ছিল। ধর্মশালায় কনকনে ঠাণ্ডা। সেখানেই ধোনি স্যরের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। তার আগেও আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে বটে। হাত নেড়েছেন আমাকে দেখে, হ্যালো বলেছেন, কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। কারণ নিরাপত্তা খুব আঁটসাঁট থাকত। ধর্মশালাতেই প্রথম ধোনি স্যরের সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমি ধোনি স্যরের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে গিয়েছিলাম। সেই সাক্ষাতের অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। সারা রাত ঘোরের মধ্যে ছিলাম।” 

ধোনির জন্য জীবন ফিরে পেয়েছিলেন রামবাবু। সেই ঘটনার কথা বলতে গেলে এখনও আবেগের বাষ্প জমা হয় তাঁর গলায়। ধোনির প্রতি কৃতজ্ঞতা বেরিয়ে পড়ে প্রতিটি শব্দে। রামবাবু বলছিলেন, ”২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশে। আমি খেলা দেখতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। অজানা এক জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলাম। ১৫ দিন ধরে খেতে পারিনি কিছুই। খিদেই ছিল না। অসুস্থ শরীরে খেলা দেখতে মাঠে যেতাম। দু’ দিন খেলা দেখতে গিয়ে পড়েও গিয়েছিলাম মাঠে। ধোনি স্যরের কানে গিয়েছিল আমি অসুস্থ।  আমাকে ডেকে পাঠান তিনি। ভারতীয় দলের ফিজিও আমাকে ওষুধ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ওষুধও কাজ দেয়নি। বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট দেখেন ধোনি-স্যর। রিপোর্ট দেখে বলেন, তোমার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। আমার সঙ্গে হোটেলে দেখা করো। হোটেলে দেখা হতেই আমার পাসপোর্ট কেড়ে নেন ধোনি স্যর। আমাকে বলেন চণ্ডীগড়ে ফিরে যেতে হবে তোমাকে। পরের দিন ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ ছিল। ম্যাচের টিকিট হাতে এসেছিল।  কিন্তু ধোনি স্যরের ম্যানেজার আমার বিমানের টিকিট কেটে দেন। চণ্ডীগড়ে পৌঁছনোর পরে চিকিৎসকও বলেছিলেন, ধোনিকে তোমার ধন্যবাদ জানানো উচিত। তোমার শরীরের অবস্থা খুব খারাপ হয়েছিল।” ধোনির-ছোঁয়ায় সেদিন জীবন ফিরে পেয়েছিলেন রামবাবু বললেও অত্যুক্তি হবে না। 

[আরও পড়ুন: স্মৃতি ইরানি ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার উপরে আস্থা মোদির, দেওযা হল বাড়তি মন্ত্রকের দায়িত্ব]

চাকরি নেই রামবাবুর, নিজস্ব ব্যবসাও নেই। কীভাবে সংসার চলে? রামবাবু হাসতে হাসতে বলেন, ”যখন যা পাই, সেই কাজ করি। চাকরি করলে ছুটি পাওয়া যাবে না। ছুটি না পেলে দেশের খেলাও দেখতে পাব না।”  ২০ জুলাই রামবাবুর জন্মদিন। ভরা সংসার তাঁর। এক ছেলে ও এক মেয়ে রামবাবুর। ছেলের নাম দীপক, মেয়ের নাম শীতল। ধোনি ভক্ত রামবাবু বলছেন, ”পুরোহিত আমার ছেলে-মেয়ের নাম রেখেছেন। পরে উপলব্ধি করি দীপকের নামের আদ্যক্ষর ডি। ডি ফর ধোনি। আর শীতলের এস। এস ফর সাক্ষী। ঈশ্বর সবাইকে জুড়ে রেখেছেন।”

ধোনির সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধনে জুড়ে রয়েছেন রামবাবু। এই বন্ধন যে চিরন্তন। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement