সোম রায়, ভুবনেশ্বর: আরও একটা মরশুম শেষ। আরও একবার ইস্টবেঙ্গলের ঘরে এল না কোনও সর্বভারতীয় ট্রফি। ভরসা শুধু কলকাতা লিগ। কিন্তু মরশুম শেষে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কষতে বসার সময় দেখা দিয়েছে এক বড় বিতর্ক। খালিদ-সুভাষ মতানৈক্য।
সুপার কাপ ফাইনালের পরই টিডি সুভাষ ভৌমিক জানিয়েছিলেন, কিছুতেই আর কোচ খালিদ জামিলের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন না তিনি। বলেছিলেন, “দরকার হলে সাপের গর্তে থাকব। কিন্তু কিছুতেই ওর সঙ্গে কাজ করব না।” খালিদ অবশ্য এখনও নিজের অবস্থানে অনড়। বলছেন, “উনি যখন যা বলেছেন, শুনেছি। নিতুদার সঙ্গে কথা বলব। উনি যা বলবেন সেই অনুযায়ীই কাজ করব।” শনিবারও কলকাতা ফেরার সময় সুভাষের চোখে-মুখে রাগ ও হতাশা ছিল স্পষ্ট। ঘনিষ্ঠমহল সূত্রের খবর, অনুযায়ী ক্লাবের কাছে ইতিমধ্যেই নিজের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। যেখানে রয়েছে বেশ কিছু আপত্তি ও প্রশ্ন। যেমন, টিডি হিসাবে দলের সঙ্গে থাকলেও তাঁর বক্তব্য বা মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না খালিদ। ম্যাচের আগে শুধু নিজের কথা বলেই টিম মিটিং শেষ করে দেন কোচ, সুভাষ নিজের পরিকল্পনার কথা বলতেই
পারেননি। ফুটবলার পরিবর্তন নিয়ে তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। উলটে লোবোকে তুলে নিয়ে মাঝমাঠের রাশ দিয়ে দেওয়া হয় বেঙ্গালুরুর হাতে। বলব না বলব না করেও সুভাষ বললেন, “ও কোনও কোচই না। শুধু প্রেসিং আর প্রে। এভাবে ফুটবল হয়? ডিফেন্ডারদের খালি বলছে উপর আ। উপর আ। আরে এই করে যে মিকু, সুনীল আরও ওপেন স্পেস পেয়ে যাচ্ছে, সেটা বোঝার ক্ষমতাও নেই।”
এই পরিস্থিতিতে কী হতে চলেছে ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎ, তা এখনও স্পষ্ট নয়। একটি মহলের বক্তব্য, চুক্তিতে উল্লেখ আছে আই লিগ দিতে পারলে খালিদ দ্বিতীয় বছরের কোচ হবেন। তা তো হয়নি। তাহলে কেন তাঁকে আবার দায়িত্ব দেওয়া হবে? একটি মহল আবার বলছে, ফুটবলারদের অধিকাংশই রয়েছেন খালিদের সমর্থনে। আর ব্যর্থতার দায় যতটা খালিদের, ততটাই সুভাষের। সেক্ষেত্রে কোপ কেন খালিদের উপরই পড়বে! এখান থেকেই সামনে আসছে তৃতীয় একটি গুঞ্জন। নিজেদের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে ক্লাব সরাসরি কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। উলটে একবার মুখোমুখি বসানো হতে পারে খালিদ-সুভাষকে। তারপর বাকি সিদ্ধান্ত।
ইস্টবেঙ্গলের টালবাহানার মধ্যেই বেঙ্গালুরু এফসি চূড়ান্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছে। তারপরই নবীন এই ক্লাবের সাফল্য ও ম্যান ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে ময়দানের ঐতিহ্যশালী দুই ক্লাবের। আলভিটো ডি’কুনহাও মেনে নিয়েছেন, বেঙ্গালুরুর পরিকাঠামো এক্কেবারে আলাদা। বলছেন, “বিএফসি ফুটবলাররা চার দিনের জন্য বাড়িতে গেলেও ক্লাবে ফিরেই ফিজিক্যাল টেস্ট দিতে হয়। এতটাই নিখুঁত প্ল্যানিং ওদের।” বেঙ্গালুরুর ক্যাপ্টেন সুনীল ছেত্রী বিষয়টা আরও বিস্তারিত জানালেন। বলেন, “আমাদের প্রত্যেককে রোজ ক্লাবে এসে ব্রেকফাস্ট করতে হয়। প্র্যাকটিসের পরে ক্লাবেই লাঞ্চ। টিমের ফিজিক্যাল ইউনিট থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়, আমাদের ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চের মেনু। সব ফুটবলার একই বিল্ডিংয়ে থাকে। আমার বিয়ের পর তবেই নিজের ফ্ল্যাটে উঠে এসেছি। ক্লাব অনুমতি দিয়েছে।” তাই সাফল্য পেতে প্রাক্তন ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া দুই ক্লাবকে দল ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। বলছেন, “সুপার কাপে মোহনবাগান সেমিফাইনালে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল ফাইনালে। এটাও কম কৃতিত্বের নয়। আমি বরং বলব, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান চেষ্টা করুক, টানা কয়েক বছর এক দল ধরে রেখে এক সিস্টেমে খেলতে। এই দু’টো জায়গায় বেঙ্গালুরুর সঙ্গে দুই প্রধানের মূল পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে। বেঙ্গালুরু কোর গ্রুপটা প্রতি মরশুমে একই রেখে একটাই সিস্টেম অনুসরণ করছে। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানও যদি কোচ বা ফুটবলারদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পথে হাঁটে তো ভাল হয়।”
এরই মধ্যে নতুন মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের দলগঠনের প্রসঙ্গও উঠতে শুরু করেছে। এই বিষয়ে যা সামনে আসছে, তা হল তিরিশজনের বেশি ফুটবলার এবার নেওয়ার সম্ভাবনা কম। যার মধ্যে ১৭ জনের সঙ্গে চুক্তি আছে। আমনা, কাটসুমি চূড়ান্ত। নেওয়া হবে আরও চার বিদেশি। অ্যাকাডেমি থেকে আসছেন চার জুনিয়র। অর্থাৎ আর মাত্র তিনজন ভারতীয় নেওয়া বাকি। যেখানে গুরুত্ব দেওয়া হবে একজন করে স্ট্রাইকার, স্টপার ও সাইড ব্যাক নিতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.