স্টাফ রিপোর্টার : মোহনবাগান ক্লাবের সভাপতি হিসাবে স্বপনসাধন বোসকে (টুটু বোস) অস্বীকার করলেন অঞ্জন মিত্র। সোমবার স্বপনসাধন বোসকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন ক্লাব সচিব, আপনি নিজেকে সভাপতি হিসাবে তুলে ধরে ক্লাবকে বিব্রত করার চেষ্টা করবেন না।
[ মেসির সঙ্গে তুলনায় নয়, দেশের হয়ে গোল করেই তৃপ্ত সুনীল ]
মোহনবাগানের তিনি শুধু সভাপতি নন, আপামর সভ্য-সমর্থকরা তাঁকে ভাবেন ক্লাবের প্রাণপুরুষ। ক্লাবের যে কোনও সংকট মুহূর্তে তিনি পাশে দাঁড়ান। আর্থিক সংকট থেকে শুরু করে, চিরশত্রু ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে বিবাদ-যে কোনও সমস্যায় তাঁর উপস্থিতিই হয়ে যায় যথেষ্ট। এই সেদিনও ফুটবলারদের বকেয়া পেমেন্ট মেটানোর জন্য তিনি ক্লাবের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এক কোটি টাকা। গত তিন বছর বিজয় মালিয়ার ইউবি মোহনবাগানকে অর্থ দেওয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। আপামর সভ্য-সমর্থকরা তার কোনও আঁচ পাননি। কেন? টুটু বোস আছেন যে। মজার ঘটনা হল, সচিব অঞ্জন মিত্রও সব ঘটনার স্বাক্ষী। তিনি সবসময় সাহায্য নেওয়ার জন্য বন্ধুর কাছে ছুটে গিয়েছেন। আজ সেই অঞ্জন মিত্র চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, সভাপতি হিসাবে তিনি আর টুটু বোসকে মানতে রাজি নন।
সভাপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে সচিব লিখেছেন, “আপনি ৫ জুন চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ১৩.৬.১৭ তারিখে ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি আপনার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেনি। তাই ক্লাবের সংকট মুহূর্তে আপনি সভাপতি পদেই থেকে যেতে চান। কিন্তু সভাপতি হিসাবে নিজেকে তুলে ধরে ক্লাবকে আর বিব্রত পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেবেন না। তিন সদস্যের কমিটি গড়ে ১২ জুন আপনি একটা সভা ডেকেছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।” শুধু এইটুকু বলে থেমে যাননি সচিব। তিনি বাকি দুই কমিটি সদস্য শিলাদিত্য সান্যাল ও গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছেন। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে, মোহনবাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্তকে বেআইনিভাবে সরিয়ে দিয়েছেন সচিব অঞ্জন মিত্র। তাই ক্লাবের ৪৮ ধারার সূত্র ধরে সভাপতির কাছে চিঠি দিয়ে অর্থসচিব পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন দেবাশিস। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেলে তিন সদস্যের কমিটি গড়ে সভা ডেকেছেন সভাপতি। এই সভাকে বানচাল করার জন্যই উঠেপড়ে লেগেছেন সচিব।
[ ‘সুনীল’ সাগরে অবগাহন দেশবাসীর, ঘুম ভাঙছে ভারতীয় ফুটবলের ]
পালটা চিঠি সচিবকে দিয়ে টুটু বোসও জানিয়ে দিলেন, “এতদিন পর্যন্ত আপনি আমাকে সভাপতি হিসাবে মান্য করে ক্লাবের ডাকা প্রতিটি সভার চিঠি পাঠিয়েছেন। সাম্প্রতিককালেও ক্লাবের বহু সভায় সভাপতি হিসাবে উল্লেখ করে আমাকে বারবার তুলে ধরেছেন। তাই ৫ জুন চিঠি দিয়ে ক্লাবকে জানিয়ে ছিলাম পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত আমি ক্লাবের সভাপতি থাকছি। ক্লাবের স্বার্থেই আমার সভাপতি পদে থাকা। ক্লাব সংবিধানে ৪৮ ধারাকে মান্য করে যা করার করছি। আশা করি সচিব হিসাবে ক্লাবের সংবিধানকে আপনিও মেনে চলবেন।”
সভাপতি-সচিবের চিঠি-চাপানউতর নিয়ে ময়দান এখন উত্তাল। টুটু বোসকে অস্বীকার করছেন অঞ্জন মিত্র, ব্যাপারটা জানাজানি হতেই ময়দান জুড়ে শুরু হয়েছে প্রবল ধিক্কার। অঞ্জন মিত্রের বর্তমান গড়া কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য আফসোসের সুরে বলেই ফেললেন, “আমরা অঞ্জনদার পাশে সব সময় ছিলাম। আছি। হয়তো থাকবও। কিন্তু টুটুদাকে সভাপতি হিসাবে অস্বীকার করে যে চিঠি তিনি দিয়েছেন তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ভাবতেই পারছি না, অঞ্জনদা এই চিঠি পাঠাতে পারেন। তিনি আজ স্বীকার করুন বা অস্বীকার করুন, টুটুদার জন্যই ময়দানে অঞ্জনদার রমরমা। টুটুদা না থাকলে তিনি কখনও অঞ্জন মিত্র হতে পারতেন না। খুব খারাপ লাগছে একজন মোহনবাগানী হয়ে একথা বলতে হচ্ছে নামপ্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।”
[ কানে খাটো হলেও বিশ্বকাপে রাশিয়ার বাজি এই বিড়াল, কীভাবে জানেন? ]
সচিবের কাছের আর এক সদস্য বলে ফেললেন, “আমরা যত দূর জানি, প্রতিটি সভায় টুটুদার নাম সভাপতি হিসাবে উল্লেখ করা হত। তা হলে কি আজ অঞ্জনদা ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার জন্য শেষ পর্যন্ত বন্ধুর ক্ষমতাকে অস্বীকার করছেন? সত্যি, এর চেয়ে হাস্যকর কিছু হতে পারে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.