Advertisement
Advertisement

হেরে চাকরি ছাড়লেন কনস্ট্যানটাইন, হতাশা কাটছে না ভারতীয় শিবিরের

কেঁদে ফেলে স্টিফেন বললেন চাকরি ছাড়ছি।

Stephen Constantine resigns
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:January 15, 2019 2:24 pm
  • Updated:January 15, 2019 2:24 pm  

দুলাল দে: স্বপ্ন শেষ। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কেঁদে ফেললেন ভারতীয় কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন। বললেন, “আমি সরে গেলাম কোচের পদ থেকে।’’ ঘটনা চক্রে এদিন তাঁর স্ত্রীর জন্মদিন ছিল। সেদিনই কোচিং কেরিয়ারের বিষাদময় দিনটা এল জীবনে। প্রসঙ্গ উঠতে কেঁদে ফেললেন তিনি। এবং সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলেন সাংবাদিক সম্মেলন থেকে। এর কিছুক্ষন আগেই বলেছেন, চাকরি ছাড়ার কথা। জানুয়ারিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে তাঁর কোচিং মেয়াদ। হাতে কোনও প্রতিযোগিতা নেই। তাই দায়িত্ব ছাড়ার কথা কতদূর প্রভাব ফেলবে তা সন্দেহ রয়েছে।

[এশিয়ান কাপে স্বপ্নভঙ্গ ভারতের, বাহরিনের কাছে হেরে ছিটকে গেলেন সুনীলরা]

ম্যাচের আগে পরের রাউন্ডে পৌঁছে গিয়েছে, এই ভাবনা থেকে আত্মবিশ্বাসী হতে গিয়ে ডুবল ভারতীয় ফুটবল। প্রেসবক্সে বসে পাশের মাঠের বাতি স্তম্ভগুলি দেখা যাচ্ছিল। পাশের মাঠটি যে সে মাঠ নয়। বহু যুবকের ছোটবেলার স্মৃতিবিজড়িত শারজার স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চেতন শর্মার শেষ বলে জাভেদ মিয়াঁদাদের ছক্কা, কিংবা শেন ওয়ার্নের বিরুদ্ধে শচীনের মরুঝড়, আরব্য রজনীর পাকাপাকি আখ্যান হয়ে রয়েছে। পাশের মাঠে শারজার বুকে ভারতীয় ফুটবল আরব্য রজনীর এক রজনী হয়ে উঠতে পারে, কবে কোন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমী ভাবতে পেরেছিলেন। এতদিন ঢাক-ঢোল, কাসর নিয়ে ত্রিবর্ণ পতাকাবহনকারী ভারতীয়রা শারজার বুকে কখনও গলা ফাটিয়েছেন কপিল দেব, গাভাসকরদের জন্য। কখনও শচীন, সৌরভ। কখনও কোহলি, রোহিত শর্মার জন্য। ভারতীয় ফুটবলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সমর্থকরা এদিন শারজা স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে গলা ফাটালেন সুনীল, সন্দেশ, প্রীতমদের জন্য। রচিত হওয়ার কথা ছিল এক নতুন অধ্যায়ের।

Advertisement

কিন্তু কোথায় কী? ভারতীয় ফুটবলের সেই আদিম রোগ সব শেষ করে দিল। থাইল্যান্ডকে হারানোর পর মনে হচ্ছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে গিয়েছেন সুনীলরা। আমিরশাহির সঙ্গে আরও ভাল খেলাই বোধ হয় কাল হল। আমিরশাহি ম্যাচের পর থেকে স্টিফেন-সহ ভারতীয় দলের যার সঙ্গেই কথা হয়েছে, মনেই হয়নি বাহরিন ম্যাচটা এখনও বাকি আছে। যে থাইল্যান্ডকে ৪ গোল দেওয়া গিয়েছে, সেই থাইল্যান্ড যদি বাহরিনকে হারাতে পারে, তাহলে আমাদের কাছে তো ব্যাপারটা দুধ ভাত। এই কুখ্যাত আত্মবিশ্বাসই শেষ করে দিল ভারতকে। এশিয়ান কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে ইতিহাস তৈরির বদলে সেই এক দৃশ্য। মাথা নিচু করে ফিরে আসা। মাঠে বসে থাকা ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তী আই এম বিজয়ন ম্যাচের আগে বলছিলেন, ‘‘ভারতীয় ফুটবলের নবজাগরণ হতে চলেছে।” ম্যাচের পর তিনিও নিশ্চুপ।

[লিগ লড়াইয়ে ধাক্কা, চেন্নাই সিটির কাছে হার ইস্টবেঙ্গলের]

ম্যাচ শেষের বাঁশি শুনে মাঠেই শুয়ে পড়লেন ফুটবলাররা। যেন অবিশ্বাস্য। প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়। যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ফুটবলার। কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন এগিয়ে গিয়ে একে একে ফুটবলারদের টেনে তুললেন। কিন্তু তাঁরও মুখে ততক্ষণে বিষাদের ছায়া।
কিন্তু কী ভাবে হল এরকম? যে দলটা প্রথম দু’ম্যাচে বিপক্ষকে শুইয়ে দিল, তারাই এরকম জঘন্য ফুটবল খেলল, শেষ ম্যাচে এসে! স্টিফেন বললেন, “অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। আমাদের থেকে অন্য তিনটি দলের পয়েন্ট বেশি। তাই আমরা এশিয়ান কাপ থেকে বাইরে। এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।”

অনেকে বলছেন, প্রথম দুটো ম্যাচে এতটাই ভাল খেলে ফেলেছেন সুনীলরা যাতে বাহরিন যে এশিয়ার কঠিনতম প্রতিদ্বন্দ্বী এই ব্যাপারটাই কারও মাথায় আসেনি। আট বছর আগে এই বাহরিনের কাছেই তো ২-৫ গোলে হারের ক্ষতটা এখনও দগদগে। প্রেসবক্সের ঠিক উপরেই বসে একমনে রিপোর্ট লিখছিলেন এএফসির কিছু বিশেষজ্ঞ কোচ। যাঁরা প্রথম রাউন্ডের পর বিভিন্ন দল নিয়ে এএফসির হাতে বিশেষজ্ঞর মতামত দেবেন। মানে এশিয়া মানে কোন দল কতটা উন্নতি করেছে। বলাই বাহুল্য ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বসিত হয়ে বেশ বড় সড় রিপোর্ট দিতে চলেছেন তাঁরা। বিরতির সময় এরকমই বলছিলেন টেকনিক্যাল কমিটির বিশেষজ্ঞরা। যে কমিটিতে রয়েছেন আর কেউ নয়। ভারতীয় ফুটবলে জাতীয় কোচের পদে দ্বিতীয় বারের জন্য স্টিফেন যাঁকে সরিয়ে এসেছিলেন সেই কোভারম্যান্স। ম্যাচ শেষে ভারতীয় দলের খেলা দেখে তিনিও তো অবাক। “এরকম কী করে হল।”
নিয়ম মেনে ভারত-বাহরিন ম্যাচের সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অন্য ভেনুতে শুরু হয়েছিল থাইল্যান্ড-আরব আমিরশাহি ম্যাচ। আর সেখানে শুরুতেই আমিরশাহী এগিয়ে যেতে স্বাভাবিক ভাবেই গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস। কিন্তু ফুটবলাররা বিরতিতে ড্রেসিংরুমে গিয়ে জানতে পারলেন, ম্যাচের গোল শোধ করে দিয়েছে থাইল্যান্ড। ম্যাচ শেষে যা জানা গেল, স্টিফেন নাকি দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামার আগে ফুটবলারদের পই পই করে বলেন, যেভাবেই হোক গোল খাওয়া চলবে না। যে কারণে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে আরও বেশি শাফলিংয়ের জন্য রওলিনকে বসিয়ে নামান অনিরুদ্ধ থাপাকে। আর এই গোল না খাওয়ার ভাবনা থেকেই যেন অদ্ভুত ভাবে নিজেদের থার্ডে আটকে গেলেন ফুটবলাররা। যেখানে সুনীল ছেত্রীকে মাঝে মধ্যে নিচে নেমে হেডে বল ক্লিয়ার করতে হল। যদিও ম্যাচ শেষে স্টিফেন বললেন, “আমি কখনই ফুটবলারদের বলিনি, ম্যাচটা ড্র করতে হবে। আমরা জেতার জন্যই শুরু থেকে ঝাঁপিয়ে ছিলাম। কিন্তু ৯০ মিনিটে একটা পেনাল্টি থেকে স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলে কী করা যেতে পারে?” ভারতীয় ফুটবলকে ঘিরে একটা বিশাল স্বপ্নর সলিল সমাধি। শারজার বুকে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement