সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লর্ডস টেস্টের পর শহরে ফিরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আবিষ্কার করবেন, অদ্ভুত এক পরিস্থিতি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। সৌরভের সামনে একদিকে থাকবে বোর্ড মসনদের হাতছানি। প্রেসিডেন্ট বা সচিব পদে দাঁড়িয়ে পড়ার সুযোগ। অন্য দিকে সিএবি। নিজের রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা। প্রশ্ন, কোনটা বেছে নেবেন সৌরভ? বোর্ড? নাকি সিএবি?
শুক্রবার রাতে সিএবি-র এক গুরুত্বপূর্ণ কর্তা বলছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এমন ভজঘট পরিস্থিতি তৈরি হবে কে জানত? বাংলার সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের সর্বময় কর্তা হলে আনন্দিত হওয়া উচিত। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। বরং আতঙ্কিত ভাবে বলা হচ্ছে, সৌরভ সিএবি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে গেলে বাংলা ক্রিকেট চালাবে কে? যোগ্য লোক কোথায়? সত্যি, অত্যাশ্চর্য অবস্থা বটে! যেখানে সৌরভের বোর্ড মহাকর্তা হওয়ার সম্ভাবনা দেখে তাঁর ঘনিষ্ঠরাই উল্লসিত হতে পারছে না! আসলে বৃহস্পতিবারের সুপ্রিম কোর্ট রায়ের পর ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের কাঠামোটাই আমূল পালটে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ক্রিকেট কর্তাদের প্রশাসনিক মেয়াদ তিনের বদলে বাড়িয়ে টানা ছ’বছর করলে কী হবে, বলে দিয়েছে বোর্ড পদের সঙ্গে কেউ রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার পদাধিকারী হলে সেটাও ছ’বছরের মেয়াদে ধরা হবে। যে নিয়মের ফাঁসে পড়ে বোর্ডের কার্যনির্বাহী সচিব অমিতাভ চৌধুরি, কোষাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ চৌধুরি সবাইকে চলে যেতে হচ্ছে।
ঘটনা হল, বোর্ড প্রেসিডেন্ট বা সচিব পদে কর্নাটকের ব্রিজেশ প্যাটেলের সঙ্গে সৌরভ ফ্রন্টরানার ঠিকই। কিন্তু রায়ের ২৪ ঘণ্টা পর বেশ কয়েক জন প্রতিদ্বন্দ্বীও উঠে আসছে। গতকাল কেউ কেউ গুজরাট ক্রিকেট সংস্থার সচিব জয় শাহ-র নাম করছিলেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-পুত্র জয়ের ইতিমধ্যে গুজরাট ক্রিকেট সংস্থায় সচিব পদে পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, আর এক বছর পর তাঁকে কুলিং অফে যেতে হবে। প্রশ্ন, এক বছরের জন্য তাঁকে কি বোর্ডে আনা হবে? বরং এদিন আরও কয়েকটা নাম উঠে এল যাঁদের এখনই কুলিং অফে যাওয়ার ব্যাপার নেই। যেমন- মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন বোর্ড কোষাধ্যক্ষ রবি সাওয়ান্ত। ২০১৩ সালে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সাওয়ান্ত। তাঁর বোর্ড কোষাধ্যক্ষ হওয়াও কাছাকাছি সময়ে। বেশ কয়েক বছর মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার কোনও পদে নেই তিনি। একই রকম ভাবে প্রাক্তন বোর্ড সচিব সঞ্জয় প্যাটেলের নামও আসছে। তিনিও সচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১৩ সালে। বরোদা রাজ্য সংস্থা থেকে বহু দিন বিতাড়িত। কুলিং অফে তিনিও পড়বেন না।
আরও কয়েকটা আসছে। মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট অভয় আপ্টের নাম কেউ কেউ ভাসিয়ে দিচ্ছেন। বছর দেড়েক মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। শশাঙ্ক মনোহরের কাছের লোক। তাঁর ভাবমূর্তিও নাকি স্বচ্ছ। বোর্ডের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য প্রাপ্য টিএ, ডিএ তিনি ব্যতিক্রমী ভাবে নেন না। প্লাস, লোধা সংস্কার আমদানির পক্ষে তীব্র ভাবে তিনি ছিলেন। তাঁকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। যাবে না মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকেও। তিনি এখন এমপিসিএ চেয়ারম্যান, প্রেসিডেন্ট নন। লোধা আইনে যা স্বীকৃত ‘পদ’ নয়। একই সঙ্গে বলাবলি চলছে, জ্যোতিরাদিত্য-র নাম ভাসিয়ে দেওয়া গেলে রাজীব শুক্লাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে কী ভাবে? গত তিন বছর ধরে উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার ডিরেক্টর এবং আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল চেয়ারম্যান। যে দু’টোর একটাও লোধা স্বীকৃত ‘পদ’ নয়। আর তিনি এমপি হলে জ্যোতিরাদিত্যও কিন্তু তাই। অর্থাৎ, সৌরভের বোর্ড কর্তা হওয়ার রাস্তা নিষ্কণ্টক নয়। আর সিএবি? সৌরভ ছেড়ে দিলে সেখানে কী হবে?
দু’টো রাস্তার কথা শোনা গেল। এক, অন্তর্বর্তীকালীন কাউকে বছরখানেকের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে ভাবা। ওয়াকিবহাল কেউ কেউ বললেন, প্রাক্তন সিএবি যুগ্ম সচিব বাবলু কোলেকে সেই পদে ভাবা যেতে পারে। সত্তর বছর হতে তাঁর এখনও এক বছর বাকি। সৌরভ বছর দেড়েকের বোর্ড মেয়াদ পূর্ণ করে এলে তার পর নতুন করে ভাবা যাবে। আর দুই, পূর্ণ মেয়াদের প্রেসিডেন্ট। সেক্ষেত্রে আপাতত সৌরভের অগ্রজ স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্ভাবনা। বর্তমান সিএবি যুগ্ম সচিব অভিষেক ডালমিয়াকে সিএবি শীর্ষকর্তারা প্রেসিডেন্ট পদে এখনই কেউ দেখছেন না। মনে করা হচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞ এখনও নন। কী দাঁড়াল? লর্ডসে ভারতীয় বোলাররা দারুণ বল করে এখনও পর্যন্ত একপেশে দেখানো টেস্টকে উত্তেজক করে তুলতে পারবেন কি না, জানা নেই। কিন্তু লর্ডস টেস্টের পরের সপ্তাহটা নিঃসন্দেহে উত্তেজক হতে যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.