সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: টাকার অভাবে একসময় ফুটবল খেলাই বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু, ওই যে কথায় বলে না, প্রতিভা কখনও চাপা থাকে না। দেশের প্রথম সারির ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসির অ্যাকাডেমিতে খেলার সুযোগ পেল শিলিগুড়ির প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার জয়হরি বর্মন। বেঙ্গালুরুতে থাকা-খাওয়া, এমনকী পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষই। মাসে ৩ হাজার টাকা করে ভাতাও পাবে এই কিশোর ফুটবলার। চুক্তি এক বছরের। জয়হরির রোজগারেই সুদিন ফিরবে। আশায় পরিবারের লোকেরা।
[বিষ খাইয়ে খুন দাদাকে, তিন বছর পর অভিযোগ জানালেন সাঁতারু মাসুদুরের বোন]
বাবা নেই। পরিবার বলতে দাদা ও মা। দাদা পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাঁর সামান্য রোজগারে কোনওমতে সংসার চলে। বড় ফুটবলার হতে চায় শিলিগুড়ির হাতিয়াডাঙার কিশোর জয়হরি বর্মন। তাঁর বাড়ির কাছেই নিঃখরচায় ছেলেদের ফুটবল খেলা শেখান কবি সরকার। তিনি নিজে একসময়ে মহামেডানে খেলতেন। জহুরির চোখে ধরা পড়ে নবমশ্রেণির ছাত্র জয়হরি বর্মনের ফুটবল প্রতিভা। কবি মজুমদারের কাছেই ফুটবলে ‘পায়েখড়ি’ ওই কিশোরের। ২০১৫ সালে জয়হরিকে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে পাঠান তিনি। কিন্তু, নামী ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে মাসে হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ফুটবল শেখানোর মতো সামর্থ্য ছিল না জয়হরি বর্মনের পরিবারের। অতএব ফুটবল খেলার ইতি। বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসেন কবি মজুমদারই। নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে জয়হরিকে ভরতি করে দেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে। মাস ছয়েক শেখার পর অবশ্য ভরতির ফি মকুব হয়ে যায়। কিন্তু, আচমকাই বন্ধ হয়ে যায় অ্যাকাডেমি। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে খুদে ফুটবলার জয়হরি বর্মনের ভবিষ্যৎ। কোচের পরামর্শে বিভিন্ন অ্যাকাডেমিতে ট্রায়াল দিতে শুরু করে সে। শেষপর্যন্ত, দেশের প্রথম সারির ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসির অনূর্ধ্ব ১৮ অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পেয়ে গেল বছর পনেরোর কিশোর ফুটবলার।
গত বছরের ডিসেম্বরে বেঙ্গালুরুতে ট্রায়াল দিতে গিয়েছিল জয়হরি বর্মন। দুই পায়ে সমান স্বচ্ছন্দ্য মিডফিল্ডারটিকে মনে ধরে ক্লাবের অনূর্ধ্ব ১৮ অ্যাকাডেমির কোচেদের। এক বছরের চুক্তিতে সেখানে ফুটবলের প্রশিক্ষণ নেবে জয়হরি। ভিন রাজ্যে থাকা-খাওয়া, এমনকী পড়াশোনার দায়িত্বও নেবে বেঙ্গালুরু এফসি অ্যাকাডেমি। মাসে তিনহাজার টাকা ভাতাও দেওয়া হবে। গত সপ্তাহে শিলিগুড়ির বাড়িতে ফিরেছে জয়হরি। তাঁর প্রথম কোচ কবি মজুমদার জানিয়েছেন, চুক্তির কাগজপত্র বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ। তারপর পাকাপাকিভাবে বেঙ্গালুরু চলে যাবে জয়হরি। তাঁর দাবি, অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভাল খেলতে পারলে, আগামী বছর বেঙ্গালুরু এফসির সিনিয়র দলেও সুযোগ পেয়ে যেতে পারে শিলিগুড়ির জয়হরি বর্মন।
মা ছাপোষা গৃহবধূ। দাদা রাজমিস্ত্রি। বেঙ্গালুরু এফসির নামই শোনেননি তাঁরা। তবে ছেলে যে খেলার সুবাদে এতবড় সুযোগ পেয়েছে, তাতে খুশি জয়হরির পরিবার। তাঁদের আশা, ফুটবলার জয়হরি বর্মনের রোজগারে একদিন পরিবারের আর্থিক দৈন্যতা ঘুচবে।
[দেশের প্রবীণতম মহিলা পর্বতারোহী হিসেবে এভারেস্ট জয় করে নজির এই মডেলের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.