তনুময় ঘোষাল: কনকনে ঠান্ডা ও ঝোড়ো বাতাসকে উপেক্ষা করে কার্যত রুটম্যাপ ছাড়াই শৃঙ্গজয় করেছেন। ফেরার পথেও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা পিছু ছাড়ল না পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্তের। সামিট করার পর বৃহস্পতিবার রাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা মাউন্ট সিডলের ফুয়েলিং স্টেশনে আটকে ছিলেন সত্যরূপ ও তাঁর সঙ্গীরা। দৃশ্যমানতা কম থাকার কারণে বিশেষ বিমান উড়তেই পারেনি। শেষপর্যন্ত শুক্রবার সকালে রওনা হন সত্যরূপ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও, শনিবারই চিলিতে পৌঁছে যাবেন তিনি।
[ সত্যরূপ জানতেনই না উনি বিশ্বরেকর্ডের পথে!]
অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি মাউন্ট সিডলে। বিশ্বের দুর্গমতম বটেও। পর্বতারোহীরা বলেন, মাউন্ট এভারেস্টের থেকে নাকি মাউন্ট সিডলে-র শৃঙ্গে ওঠা অনেক বেশি কঠিন। শেরপা তো দুর অস্ত, পর্বতারোহণে ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। বরফ কেটে রাস্তা তৈরিই হোক কিংবা ক্যাম্প বানানো, সবকটা নিজেদেরই করতে হয় পর্বতারোহীদের। বিশ্বরেকর্ডের লক্ষ্য এমনই দুর্গম মাউন্ট সিডলে-কেই বেছে নিয়েছিলেন বাঙালি পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। ভারতীয় বুধবার মাউন্ট সিডলে জয় করেছেন তিনি। বিশ্বের কনিষ্ঠতম পর্বতারোহী হিসেবে সপ্তশৃঙ্গ ও সপ্ত আগ্নেয়গিরির চূড়ায় ওঠার রেকর্ড এখন সত্যরূপের।
কিন্তু, অ্যান্টার্কটিকার মাউন্ট সিডলে পর্যন্ত পৌঁছনোর যাত্রাপথটি কেমন ছিল? ‘সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন’-কে সেই গল্প শোনালেন সত্যরূপের বন্ধু দীপাঞ্জন দাস। আদতে কলকাতারই ছেলে, তবে কর্মসূত্রে পাকাপাকিভাবে বেঙ্গালুরুতেই থাকেন তিনি। মঙ্গলবার রাতভর বেঙ্গালুরুতে বসে সত্যরূপের অভিযানের উপর নজর রাখছিলেন তিনি। বস্তুত শৃঙ্গজয়ের খবর স্যাটেলাইট ফোন মারফত বন্ধু দীপাঞ্জনকেই দিয়েছিলেন সত্যরূপ। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে দীপাঞ্জন দাস জানালেন, ৭ জানুয়ারি কলকাতা থেকে বিমানে চিলির রাজধানী স্যান্টিয়াগোতে পৌঁছন সত্যরূপ। সেখান থেকে বিশেষ বিমানে পুন্টা অ্যারিনাস। তামিলনাড়ুর বিবেকান্দ রক যেমন ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু, তেমনি পুন্টা অ্যারিনাস চিলির দক্ষিণতম স্থান। তারপর ইউনিয়ন হিমবাহ বা গ্লেসিয়ার। এই হিমবাহটিকে অ্যান্টার্কটিকার সীমানাও বলা চলে। দীপাঞ্জন জানালেন, স্যান্টিয়াগো থেকে বিমানে প্রথমে পুন্টা অ্যারিনাস যেতে হয় পর্বতারোহীদের। সেখান আবার একটি বিমানে ইউনিয়ন গ্লেসিয়ার হয়ে মাউন্ট সিডলের বেসক্যাম্প পৌঁছানো যায়। এই পথেই গিয়েছিলেন সত্যরূপও।
কনকন ঠান্ডাই শুধু নয়, অ্যান্টার্কটিকার ঝোড়ো হাওয়াও রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল সত্যরূপকে। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা এতটাই, অভিযান পর্বে আগাগোড়ায় মাউন্ট সিডলের বেসক্যাম্প থেকে কিছুটা দূরে রিফুয়েলিং সেন্টারে বিমান অপেক্ষা করছিল। যাতে সামিট করার পর দ্রুত সত্যরূপকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু মানুষের তৈরি ব্যবস্থাকে প্রকৃতির কাছে হার মানতে হয়। সত্যরূপের বন্ধু দীপাঞ্জন জানিয়েছেন, সামিট শেষ করে বৃহস্পতিবার রাতে রিফুয়েলিং সেন্টারে পৌঁছন সত্যরূপ। কিন্তু, ততক্ষণে ঘন কুয়াশায় ঢেকে গিয়েছে ইউনিয়ন গ্লেসিয়ার। দৃশ্যমানতা কম থাকায় আর বিমান উড়তে পারেনি। ফলে রাতে কয়েক ঘণ্টা রিফুয়েলিং সেন্টারেই থেকে যেতে হয় সত্যরূপকে। শেষপর্যন্ত শুক্রবার সকালে বিমানে মাউন্ট সিডলে থেকে ইউনিয়ন গ্লেসিয়ারে পৌঁছান সত্যরূপ। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ভারতীয় সময় শনিবার সকালে চিলি পৌঁছবেন এই বাঙালি পর্রতারোহী। কলকাতা ফিরবেন ২৬ জানুয়ারি।
ছবি সৌজন্যে: দীপাঞ্জন দাস
[ মুখচোরা ছেলে সুস্থ আছে, এতেই বিশ্বজয়ের তৃপ্তি সত্যরূপের পরিবারের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.