সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুরু আর শেষ এক বিন্দুতে এসে মিশে গেল। মেলবোর্নেই একদিন শুরু হয়েছিল সানিয়া মির্জার (Sania Mirza) রূপকথা। এখানেই থেমে গেল তাঁর গ্র্যান্ড স্ল্যাম -পরিক্রমা। আগামী মাসেই টেনিস র্যাকেট পুরোপুরি তুলে রাখবেন। আর খেলতে দেখা যাবে না হায়দরাবাদি কন্যাকে। তাঁর র্যাকেট আর গিটার হয়ে বাজবে না। দেখা যাবে না সেই চোখ ঝলসানো ফোরহ্যান্ড।
ফোরহ্যান্ড সানিয়া মির্জার সিগনেচার শট। এই শট থমকে দিয়েছিল সেরিনা উইলিয়ামস (Serena Williams ) নামের এক মিথকে। সেও এই অস্ট্রেলিয়াতেই। আজ থেকে ১৮ বছর আগের এক ম্যাচ। প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সানিয়ার। গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়ার এক মাহেন্দ্রক্ষণ, আমাদেরও একজন চ্যাম্পিয়ন আছে। সানিয়ার দারুণ জোরে মারা ফোরহ্যান্ড থমকে দিয়েছিল সেরিনাকে। অবাক চোখে সানিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলেন মার্কিন কিংবদন্তি।
ম্যাচটা হেরে গিয়েছিলেন সানিয়া। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন খুব সহজেই জিতবেন সেরিনা। কিন্তু ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে টুর্নামেন্টে নামা সানিয়া কিন্তু দারুণ লড়েছিলেন সেরিনার বিরুদ্ধে। খেলার ফলাফল ছিল ৬-১, ৬-৪।
কাট টু ২০২৩। স্থান সেই মেলবোর্ন। কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ। আশা জাগিয়েছিলেন সানিয়া ও রোহন বোপান্না জুটি। কিন্তু ব্রাজিলের স্টেফানি-মাতোসের কাছে থেমে গেল রথ। সব শেষই তো আর ফেয়ারিটেল হয় না। সানিয়া হেরে গেলেন। আবেগে কেঁদে ফেললেন। সবার সামনে বলে ফেললেন, ”আমার পেশাদার টেনিস কেরিয়ার শুরু হয়েছিল মেলবোর্নে। এর থেকে ভাল শেষ আর কী হতে পারে।”
ভারতীয় টেনিসকে আরও অনেক কিছুই হয়তো দিতে পারতেন তিনি। বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। চোট আঘাত থাবা বসিয়েছিল তাঁর কেরিয়ারে। সেগুলো না হলে তাঁর কেরিয়ার হয়তো আরও উজ্জ্বল, আরও রঙিন হতো। তাঁর কেরিয়ার হয়তো বল্গাহীন হয়ে ছুটত। কিন্তু একসময়ে সত্যি সত্যিই তো সানিয়া টেনিস কোর্টে রং ছড়িয়েছিলেন। ভয়ডরহীন হয়ে খেলতেন। শিখিয়েছিলেন হারের আগেই হারলে চলবে না। হেরে চোখের জল ফেলেননি।
সানিয়ার চোখে জল আগে কি কেউ দেখেছেন? মিডিয়ার সামনে কোনও জড়তা ছিল না। একবার এক বর্ষীয়ান ক্রীড়া সাংবাদিককে মুখের উপরে জবাব দিয়েছিলেন। তা নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। নোলক পরা সানিয়া একসময়ে হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় টেনিসের স্টাইল স্টেটমেন্ট। সেই সানিয়াই তাঁর গ্র্যান্ড স্ল্যাম কেরিয়ারের শেষ স্টেশনে এসে খেললেন ছেলে ইজহানের সামনে। শিশুপুত্র স্ট্যান্ড থেকে মায়ের প্রতিটি পয়েন্টের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে, এর থেকে মন ভাল করা দৃশ্য আর কী হতে পারে। পরের দিকে আর দু-একটা টুর্নামেন্ট হয়তো খেলবেন তিনি। কিন্তু সেগুলো স্বাদে, বর্ণে, গন্ধে কখনওই গ্র্যান্ড স্লাম-চিত নয়। কিন্তু সানিয়াকে কোর্টে দেখলেই তো মন ভাল হয়ে যায় অনেকের।
সানিয়া মির্জা অনেক মন ভাল করা দৃশ্য উপহার দিয়েছেন। মহেশ ভূপতিকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৯ সালে এই মেলবোর্নের কোর্টেই গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেন। তার ঠিক সাত বছর পরে মেলবোর্নেই মার্টিনা হিঙ্গিসকে সঙ্গে নিয়ে মহিলাদের ডাবলস জিতেছিলেন সানিয়া। উইম্বলডন, যুক্তরাষ্ট্র ওপেন, ফরাসি ওপেনেও সানিয়া দেশের বিজেয়কেতন উড়িয়েছেন। ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এক মুঠো সোনালি রোদ্দুর। সব দিক বিচার করলে অস্ট্রেলিয়াই সানিয়ার কেরিয়ারের পয়মন্ত জায়গা। সেখানেই ‘শেষের কবিতা’ লিখলেন সানিয়া। ভারতের টেনিস জগতে সব অর্থেই শেষ হয়ে গেল একটা যুগ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.