শিলাজিৎ সরকার: সত্তর বছর আগে প্রিয় ফুটবলারকে প্রাণের ক্লাবে রেখে দিতে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন সুবোধচন্দ্র রায় (Subodh Chandra Roy)। তাই সেই আমলে এক কথায় হাজার দুয়েক টাকা বের করে দিয়েছিলেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের (East Bengal) প্রতি ভালবাসা থেকেই এমন পদক্ষেপ করেছিলেন পেশায় ব্যবসায়ী সুবোধবাবু।
লাল-হলুদ রংয়ের প্রতি সুবোধবাবুর মতোই ভালবাসা রয়েছে তাঁর ছেলে সমরেশচন্দ্র রায়ের (Samaresh Chandra Roy)। ক্লাবের তরফে হওয়া ‘ক্রাউড ফান্ডিং’য়ে অর্থ দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। তবে কী ভাবে সেই অর্থ ক্লাবের কাছে পৌঁছে দেবেন, সেই পথ খুঁজে পাননি। তাই সোমবার বিকালে সটান ক্লাবেই হাজির হলেন বছর তিরাশির সমরেশবাবু। তাঁবুতে বসে বলছিলেন, “ইস্টবেঙ্গল ক্লাব আমাদের প্রাণের জায়গা। একেবারে অন্তরের বিষয়। এই ক্লাবের সঙ্গে শুধু আমি না, আমার পুরো পরিবার জড়িয়ে আছে। তাই ক্লাবের পাশে থাকাটা আমাদের কাছে একেবারেই স্বাভাবিক বিষয়। আমি এবং আমাদের পরিবারের অনেকেই ক্রাউড ফান্ডিংয়ে অর্থ দিতে আগ্রহী। তা নিয়ে কথা বলতেই আজ ক্লাবে এসেছি।”
সুবোধবাবু ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে জড়িয়ে প্রায় ক্লাবের জন্মলগ্ন থেকেই। বাবার আমল থেকে লাল-হলুদকে সমর্থন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আবেগী সমরেশবাবু বলে গেলেন, “আমরা মূলত পূর্ববঙ্গের লোক। আমার বাবা ১৯২৫-’২৬ সাল থেকেই ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে আসতেন। তখন তিনি হ্যারিসন রোডের মেসে থাকতেন। বাবার মুখে শুনেছি, কোনও ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল হেরে গেলে বাড়ি ফেরা মুশকিল হত। পুরো রাস্তা প্রতিপক্ষের বিদ্রূপ সহ্য করতে হত।” বাবার পথ ধরে লাল-হলুদ রংয়ের প্রেমে পড়েন সমরেশবাবুও। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় সাত দশকেরও বেশি। ক্রমেই বেড়েছে সেই ভালবাসা। তাঁর কথায়, “আমি ১৯৪৯ সালে প্রথমবার বাবার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে আসি। খুব ছোট ছিলাম তখন। প্রতিপক্ষ ছিল মহামেডান স্পোর্টিং। ম্যাচটা আমরা ৬ গোলে জিতেছিলাম। তাই ম্যাচটা আরও বেশি স্মরণীয় আমার কাছে।”
ক্লাবের জন্য ক্রাউড ফান্ডিংয়ে অংশ নেওয়া নতুন নয় রায় পরিবারের জন্য। সত্তর বছর আগে পথ দেখিয়েছিলেন সুবোধবাবু। “৫৩ সালে রোমানিয়া-রাশিয়া থেকে ঘুরে আসার পর ভেঙ্কটেশকে দলে নিতে চেয়েছিল মোহনবাগান। তখনও ক্লাবের আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভাল ছিল না। অনেকেই টাকা দিয়েছিলেন ভেঙ্কটেশকে ধরে রাখার জন্য। বাবাও দু’হাজার টাকা দিয়েছিলেন। নয়তো সেবছরই ভেঙ্কটেশ মোহনবাগানে চলে যেতেন। বছর দুয়েক পর অবশ্য তিনি মোহনবাগানেই সই করেন,” একরাশ বিষণ্ণতা নিয়ে বলে গেলেন অশীতিপর সমরেশবাবু।
সমরেশবাবুর এমন কাজে আপ্লুত লাল-হলুদের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারও। এ প্রসঙ্গে বললেন, “বহু সদস্য-সমর্থক এভাবেই ক্লাবের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের লক্ষ্যই হল এভাবে সকলকে ক্লাবের সঙ্গে জড়িত করা।” আর সমরেশবাবু? তাঁর কামনা আরও জয়, আরও ট্রফি আসুক ক্লাবের ভাগ্যে। এটুকুই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.