সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বকাপ-উত্তর ভারতীয় ক্রিকেট সংসারে অশান্তির ছায়া যত দিন যাচ্ছে যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। টিমের দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের সম্পর্কের অবনতি নিয়ে নিত্যনতুন জল্পনা প্রায় নিয়ম করে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। আর যত সে সব প্রকাশ্যে চলে আসছে, সিওএ শাসিত ভারতীয় বোর্ডের স্টান্স তত নড়বড়ে হয়ে পড়ছে।
জাতীয় ক্রিকেটমহলের জল্পনা সত্যি হলে, ভারতীয় টিমের দুই মহাতারকা বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মার সম্পর্ক একেবারেই আর ভাল নয়। বিশ্বকাপের আগে থেকেই দু’জনের সম্পর্কে যে চিড় ধরেছে, সেটা বারবার বেরিয়ে পড়ছিল। গত বছর এশিয়া কাপের আগে কোহলিকে ইনস্টাগ্রামে আনফলো করে দিয়েছিলেন রোহিত। দু’জনের সম্পর্ক ঘিরে জল্পনা তখন থেকে শুরু। যা আরও বাড়ে রোহিত শর্মা নেতৃত্বাধীন ভারত এশিয়া কাপ জয়ের পর। টিমকে চ্যাম্পিয়ন করার পর রোহিত বলে দিয়েছিলেন যে, দায়িত্ব পেলে তিনি দেশের নেতৃত্ব দিতে তৈরি। তিনি অবশ্যই আগ্রহী। মাঝে কিছু দিন ব্যাপারটা চাপা ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ থেকে ভারতের বিদায়ের পর দু’জনের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
গতকালই ভারতীয় ক্রিকেটের ফার্স্ট লেডি অনুষ্কা শর্মাকে ইনস্টাগ্রামে আনফলো করে দেন রোহিত। প্রত্যুত্তরে হেঁয়ালি মার্কা একটা মেসেজ লেখেন অনুষ্কা। তিনি লেখেন, ‘এক বুদ্ধিমান একবার কিছুই বলেননি। যখন একরাশ মিথ্যে অভিযোগ সামনে আসে, তখন নীরবতার সঙ্গে হাত মেলাতে পারে একমাত্র সত্যি।’ অনুষ্কা যে ঠিক বলতে চেয়েছেন, স্পষ্ট নয়। অনুষ্কা রোহিত বা তাঁর স্ত্রী রীতিকা সচদেবকে ইনস্টাগ্রামে ফলো করেন না। রীতিকা আবার কোহলি বা অনুষ্কা-দু’জনের একজনকেও ফলো করেন না। এত কিছুর পরেও রোহিতকে ইনস্টাগ্রামে ফলো করা বন্ধ করেননি বিরাট। আর এ দিন অনুষ্কা আবার নিজের হেঁয়ালি ভরা ইনস্টাগ্রাম পোস্ট তুলে নিয়েছেন।
শনিবার সেই নাটক আরও নাটকীয় দিকে মোড় নেয়। এ দিন ছড়িয়ে পড়ে যে, সিওএ-র এক সদস্য ভারতীয় টিমের এক সিনিয়র ক্রিকেটারকে বলেন যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা বক্তব্য রাখতে। অনুরোধ করেন লিখতে যে, ভারতীয় সংসারে সব কিছুই ঠিক আছে। কিন্তু সেই সিনিয়র ক্রিকেটার সিওএ সদস্যের অনুরোধ রেখেছেন বলে খবর নেই। বলাবলি চলছে, যে সিনিয়র ক্রিকেটারের নাম বলা হচ্ছে, তিনি কি রোহিত শর্মা? আর তাঁকে অনুরোধকারীর নাম কি সিওএ প্রধান বিনোদ রাই? কারণ ইনস্টাগ্রামে অনুষ্কা শর্মাকে আনফলো করে যিনি দেশজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন, তিনি তো রোহিত শর্মা। টিমের অন্যতম প্রধান সিনিয়র ক্রিকেটার।
আসলে রোহিত বনাম বিরাট দ্বন্দ্ব ঘিরে জল্পনায় সবচেয়ে কঠিন পিচে যাকে ব্যাট করতে হচ্ছে, তার নাম সিওএ। যারা প্রথমে টিমে ঝামেলার খবর পত্রপাঠ উড়িয়ে দিয়েছিল। বলেছিল, কোনও ঝামেলাই নেই। এটাও বলা হয়েছিল, মিডিয়ায় কী বেরোচ্ছে তার উপর নির্ভর করে সিওএ চলবে না। সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার যদি সিওএ-কে এসে কোনও অভিযোগ জানায়, একমাত্র তখনই সিওএ সেটা নিয়ে ভাববে। কিন্তু তার পর পরই রোহিত ইনস্টাগ্রামে আনফলো করে দেন অনুষ্কাকে।
আর শুধু কোহলি-রোহিতের সম্পর্কের অবনতি নয়, বিশ্বকাপ উত্তর ভারতীয় সংসার থেকে আরও অশান্তির ছুটকো খবরাখবর বাইরে চলে আসছে। যেমন বিশ্বকাপে ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের পর ভারতীয় বোলারদের তুমুল ধাতানি খাওয়া। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ হেরে যায় ভারত। আর টিম ম্যানেজমেন্টের পুরো রোষ নাকি আছড়ে পরে ভারতীয় বোলারদের উপরে। অসন্তুষ্ট বোলারদের নাকি মনে হয়েছিল, তাঁদের দিকে আঙুল তোলার আগে আরও কিছু ব্যাপার দেখা হোক। শুধুমাত্র খারাপ বোলিং ইংল্যান্ড ম্যাচ হারায়নি ভারতকে। বোর্ডের কোনও কোনও কর্তা ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে ক্ষুব্ধ। এঁদের বক্তব্য হচ্ছে, কেন গোড়াতেই অশান্তি মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে না সিওএ? কেন সেটাকে আরও বাড়তে দিচ্ছে? এটা সবাই জানে যে, একটা টিমে দু’জন নেতা থাকতে পারে না। তাদের দু’জনকার মিডিয়া টিমের দু’জনকে তাক করে অবিরাম গোলাগুলি চালানোও অসুস্থতার ইঙ্গিত। কিন্তু এটা যদি দিন দিন এ ভাবেই বাড়তে থাকে, বৃহত্তর আকার নেয়, সিওএ শেষ পর্যন্ত সেটা সামলাতে পারবে তো?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.