সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্কে: বিদেশের মাটিতে ভারতীয় ব্যাটিং যখনই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, অবধারিত একজনের ছবিই ভেসে উঠেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। ‘দ্য ওয়াল’ রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর ব্যাটিং ধরন কি বিরক্তি আনেনি? এনেছে কখনও সখনও। বিশেষত একদিনের ক্রিকেটে অনেক সময়ই তাঁর ব্যাটিং স্টাইলে ঊষ্মা প্রকাশ করেছেন সমর্থকরা। কিন্তু যেখানে স্কিল ভার্সেস স্কিলের টক্কর, সেখানে তিনি অপ্রতিরোধ্য। বোলারের ক্যালকুলেশন একটা ছোট্ট টোকাতেই তুচ্ছ করে দিতে পারতেন। বহু অঙ্ক মাথা ঠুকে মরত তাঁর অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিরোধের সামনে। আবার বাউন্সারের ঔদ্ধত্যকে অবহেলায় তিনি নিচে নামিয়ে বলের গায়ে বাউন্ডারির ঠিকানা লিখে দিতে পারেন। এর নামই রাহুল দ্রাবিড়।
[ সেঞ্চুরিয়ান টেস্টের আগে কোহলিকে বিশেষ পরামর্শ সৌরভের ]
ক্রিকেটের মধ্যে যে রাজসিক ব্যাপার আছে, যে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর আছে, পরিশ্রম আর অপরিসীম ধৈর্য আছে তারই অপর নাম রাহুল দ্রাবিড়। আজকের টি-টোয়েন্টি যুগে তাঁর ক্রিকেট দর্শনকে প্লুটো গ্রহ মনে হতে পারে। কিন্তু এই যখন দক্ষিণ আফ্রিকাতেই বিরাটরা ব্যাটিং বিপর্যয়ে ধুঁকছেন, তখন উঠে এসেছে সেই দ্রাবিড়ের নামই। হাত কামড়ে সকলেরই আফসোস, ইস এখন যদি দ্রাবিড় থাকতেন! রাহুল দ্রাবিড় সেই বিরল ক্রিকেটার যিনি নীরব থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, ক্রিকেটে স্কিল এমন একটা বিষয়, বিজ্ঞাপন ও জিএসটি যাকে স্পর্শ করে না। সময় পেরলেও নয়।
এই দ্রাবিড় শুধু ক্রিকেটে নয়, একাধিকবার বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছেন অন্য অনেক কাজেও। যেমন,
ক্রিকেটভক্ত, দ্রাবিড়ের ফ্যান বন্ধু মরতে বসেছে দেখে সঙ্গীরা তাঁর কাছে দরবার করেছিলেন। ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত অশোক ধোকের শেষ চাওয়া বলতে ছিল একটাই। একবার দ্রাবিড়ের সঙ্গে কথা বলা। তাঁর বন্ধুরা অবশ্য ততটা আশাবাদী ছিলেন না। এত ব্যস্ততার মধ্যে দ্রাবিড় কি সময় দিতে পারবেন? তবু অন্ধকারেই ঢিল ছুড়েছিলেন। আর তারপরই জ্বলে উঠল স্কাইপের আলো। মরণাপন্ন ভক্তের সঙ্গে কথা বললেন দ্রাবিড়। শুধু তাই নয়, সরাসরি উপস্থিত হতে না পারার জন্য যে বিনয়ে তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন, তা অশোকের বন্ধুদের স্মৃতিতে আজও টাটকা।
এই তো সেদিন শিরোনামে ফের রাহুল দ্রাবিড়। নাহ, এবার কোনও সেঞ্চুরি নয়। বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন দ্রাবিড়। জানিয়ে দেন, তিনি আর কতটুকু যোগ্য? যথোপযুক্ত ব্যক্তির হাতেই বরং তা উঠুক।
সন্তানকে নিয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানমেলার এক প্রদর্শনীতে। দেশের কিংবদন্তি ক্রিকেটার। ভিভিআইপি যাঁকে বলে। কিন্তু নির্বিকার দ্রাবিড় দাঁড়িয়ে আছেন আর পাঁচজনের সঙ্গে মেলার লাইনেই। কোনও ঊষ্মা নেই। তিনি নিজে জানেন, দেশে তাঁর অবস্থান কোথায়। কিন্তু বাচ্চাদের মধ্যে সে ভিআইপি মানসিকতা ছড়িয়ে যাক, চান না দ্রাবিড়। তাঁরা অর্জন করেই পাক সুযোগ সুবিধা। অগত্যা…
[ মেয়ের জন্য সুরেশ রায়নার নয়া গান, প্রশংসায় পঞ্চমুখ শচীন-শেহওয়াগরা ]
ফ্ল্যাশ ব্যাকে ফিরে যাওয়া যাক ২০০৫ সালে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলছেন দ্রাবিড়। এই কলকাতাতেই। দানেশ কানেরিয়া লোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন। পরপর দুটো ব্লক করলেন দ্রাবিড়। কমেন্ট্রি বক্স থেকে অরুণলালের কটাক্ষ, দ্রাবিড় এগিয়ে এসে বাউন্ডারি হাঁকাবেন না। এরকমই খেলতে উনি পছন্দ করেন। গোঁড়া নিয়মেই আটকে থাকবেন। মুখের কথাও শেষ হল না। পরের বলেই বেরিয়ে এসে ছক্কা হাঁকালেন দ্রাবিড়। চমকিত ফিল্ডাররা। দ্রাবিড় যে এটা করবেন অরুণলালের মতো তাঁরাও বিশ্বাস করতে পারেননি। বড় খেলোয়াড় তো তিনিই, যিনি গোটা বিশ্বের ভরসা নিজের আত্মবিশ্বাসে ওলট-পালট করে দিতে পারেন। দ্রাবিড় বোধহয় অরুণলালকেও সেদিন নীরবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিকেট আর ক্রিকেট ধারাভাষ্যের ফারাক ঠিক কতখানি।
দ্রাবিড়কে দেখে অনেকর মনে হয় না যে তিনি বেশ মজার মানুষও। বন্ধু শচীনকে নকল করতেও শোনা গিয়েছিল তাঁকে। আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই মজার ঘটনাটি।
বিদেশি খেলোয়াড়দের আসলে ক্রিকেটের সহযোদ্ধাই ভাবতেন দ্রাবিড়। কেভিন পিটারসেনকে ব্যাটিং নিয়ে বহু পরামর্শ দিয়েছিলেন। এক ঝটকায় বদলে গিয়েছেন পিটারসেনের কেরিয়ার। পাক ক্রিকেটার মহম্মদ হাফিজের সঙ্গে সেলফি তুলতেও তাই তিনি দ্বিধা করেননি।
[ স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড ভেঙে নজির এই ব্যাটসম্যানের ]
এই বৈচিত্রের নামই দ্রাবিড়। স্টাইলে তিনি অর্থোডক্স নন, আসলে ক্লাসিক। জীবনেও সেই একই মেজাজ। জন্মদিনের আগে সবথেকে বড় উপহার বোধহয় পেয়েছেন ছেলের থেকে। স্কুল লেভেলে সেঞ্চুরি করেছে দ্রাবিড়ের ছেলে। তা দেখে মুগ্ধ দেশবাসী। আর মনে মনে জনে জনে প্রার্থনা একটাই, এ দেশের ক্রিকেটে ফের ‘দ্য ওয়াল’ আসুক নেমে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.