স্টাফ রিপোর্টার: দমদম পার্কের বাড়িতে দাদু-দিদার সঙ্গে আইপিএল নিলাম দেখতে বসে তখন প্রবল টেনশনে ভুগছেন প্রয়াস রায়বর্মন। নিলামে তখন সবেমাত্র তাঁর নাম উঠেছে। ওই সময় টেনশনে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের থেকে হয়তো অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল।
মাস খানেক আগে ইডেনে আইপিএলের ফর্ম ভরতির সময়ও ভাবতে পারেননি, তাঁকে নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের এমন লড়াই হতে পারে! মঙ্গলবার রাতে যখন তাঁকে ফোনে ধরা হল, রীতিমতো বিস্মিত শোনাচ্ছিল বছর পনেরোর প্রয়াসকে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলছিলেন, “বিশ্বাস করুন ভাবতেও পারিনি নিলামে দেড় কোটি টাকায় আমাকে কেউ কিনবে। প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আদৌ ঠিকঠাক দেখছি তো।”
বাবা-মা দু’জনেই কর্মসূত্রে দিল্লিতে। এখানে দাদু-দিদার সঙ্গেই থাকেন প্রয়াস। দুর্গাপুরে ক্রিকেটের শুরু। তারপর বাংলা জুনিয়র টিম। সেখানে ভাল পারফরম্যান্সের পর সিনিয়র টিম। এবছর বিজয় হাজারেতে বেশ নজর কেড়েছিলেন। শোনা গেল, প্রয়াসকে নিয়ে বেশ কয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রবল আগ্রহী ছিল। তবে সেটা যে আরসিবি হবে, তা ভাবতে পারেননি প্রয়াসও। আইপিএল দেখা শুরুটাই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্য়াঙ্গালোরকে দেখে। ছোট থেকে স্বপ্ন দেখতেন তিনিও একদিন ওই লাল-কালো জার্সিটা পরে আইপিএল খেলবেন। অবশেষে সেটা পূরণ হওয়ায় আনন্দ আরও বেড়ে গিয়েছে। এখন থেকেই উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন তিনি। বলছিলেন, “এটাও আমার একটা স্বপ্ন ছিল। ছোট থেকেই আইপিএলে আরসিবিকে সমর্থন করতাম। স্বপ্ন দেখতাম একদিন আমিও ওই টিমের হয়ে খেলব। অবশেষে সেটা পূরণ হল। দারুণ অনুভূতি।”
এখানেই শেষ নয়। এবারের আইপিএল যেন অনেক স্বপ্ন একসঙ্গে পূরণ করে দিয়ে গেল বঙ্গ রিস্ট স্পিনারের। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে খেলবেন। কথা বলার মাঝেই প্রবল উত্তেজিত হয়ে বলছিলেন, “বিরাট কোহলির সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করতে পারব। এর থেকে বড় পাওনা আর কিছু হয় নাকি। আমার রোল মডেল বিরাট। ওঁর থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে। ওখানে অনেক ভাল ভাল ক্রিকেটার রয়েছেন। ওদের থেকেও প্রচুর কিছু শেখার রয়েছে।” বিরাটের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর প্রথম কী বলবেন, সেটা এখনও ভেবে উঠতে পারেননি। অপেক্ষা করছেন সেই মুহূর্তটার জন্য।
প্রচুর ফোন পেয়েছেন। সতীর্থরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সিনিয়র টিমের অনেকের কাছ থেকে শুভেচ্ছাবার্তা এসেছে। বঙ্গ লেগ স্পিনার কৃতজ্ঞ কোচ থেকে শুরু করে সিনিয়র টিমের ক্রিকেটার, প্রত্যেকের প্রতি। বললেন, “সবাই আমাকে খুব সাহায্য করেছে। সিনিয়রদের থেকে অনেক টিপস পেয়েছি। ওদের সাহায্য ছাড়া কোনও কিছুই সম্ভব হত না। আমি সবার কাছে প্রচণ্ড কৃতজ্ঞ।” তবে সাফল্যের দিনেও প্রচণ্ড সাবধানী প্রয়াস। উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার মতো কোনও কারণ দেখছেন না তিনি। বলছিলেন, “আমার কেরিয়ারের এখন সবে শুরু হয়েছে। অনেক দূর যেতে হবে। ভাল লাগছে। তবে এখানেই থেমে থাকতে চাই না। কাল থেকে আবার লড়াই শুরু হবে। আনন্দে ভেসে যাওয়ার মতো এখনই কিছু হয়নি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.