সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টোকিও অলিম্পিকে সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্স করেছে ভারত। মোট সাতটি পদক। একটি সোনা, ২ টো রুপো এবং ৪টি ব্রোঞ্জ। টোকিওতে সাফল্যের নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই ইতিহাসকে শুধু পদকের গণ্ডিতে সীমাবন্ধ করলে হয়তো ভুল হবে। কারণ, এবারের অলিম্পিকে এমন অনেক ভারতীয় অ্যাথলিট খেলেছেন, যারা পদক না জিতলেও মন জয় করে নিয়েছেন ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের। পদক না পেলেও যারা আগামী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারেন। দেখে নেওয়া যাক, তেমনই এক তালিকা।
অদিতি অশোক: গলফ। ভারতে এই খেলাটি এখনও ততটা জনপ্রিয় নয়। কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নাম ভারত থেকে গলফে প্রতিষ্ঠা পেলেও খেলাটি এখনও সেভাবে প্রতিষ্ঠা পায়নি। সেই গলফ থেকেই এবারের অলিম্পিকে (Tokyo Olympics) পদক জয়ের একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন ভারতের অদিতি অশোক (Aditi ashok)। চারদিন ধরে চলা মহিলাদের সিঙ্গল ইভেন্টে অধিকাংশ সময় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তিনি। শেষ কয়েকটি শট আরেকটু ভাল ভাবে নিতে পারলেই ইতিহাস গড়ে ফেলতে পারতেন তিনি। শেষপর্যন্ত চতুর্থ হয়ে মিলখা সিং, পিটি ঊষাদের মতো কিংবদন্তিদের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন অদিতি।
মহিলা হকি দল: অলিম্পিকে ইতিহাস গড়ে ৪১ বছর পর পদক এনেছে পুরুষ হকি দল। ইতিহাসের দোরগোড়ায় ছিল মহিলা হকি দলও (Women Hockey Team)। প্রথমবার মেয়েরাও উঠেছিলেন সেমিফাইনালে। কিন্তু শেষ চারে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে হারতে হয় ভারতকে। ব্রোঞ্জ পদক জয়ের ম্যাচে ব্রিটেনের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় ভারতীয় মেয়েদের। তবে, পদক না পেলেও রানি রামপালদের লড়াই আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
মেরি কম: একটা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। আর তাতেই পদকহীনভাবে টোকিও অলিম্পিক শেষ হয়ে গেল ভারতীয় বক্সিংয়ের সবচেয়ে বড় আইকন এম সি মেরি কমের (Marry Kom)। টোকিও অলিম্পিকে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হল তাঁকে। অথচ, সেই ম্যাচে জিতে গেলেই পদক নিশ্চিত ছিল তাঁর। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে কীসের ভিত্তিতে মেরি কমকে পরাজিত ঘোষণা করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
দীপক পুনিয়া: আশা জাগিয়েও অল্পের জন্য ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া করলেন দেশের অন্যতম সেরা রেসলার দীপক পুনিয়া (Deepak Punia)। ৮৬ কেজি বিভাগে শুরুর দুটি ম্যাচ অনায়াসে জিতে সেমিফাইনালে ওঠেন দীপক। কিন্তু সেমিফাইনাল এবং ব্রোঞ্জ পদক জয়ের ম্যাচে হতাশাজনকভাবে হারতে হয় তাঁকে। ব্রোঞ্জ পদক জয়ের ম্যাচে শেষ ৩০ সেকেন্ডে খারাপ ডিফেন্সের জন্য হারতে হয়েছে তাঁকে।
সতীশ কুমার: বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী! রক্ত ঝরুক, যন্ত্রণা হোক, তবে দেশমাতৃকার সম্মান বাঁচাতে লড়াই ছাড়ব না। এই ধনুকভাঙা পণ করেই অলিম্পিকের ব্রোঞ্জ পদক জয়ের ম্যাচে বিশ্বের ১ নম্বর বক্সারের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন ভারতের সতীশ কুমার (Satish Kumar)। উজবেকিস্তানের বাখোদির জালভ কোয়ার্টার ফাইনালে সহজেই হারিয়ে দিয়েছেন তাঁকে। কিন্তু চোখের উপরে সাতটি সেলাই আর অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েও যেভাবে তিনি লড়াই করেন তাতে রিংয়ের সুলতান হতে না পারলেও ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের হৃদয়ে সুলতানের আসনেই বসে পড়েছেন সতীশ।
সৌরভ চৌধুরী: নীরজ চোপড়ার (Neeraj Chopra) আগে তাঁকে ঘিরেই এবারের অলিম্পিকে প্রথম সোনাজয়ের স্বপ্ন দেখেছিল ভারত। ১০মিটার এয়ার পিস্তলের বাছাই পর্বে তিনি শেষ করেছিলেন শীর্ষস্থানে। ৬০০’র মধ্যে স্কোর ছিল ৫৮৬। কিন্তু, ফাইনালে নিজের পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি করতে পারলেন না। শেষ করলেন সপ্তম স্থানে।
কমলপ্রীত কৌর: টোকিও অলিম্পিকে রূপকথার গল্প লেখার একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন কমলপ্রীত কৌর। ডিসকাসের বাছাই পর্বে একমাত্র অ্যাথলিট হিসাবে ৬৪ মিটার ছুঁড়েছিলেন কমলপ্রীত (Kamalpreet)। কিন্তু ফাইনালে তিনিও নিজের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেননি। তিনি শেষ করেন ষষ্ঠ স্থানে।
দীপিকা কুমারী ও অতনু দাস: তিরন্দাজিতে এবারে পদক জয়ের ব্যপারে একপ্রকার নিশ্চিত ছিল ভারত। কিন্তু শেষপর্যন্ত শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে। মেয়েদের ব্যক্তিগত ইভেন্টে দীপিকা কুমারী (Deepika Kumari) কোয়ার্টার ফাইনালে হারেন অলিম্পিকের প্রথম বাছাইয়ের কাছে। অতনু দাসও (Atanu Das) ছেলেদের ব্যক্তিগত ইভেন্টে হারেন নিজের থেকে অনেক উপরে থাকা তিরন্দাজের কাছে। যার ফলে তিরন্দাজিতে স্বপ্নভঙ্গ হয় ভারতের।
গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ! অলিম্পিকের মতো ইভেন্টে সুযোগ পাওয়াটাও নেহাত সামান্য ব্যাপার নয়। হাজার প্রতিকূলতা কাটিয়ে নিজেদের থেকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে যেভাবে ভারতীয় অ্যাথলিটরা লড়াই করেছেন, তা নিঃসন্দেহে অবিস্মরণীয়। কিন্তু দিনের শেষে আক্ষেপ একটা থেকেই গিয়েছে, একটুর জন্য কতকিছু হয়নি…!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.