বোরিয়া মজুমদার: ভারতে এশিয়ান গেমসের সম্প্রচারক সংস্থা দেখলাম একটা ট্যাগলাইন ব্যবহার করছে- ‘ইস বার শও পার!’ অর্থাৎ এবার একশোর বেশি পদক জিতবে ভারত। একশো হবে কি না জানি না। তবে এবার সত্যিই দাপট দেখানোর সুবর্ণ সুযোগ আছে ভারতের।
প্রথমেই বলতে চাই অ্যাথলেটিক্সের কথা। সবচেয়ে বেশি সোনার আশা রয়েছে এই বিভাগেই। জ্যাভলিনে নীরজ চোপড়া, লং জাম্পে মুরলী শ্রীশঙ্কর, ৩০০০ মিটার স্টিপলচেজে অবিনাশ সাবলে, ডেকাথলনে তেজস্বিন শঙ্কর, শটপাটে তেজিন্দর সিং পাল তুর, মেয়েদের ৫০০০ মিটারে পারুল চৌধুরি। এর সঙ্গেই বলতে হয় ৪x৪০০ মিটার রিলের পুরুষ দলের কথা। নীরজকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আর জ্যাভলিনে কিশোর জেনা আর ডিপি মানু যে ফর্মে রয়েছে, তাতে এই বিভাগ থেকে একাধিক পদক এলে অবাক হব না। কারণ পাকিস্তানের আরশাদ নাদিম ছাড়া ভারতীয় জ্যাভলিন থ্রোয়ারদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর মতো আর কেউই নেই! ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশের সভাপতি আদিল সুমারিওয়ালা নিজেই বলছেন, “আমি আগেই তোমাকে বলেছি যে এবার আরও বেশি সাফল্য আশা করছি। দেশের কতজন অ্যাথলিট একসঙ্গে ডায়মন্ড লিগ ফাইনালে গিয়েছেন বল তো! আমি নিশ্চিত, এবার যেমন সবচেয়ে বেশি অ্যাথলিট এশিয়াড যাচ্ছে তেমনি পদক সংখ্যাও সব রেকর্ড ভেঙে ফেলবে।”
অ্যাথলেটিক্সের পর সবথেকে বেশি পদক আসতে পারে শুটিংয়ে। দুটো খেলাতেই আশা করছি কুড়ির বেশি পদক পাব আমরা। বিশেষত টোকিও গেমসের ব্যর্থতা মুছে ফেলতে শুটাররা মরিয়া হয়ে আছেন। বাকু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা তার একটা ঝলক দেখেছি। বাকুতে চার বিভাগে অলিম্পিক কোটা পেয়ে গিয়েছেন ভারতীয় শুটাররা। সেটা যে মেহুলি ঘোষ, অখিল শেওরান, রুদ্রাঙ্কশ পাটিলদের আত্মবিশ্বাসী করেছে, তা ওঁদের সাম্প্রতিক ফর্ম থেকেই স্পষ্ট।
প্রত্যেকেই এশিয়াডে পদক জয়ের দাবিদার। তবে চিনের চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে ভারতকে। আর প্যারিস অলিম্পিকের আগে মেহুলিরা সেটা কীভাবে সামলাচ্ছেন, তার একটা ছবি আমরা হাংঝৌ গেমসেই দেখতে পাব। এছাড়া মেয়েদের ক্রিকেটের মতো কিছু খেলায় ভারতের পদক জয়ে তেমন সমস্যা হবে না বলেই আমার বিশ্বাস।
এবারের এশিয়াড ভারতের নারীশক্তির দাপট দেখানোর মঞ্চও বটে। যেমন ভারোত্তোলনে মীরাবাই চানু, বক্সিংয়ে নিখাত জারিন বা কুস্তিতে অন্তিম পাঙ্ঘাল। চানু এখনও এশিয়াডে পদক পাননি। তবে তিনি সবে চোট সারিয়ে ফিরেছেন। স্ন্যাচে মনে হয় না তিনি ৯০ কেজির বেশি তোলার ঝুঁকি নেবেন। তাতেও সবমিলিয়ে ১৯৫ কেজির বেশি তুলতে সমস্যা হবে না চানুর। সেটা করতে পারলে নিশ্চিতভাবেই রুপো জিতবেন মণিপুরের এই কন্যা। নিখাত আবার সোনার ভাবনা নিয়েই রিংয়ে নামেন। বলছিলেন, “এই সুযোগ পাওয়ার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাই সব লড়াই আমার কাছে মরণ-বাঁচন। জয় ছাড়া অন্য কোনও লক্ষ্য থাকে না।” বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এই বক্সারের পাশাপাশি নজরে থাকবেন অন্তিমও। সদ্যই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জের সঙ্গে দেশের জন্য অলিম্পিকের কোটা জিতেছেন।
এর সঙ্গে হকি এবং ব্যাডমিন্টনেও ভাল ফলের আশা থাকবে। কোচ ক্রেগ ফুলটনের অধীনে হকি দল দীর্ঘদিন একসঙ্গে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফুলটন নিজেও সাফল্যের বিষয়ে আশাবাদী। আর ব্যাডমিন্টনে সিঙ্গলসে এইচএস প্রণয় বা ডাবলসে সাত্ত্বিকসাইরাজ রাঙ্কিরেড্ডি ও চিরাগ শেটির জুটি নিশ্চিতভাবেই ফুল ফোটাবে। তবে ভারতীয় পুরুষ ফুটবল দল যেভাবে এশিয়াডে গেল, তা খুবই হতাশার। ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগে দলের হাংঝৌ পৌঁছানো ভারতীয় ক্রীড়ার জন্য ভাল বিজ্ঞাপন নয় মোটেই।
এসব খেলার বাইরে আরও একটা দলের উপর নজর রাখতেই হবে। সেটা হল মহিলা রাগবি দল।
প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকা এই দলের সদস্যের জীবন সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো। যেমন ওড়িশার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা হুপি মাঝি বলছিলেন, “আমাদের গ্রামে মেয়েরা স্বাধীনভাবে চলাফেরাও করতে পারে না। সেখানে রাগবি খেলা বিলাসিতা। একটা প্রতিযোগিতায় ভাল খেলায় সংবাদমাধ্যম থেকে বাড়ির সবাই জানতে পারে যে আমি রাগবি খেলি। তখন সেটা ভালভাবে না নেওয়া হলেও ওড়িশা সরকার পাঁচ লক্ষ টাকা পুরষ্কার দেওয়ায় ছবিটা বদলে যায়।” এশিয়াডের মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করাটাই যেন হুপিদের কাছে ‘সোনার মেডেল!’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.