সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কিছুই চিরস্থায়ী নয় এই জগতে। যাত্রা যতই মসৃণ হোক, একদিন তা শেষ হবেই। ক্রীড়া দুনিয়াও এই নিয়মের বাইরে নয়। আর সেই রীতি মেনেই মঙ্গলবাসরীয় সন্ধেয় শেষ হল দ্য সানিয়া মির্জা শো। দীর্ঘ দুই দশকের বর্ণময় কেরিয়ার শেষে এবার থেকে পাকাপাকি প্রাক্তনের দলে চলে গেলেন টেনিস-সুন্দরী। ৬টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম যাঁর পকেটে, তাঁকে জীবনের শেষ প্রতিযোগিতায় বিদায় নিতে হল হেরেই। দুবাইয়ের ডিউটি ফ্রি টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে সানিয়া ও ম্যাডিসম কিজের জুটি হারল কুদেরমেতোভা-সামসোনোভা জুটির কাছে। খেলার ফলাফল ৪-৬, ০-৬।
সানিয়া (Sania Mirza) জানিয়েছিলেন, এখনও কেন খেলা ছাড়ছেন না, এটা শোনার থেকে কেন খেলা ছাড়লেন শোনা তাঁর কাছে অনেক বেশি তৃপ্তিদায়ক। আর তাই এই সময়কেই খেলা ছাড়ার আদর্শ সময় বলে মনে করেছিলেন তিনি। আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন চলতি মরশুমের পরই র্যাকেট তুলে রাখবেন তিনি। গত জানুয়ারিতে খেলেছিলেন শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম। দুবাইয়ের প্রতিযোগিতাই যে তাঁর শেষ প্রতিযোগিতা হতে চলেছে তা সেই সময় থেকেই জানা ছিল সকলের। তবু মার্কিন সতীর্থকে সঙ্গে নিয়ে রুশ জুটির কাছে তাঁর হারের বিষণ্ণতা কেবল কোনও ব্যক্তিগত মনখারাপেই সীমাবদ্ধ থাকল না, সেকথা বলাই যায়। এই হার কেবল একটা প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় মাত্র নয়। এই হার এক রত্নখচিত কেরিয়ারের ড্রপসিন নেমে যাওয়া। কুড়ি বছর ধরে চলতে থাকা এক মনোরম কাব্যসম কেরিয়ারের শেষ যতিচিহ্ন।
ফোরহ্যান্ড সানিয়া মির্জার সিগনেচার শট। আজ থেকে ১৮ বছর আগে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলতে নেমেই সেই শটের আগুনে গতি চমকে দিয়েছিল সেরেনা উইলিয়ামসের মতো মহাতারকাকেও। আসলে একেবারে শুরুর দিন থেকেই সানিয়া যেন গোটা বিশ্বের কাছে একটা জবাব- দেখো, আমাদেরও একজন রয়েছে যে কিংবদন্তিদের সঙ্গে লড়তে ভয় পায় না। সেরেনার সঙ্গে সানিয়া সেই ম্যাচে কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন। তবু তাঁর আগমনধ্বনি শুনেছিল বিশ্ব। পরবর্তী সময়ে ছ’টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম। ৪১টা টানা ডাবলস জয়। বিশ্ব রাঙ্কিংয়ে এক নম্বর। সানিয়া যা করেছেন তা কার্যতই রূপকথা। যে রূপকথা ভারতীয় টেনিস তথা ক্রীড়া দুনিয়ার এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থেকে যাবে। শেষ ম্যাচের বিষাদ সেই তুলনায় নিছকই ক্ষণস্থায়ী। চোটআঘাত থেকে নানা বিতর্ক, সে সবকে ছাপিয়ে সানিয়া আসলে গ্ল্যামার আর প্রতিভার সম্মেলনে তৈরি এক ঝলমলে রূপকথা হয়েই থেকে যাবেন।
তবে কোর্ট থেকে বিদায় নিলেও সানিয়া কিন্তু থাকছেন ময়দানেই। মহিলাদের আইপিএলে আরসিবি’র মেন্টর হয়েছেন তিনি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর চমকে গিয়েছিলেন সকলে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন টেনিস খেলোয়াড় কী করে ক্রিকেট দলের মেন্টর হতে পারেন? আসলে এর জবাবেই রয়ে গিয়েছে সানিয়া-ম্যাজিকের নীল নকশা। ২০ বছর ধরে পেশাদার খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকা এই খেলোয়াড় ক্রিকেট না খেললেও সামগ্রিক ভাবে তাঁর প্রভাব এমনই যে তাঁকে নির্বাচিত করতে ভাবতে হয়নি কর্মকর্তাদের। তাই টেনিস ছাড়ার পর ক্রিকেটের ময়দানে স্মৃতি মন্ধানা, রিচা ঘোষ, এলিস পেরির মতো তারকাদের উদ্বুদ্ধ করাই হবে তাঁর কাজ। আপাতত টেনিস কোর্টের পর ক্রিকেট মাঠের ডাগ আউটে তাঁকে দেখতে মুখিয়ে থাকবেন তাঁর অনুরাগীরা। বিদায়বেলায় এটাই আপাতত সান্ত্বনা তাঁদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.