স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প কিনা এখন ঘন জঙ্গলে ঢাকা! সেখানে নিশ্চিন্তে চরে বেড়াচ্ছে গরু! যতই অবাক শোনাক, জলপাইগুড়ির বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থা ঠিক এতটাই বেহাল! মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন, এই অত্যাধুনিক পরিকাঠামোযুক্ত স্টেডিয়াম থেকে উঠে আসবেন দেশের অসংখ্য প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ। যাঁরা খেলাধুলোর পৃথিবীতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন। সেই স্বপ্নকে সামনে রেখে আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে রাজ্য সরকার পঞ্চাশ কোটি টাকারও বেশি অর্থ খরচ করে গড়ে তুলেছিল আধুনিক পরিকাঠামো বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন। যা তুলে দেওয়া হয়েছিল স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (SAI) হাতে।
মাঝে পাঁচটা বছর গিয়েছে। গঙ্গা দিয়ে প্রচুর জল বয়ে গিয়েছে। অতিবাহিত হয়েছে সময়। এবং আধুনিক পরিকাঠামোযুক্ত বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন পরিণত হয়েছে প্রায় জঙ্গলে! খেলাধুলো দূরের ব্যাপার, সেটা এখন গবাদি পশুর অবাধ চারণভূমি! গরুরা এখন সেখানে ঘোরে দিব্য, নিশ্চিন্তে ঘাস খায়! আর এ হেন পরিণতির জন্য রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করছেন। সোমবার নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, বাংলার সঙ্গে কেন্দ্র বৈমাত্রেয়সুলভ আচরণ করছে। ক্রীড়ামন্ত্রী বলছিলেন, “প্রায় পাঁচ বছর আগে, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গনকে রাজ্য সরকার সাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল। জলপাইগুড়ি জেলার ২৭ একর জমির উপর উন্নত মানের ক্রীড়াকেন্দ্র গড়ে তুলতে রাজ্য সরকারের প্রায় ৫০ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রাজ্য সরকারের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও এই ক্রীড়া কমপ্লেক্স SAI কাজে লাগায়নি।”
ক্রীড়ামন্ত্রী আরও জানান যে, এই বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গনকে কাজে লাগানোর জন্য ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্বতন ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোরের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই চিঠির কোনও উত্তর আসেনি। এরপর ২০২০ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর কাছে গোটা বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে ফের চিঠি পাঠানো হয়। সঙ্গে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তার পরেও কোনও উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী এদিন বলে দেন, গত ৯ সেপ্টেম্বর পুরো ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বর্তমান কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকে (Anurag Thakur) চিঠিতে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও সেই চিঠির উত্তর আসেনি। কেন্দ্রের এই উদাসীনতায় বিরক্ত বাংলার ক্রীড়ামন্ত্রক। বলা হল, তিন মাস অপেক্ষা করা হবে। তার মধ্যে যদি কোনও সদুত্তর না আসে এবং সাই যদি এই পরিকাঠামোর সুবিধা সর্বাত্মক ভাবে ব্যবহার না করে, তা হলে সাইয়ের সঙ্গে যে ‘মউ’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা ভেঙে বেরিয়ে আসবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ক্রীড়ামন্ত্রী বলে দেন, “ক্রীড়াক্ষেত্রে নতুন প্রতিভা তুলে আনতে সাইয়ের হাতে স্টেডিয়াম তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রত্যাশা ভেঙে গিয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বপ্নের প্রকল্পে সমস্ত ধরনের খেলাধুলো যেমন, তিরন্দাজি, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, ফুটবল, জিমন্যাস্টিকস, স্কোয়াশ, সাঁতার, টেবল টেনিস, ভলিবল-সহ আরও অনেক ইভেন্টের বিশ্বমানের প্রশিক্ষণকেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল। ক্রীড়াবিদদের থাকার ব্যবস্থা করারও কথা ছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূলস্তরের প্রতিভাবান নবীন ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা ছিল। বর্তমানে সেই জমির দাম প্রায় তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো কোটি টাকা। কিন্তু সাই দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সে জমি অবহেলায় ফেলে রেখেছে। কিছুই করেনি। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী বলেছেন যে, গতবছর তৎকালীন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেণ রিজিজুকে চিঠি দেওয়ার পর তিনি জানিয়েছিলেন যে, বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু কিছুই করা হয়নি। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের দাবি, বাংলাকে সর্বস্তরে বঞ্চনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন যে, খেলাধুলোর আদর্শ পরিবেশ বা আবহাওয়া হল উত্তরবঙ্গে। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী সেখানে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন গড়েছেন। তিনি চান বাংলার বুকে এই ক্রীড়া পরিকাঠামো ব্যবহার করতে আসুক দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রীড়াবিদরা। সঠিক পরিকাঠামোয় নিজেদের প্রস্তুত করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করুক। কিন্তু কেন্দ্রের বঞ্চনার কারণে তার দশা এখন বেহাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.