সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: বাঙালির গর্বের মুকুটে নতুন পালক জুড়লেন উত্তর কলকাতার (North Kolkata) হাতিবাগানের রুণা দে। পেশায় শিক্ষিকা ৪৫ বছরের পর্বতারোহী প্রথম বাঙালি ও দ্বিতীয় ভারতীয় মহিলা হিসাবে পার করলেন দুর্গম ট্রেলস পাস।
অভিযাত্রীদের চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয় যে কয়েকটি পাস, তার মধ্যে অন্যতম উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) ট্রেলস পাস। কুমায়ুন হিমালয়ে দুর্গম উচ্চতায় পিন্ডারি হিমবাহের উপরে অবস্থিত পাসটির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ২৫০ ফুট উপরে। নন্দাদেবী ও নন্দাকোট পর্বতশৃঙ্গের মাঝে অবস্থিত ট্রেলস পাসের নামকরণ হয়েছে ১৮৩০ সালে কুমায়ুনের প্রথম ব্রিটিশ হাই কমিশনার, যিনি নিজেও একজন অভিযাত্রী ছিলেন, সেই জর্জ উইলিয়াম ট্রেলের নাম অনুসারে। এখনও পর্যন্ত ৯০টিরও বেশি অভিযাত্রী দল এই দুর্গম অভিযানের চেষ্টা করলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ২১টি দল সাফল্য পেয়েছে। ১৫ জুন চার অভিযাত্রীর এক দল এখনও পর্যন্ত সর্বশেষ ট্রেলস পাস অতিক্রম করেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনই বাঙালি। রুনা ছাড়া এই দলে ছিলেন রাজু চক্রবর্তী, সুমন্ত বসু এবং জিবিন জোসেফ। জিবিন কেরলের প্রথম ব্যক্তি যিনি এই পাস অতিক্রম করলেন। অভিযাত্রী দলের নেতা ছিলেন আসানসোল নিবাসী রাজু চক্রবর্তী।
আজ, শুক্রবার দুপুরে বাঘ এক্সপ্রেসে করে বাড়ি ফিরছেন রুণা। বাড়ি, স্কুলের শিক্ষকতা সামাল দিয়ে পাহাড় ও প্রকৃতির কাছাকাছি পৌঁছিয়ে যাওয়ার অদম্য নেশা ব্যালান্স করতে রীতিমতো কালঘাম ফেলতে হয় রুণাকে। মেয়ে শ্রীজিতা এবার ভর্তি হয়েছে এমবিএ কোর্সে। তাঁর ফি জমা করার পর অনেক কষ্টে ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন অভিযানে যাওয়ার টাকা। যেদিন রওনা দেবেন সেদিন ভার্টিগো সমস্যায় ভুগতে থাকা শ্রীজিতা বমি করতে করতে কাহিল। মাঝপথে আবার বাড়ি থেকে খবর আসে অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন রুণার শ্বশুর। এই সব বাধা অতিক্রম করেও জেদ ও ইচ্ছাশক্তিকে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লক্ষ্যের দিকে। যদিও ট্রেলস পাস ও রুণার মাঝে ছিল এর থেকেও বড় এক বাধা। ট্রেকিংয়ের অ-আ-ক-খ খাতায় কলমে কিছুই জানা নেই তাঁর। এখনও পর্যন্ত যত অভিযান করেছেন, সবই শখে ও হুজুগে। কিন্তু অন্যান্যবারের থেকে এবারের পার্থক্য বিশাল। খরস্রোতা নদী, খাড়া পাহাড়ি ঢাল। টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলে সফল হওয়া মুশকিল।
তবু নিজেই নিজের ক্ষিদ্দা হয়ে ‘ফাইট রুণা, ফাইট’ বলে জুগিয়ে গিয়েছেন আত্মবিশ্বাসের অক্সিজেন। তাতেই মিলল সাফল্য। ট্রেনে বসে বলছিলেন, “আমাদের রুটটা এতটাই কঠিন ছিল যে, কয়েকটা ভাগে ভেঙে নিয়েছিলাম। প্রথমেই পার করতে হত পিন্ডার নদী। বর্ষার পর ওর কী অবস্থা হয় জানতাম, কিন্তু গিয়ে দেখলাম বর্ষার আগেও তা কত খরস্রোতা। তার উপর কনকনে ঠান্ডা। আমাদের গ্রুপে পাঁচজন ছিল, একজন পার করতেই পারেনি। অসুস্থ হয়ে ফেরত চলে আসে। এরপর ছিল ২৫০ মিটারের খাঁড়াই। বুঝতেই পারছেন টেকনিক্যাল কিচ্ছু জানি না। শুধু দেখে দেখে সব বাধা পার করেছি।”
কঠিন অভিযানের জন্য স্কুল থেকে নিতে হয়েছে লম্বা ছুটি। ট্রেন লেট না করলে বাড়িতে লাগেজ রেখেই ছুটবেন কাঁকুড়গাছির স্কুলে। শুরু করে দেবেন রোজনামচা। সঙ্গে পরের অভিযানের সলতে পাকানো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.