অরিঞ্জয় বোস, প্যারিস: ঠিক যেন ১৩ বছর আগের এক মায়াবী রাতের দৃশ্য। সেদিন বিশ্বজয়ী হয়ে শচীন তেণ্ডুলকরকে কাঁধে নিয়ে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করেছিল টিম ইন্ডিয়া। বৃহস্পতিবার ভারত যখন স্পেনকে হারিয়ে অলিম্পিক ব্রোঞ্জটা জিতল, টানা দ্বিতীয়বারের জন্য, প্যারিসে তখন ভরা দুপুর। কিন্তু হরমনপ্রীত সিং যে আবেগে কাঁধে তুলে নিলেন পিআর শ্রীজেশকে, তার সঙ্গে তুলনা টানা যেতে পারে ১৩ বছর আগের ওয়াংখেড়ের। সেদিন শচীনকে কাঁধে নেওয়া প্রসঙ্গে দলের তরুণ মুখ বিরাট কোহলি উল্লেখ করেছিলেন দীর্ঘদিন ভারতীয় ক্রিকেটকে শচীনের টেনে নেওয়ার প্রসঙ্গ। এদিন যেন সেই ভাবনা থেকেই অগ্রজকে কাঁধে তুললেন ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত। ২-১ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে জোড়া গোল বা সেই সুবাদে এই অলিম্পিকে ৯টা গোল করার পরও যিনি পার্শ্বচরিত্র মাত্র!
তা হলে কেন্দ্রীয় চরিত্রে কে? সেটা কি আর বলার দরকার আছে? এক এবং অদ্বিতীয় পরাত্তু রবীন্দ্রন শ্রীজেশ! যিনি অলিম্পিক শুরুর আগেই ঘোষণা করেছিলেন, এই প্রতিযোগিতার পরই খুলে রাখবেন গ্লাভস-হেলমেট-প্যাড। তুলে রাখবেন স্টিক। আর অলিম্পিক গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেল হয়েছে আসমুদ্রহিমাচল, শ্রীজেশের অবসর-সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে। তবে এই সিদ্ধান্তে বদল হবে না, টানা দ্বিতীয়বার অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় গোলকিপারের বার্তা, “সমর্থকদের আবেগকে আমি সম্মান করি। কিন্তু কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে নেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও সুন্দর হয়ে যায়। ফলে, আমি অবসরের সিদ্ধান্ত বদল করছি না।” দুরন্ত ছন্দ নিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছেও হারতে হয়েছে ভারতকে। তবে শেষ পর্যন্ত প্যারিস থেকে যে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে না, সেটাই স্বস্তি শ্রীজেশের। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বলে গেলেন, “একটা পদক হাতে নিয়ে অলিম্পিক অভিযান শেষ করার থেকে ভালো কিছু হয় না। আমরা খালি হাতে ভারতে ফিরছি না, সেটা সবদিক থেকেই ভালো ফলাফল।”
টোকিওর পর প্যারিস–টানা দুই অলিম্পিক থেকে খালি হাতে ফিরতে হল না ভারতকে। শেষবার টানা দুই অলিম্পিকে ভারতীয় হকি দল পদক জিতেছিল ৫২ বছর আগে, মেক্সিকো সিটি (১৯৬৮) এবং মিউনিখে (১৯৭২)। সেই দু’বারও অবশ্য তৃতীয় হয়েছিল ভারত। তবে প্যারিসের থেকে টোকিওর ব্রোঞ্জকে এগিয়ে রাখছেন শ্রীজেশ। “এবার দল সত্যিই দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। তবে আমার হৃদয়ে টোকিওর স্মৃতি বেশি মহার্ঘ্য। কারণ সেই সাফল্যের পরই আমরা আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম যে আমরাও অলিম্পিকে পদক জিততে পারি,” বলছিলেন তিনি। লম্বা কেরিয়ার শেষ করার পর শ্রীজেশের উপলব্ধি, “গোলকিপিংটাই হকির শেষ কথা নয়। এটা যথেষ্টই কঠিন খেলা। তাই আমি সবসময় গোলপোস্টের সঙ্গে কথা বলতাম। আসলে গোলপোস্ট যেন আমার প্রেমিকা ছিল।” কিন্তু সেই প্রেমিকার কাছে আর ফিরবেন না শ্রীজেশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.