অরিঞ্জয় বোস, প্যারিস: টোকিওর পর প্যারিস। পর পর দুটো অলিম্পিকে পদক জিতেছেন নীরজ চোপড়া। টোকিওয় জিতেছিলেন সোনা। এবার রুপো পেলেও কোনওভাবেই তাঁর কৃতিত্ব ছোট করা যায় না। দেশবাসীর ভালোবাসা আর্শীবাদের মতো ঝরে পড়ছে নীরজের উপর। ভালোবাসা পাচ্ছেন সীমান্তের ওপার থেকেও। জ্যাভলিনে সোনাজয়ী পাকিস্তানের আর্শাদ নাদিমের মা প্রার্থনা করেছেন ভারতের নীরজের জন্য। তাঁর কাছে আমাদের অনেক দাবি। অনেক প্রশ্নও। সেই সব নিয়েই নীরজ একান্ত সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হলেন সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের।
৮৯.৪৫ মিটার জ্যাভলিন ছুড়ে রুপো পেয়েছেন নীরজ। অথচ পথটা একেবারেই সহজ ছিল না। চোট-আঘাতের সমস্যা দীর্ঘদিন ভুগিয়েছে তাঁকে। তা সত্ত্বেও ধারাবাহিকতার আরেক নাম নীরজ চোপড়া। তা সে এশিয়ান গেমসে সোনা হোক কিংবা বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ। তার পর প্যারিসে রুপোর সাফল্য। নীরজের ধারাবাহিকতার সিক্রেটটা কী? পদকজয়ী তারকা বলছেন, “নিয়মিত ট্রেনিং করে গিয়েছি। টেকনিক কীভাবে আরও ভালো করা যায়, সেই চেষ্টা করেছি। যে প্রতিযোগিতায় নেমেছি, সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করেছি। মাথায় থাকে, যতটা থ্রো করেছি, তার থেকেও ভালো করতে হবে।”
অলিম্পিকে ৯২.৯৭ মিটার জ্যাভলিন ছুড়ে সোনা জিতেছেন আর্শাদ নাদিম। মাঠে যে প্রতিযোগিতাই থাকুক না কেন, মাঠের বাইরে দুজনের বন্ধুত্ব নিয়েও চর্চা হয়। পদক জেতার পরও দুই বন্ধুকে কথা বলতে দেখা যায়। কী কথা হল নাদিমের সঙ্গে? নীরজ জানালেন, “প্রতিযোগিতা নিয়েই দুজনের কথা হচ্ছিল। খুব ভালো প্রতিযোগিতা ছিল। নাদিমের জন্য ভালো লাগছিল। ওর টেকনিক খুব ভালো। লাইনও ঠিকঠাক ছিল। সব মিলিয়ে ওর জন্য সেরা দিন ছিল।”
নীরজ রুপো জিতেছেন। আরেকটি পদকও নিশ্চিত ছিল ভারতের কাছে। কিন্তু ওজন বিতর্কে ফাইনালে নামতেই পারেননি ভিনেশ ফোগাট। সোশাল মিডিয়ায় তীব্র দাবিও উঠছে ভিনেশের পাশে দাঁড়ানোর। নীরজও পাশে দাঁড়াচ্ছেন ভিনেশের। তাঁর বক্তব্য, “নিয়মের কথা আলাদা। তবে ফাইনালে নামলে সোনা না জিতলেও রুপো তো পেতই। এই সমস্যাটা না হলে একটা পদক আসতই। নিয়মের বিষয়ে আমি ততটা জানি না। তবে এটুকু মানি, ওর পদক পাওয়া উচিত ছিল।”
নীরজকে প্রতিপক্ষ বলে ভাবতে রাজি নন আর্শাদের মা। পাকিস্তানি অ্যাথলিটের কাছে ভারতের নীরজ ‘ছেলের মতো’। ঠিক যেভাবে নীরজের মাও একই কথা বলেন আর্শাদ সম্পর্কে। সেই নিয়ে নীরজ বলছেন, “আমাদের মায়েরা তো সাদামাটা জীবনযাপন করেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজেদের কাজ করেন। সেখানে বাইরে দুনিয়ায় কী চলছে, অতোটা মাথা ঘামান না। ওঁরা তো সোশাল মিডিয়াতেও থাকেন না। ফোনও থাকে না। ফলে সেখানে কী চলছে বুঝতে পারেন না। ওঁরা শুধু আমাদের ভালো চান। আমাদের জন্য প্রার্থনা করেন। আসলে সব মায়েরাই একরকম হন। তাঁদের আশীর্বাদেই তো আমরা সফল হই। এক-একটা দিন এরকম আসে। কাল সেরকমই আর্শাদের দিন ছিল।”
এভাবেই যেন মিলে যান সীমান্তের দুপ্রান্তের দুই মা। অলিম্পিকের প্রতিযোগিতার গণ্ডি পার করে সন্তানস্নেহে দুজনকে আগলে রাখেন দুজনের মা। প্যারিসে দিনটা ছিল আর্শাদের। কিন্তু নীরজের জন্যও ফের সোনাজয়ের সুযোগ আসবে। বিশ্বমঞ্চে উড়বে ভারতের পতাকা। সেই দিনটার দিকে তাকিয়ে দেশবাসী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.