নীরজ চোপড়া।
সোমনাথ রায়, পানিপথ: পাকিস্তানের আরশাদ নাদিমের জ্যাভলিন ৯২.৯৭ মিটারের দূরত্ব অতিক্রম করতেই কেমন চুপসে গেল খান্দ্রা। একটু আগেও উঠছিল স্লোগান। করেগা হল্লা, নীরজকা ভালা।
এক-দো-তিন-চার, নীরজ করেগা ৯০ পার। সাময়িক ধাক্কা সামাল দিয়ে আবার নতুন উদ্যমে নিজেদের অক্সিজেন দিল নীরজের গ্রাম। কিন্তু দ্বাদশ ব্যক্তিদের সেই আওয়াজ বোধ হয় পৌঁছতে পারল না প্যারিস পর্যন্ত। নিজেকে উদ্দীপ্ত করে ভারতীয় ক্রীড়া জগতের নতুন ইতিহাস তৈরির এক কদম আগেই থেমে গেলেন নীরজ। নীরজ চোপড়া (Neeraj Chopra)। এই গ্রামের নিজ্জু।
পানিপথ জংশন থেকে আরেকটু এগিয়ে ৭০৯ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে বাঁদিকে ঘুরে অসন্ধ-পানিপথ রোডে সাত কিলোমিটার পার করলে আসে বড়ি নহর চুঙ্গ। সেখান থেকে আরও ১১ কিলোমিটার। এই পথে অবশ্য এই প্রথম নয়। তিন বছর একদিন আগে নীরজের টোকিওয় সোনা জেতার দিনও এসেছিলাম এই পথে। মাঝের ১০৯৭ দিনে সময়ের নিয়ম মেনেই পাল্টেছে অনেককিছু। এবড়োখেবড়ো পথ অনেকটাই ঠিক হয়েছে। তবে মসৃণ নয়। বদল এসেছে নীরজের গ্রামের পড়শিদের আত্মবিশ্বাসেও। সেবার ছিল আশা। এবার আত্মবিশ্বাস। কিন্তু দিনটা যেন নীরজের ছিল না। রেকর্ড বলছে সোনা জয়ের পথে নীরজের বর্শা যতখানি পথ পার করেছিল, এবার করেছে তার থেকে প্রায় পৌনে দু’ মিটার বেশি। কিন্তু ওই যে নেভিল কার্ডাস বলে গিয়েছিলেন, স্কোরবোর্ড গাধা। সেটাই যেন প্রমাণ হল আরও একবার।
তিন বছর আগে ছেলের ঐতিহাসিক কীর্তির দিনে যে মেজাজে ছিলেন নীরজের বাবা সতীশ চোপড়া, এদিন ইভেন্ট শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে ছিলেন তার থেকে বেশি ফুরফুরে মেজাজে। গোটা গ্রাম ধরেই রেখেছিল সোনা জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ওই যে, অদৃষ্ট। থামতে হল রূপো পেয়েই। ইভেন্ট শেষে সতীশ বলছিলেন, “যা পেয়েছি তাতেই খুশি। গতবারের থেকে বেশি তো ছুঁড়ল। দেশের হয়ে লড়াই করেছে। অনেকেই জানেন না ওর কুঁচকিতে একটা চোট আছে। সেটা ও কাউকে জানতে দেয়নি। আজকের দিনটা হয়তো ওর ছিল না।” তিনি বিশ্বসেরার পিতা। তাঁকে অনেক বুঝেশুনে কথা বলতে হয়। কিন্তু ভিড়ের তো সেই দায় নেই। কেউ বললেন, কীভাবে ক্যাজুয়ালি থ্রোগুলো করছিল নাদিম। নির্ঘাত নেশা (ডোপ) করে এসেছে। কেউ আবার আফসোসের সঙ্গে বলছিলেন, জ্যাভলিনে তো বটেই মেডেল ট্যালিতেও থাকতে হবে পাকিস্তানের পরে। এর থেকে খারাপ আর কিছু হতে পারে না।
মন খারাপ, তবে হতাশ হতে অবশ্য নারাজ খান্দ্রা। সোনা আসেনি, তাতে কী? টানা দু’বার অলিম্পিক থেকে পদক আনার কৃতিত্ব কোন অংশে কম? সাময়িক কষ্ট সামাল দিয়ে গোটা গ্রাম তাই তৈরি হচ্ছে নীরজকে বরণ করে নিতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.