কৃশানু মজুমদার: গোটা দেশের নজর আজ ছিল লভলিনা বরগোঁহাইয়ের (Lovlina Borgohain) দিকে। রিংয়ে ‘দেশের মেয়ে’র লড়াই শেষ হতেই অসমের বক্সারকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। টুইটে মোদি লেখেন, “দারুণ লড়েছো লভলিনা বরগোঁহাই। বক্সিং রিংয়ে তাঁর লড়াই অনেককে প্রেরণা জোগাবে। ওর জেদ এবং মানসিক দৃঢ়তা প্রশংসনীয়। ব্রোঞ্জ জেতার জন্য ওকে অভিনন্দন।”
টোকিওয় (Tokyo Olympics) লভলিনার মরিয়া লড়াই দেখতে যখন ব্যস্ত গোটা দেশ, তাঁর প্রতিটি ঘুসি দেখে যখন উচ্ছ্বসিত দেশবাসী, গোলাঘাট জেলার বরপাথার এলাকায় লভলিনার বাড়ির ছবিটা ঠিক তার উল্টো। তাঁর বাবা টিকেন বরগোঁহাই ও মা মামণি মেয়ের লড়াই দেখেনইনি। অন্য ঘরে বসেছিলেন তাঁরা। ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে লভলিনার বাবা টিকেন বললেন, “উত্তেজনার জন্য মেয়ের লড়াই আমরা দেখিনি। মেয়ে যখন রিংয়ে লড়ছে, আমরা তখন পাশের ঘরে।” শুধু এই ম্যাচই নয়। অলিম্পিকের আগের ম্যাচগুলোও নাকি দেখেননি তাঁরা। কারণটা আর কিছু নয়। মেয়ের খেলা দেখতে বসলে উত্তেজনা গ্রাস করে। সেই কারণেই টেলিভিশনের পরদায় লড়াই দেখা থেকে বিরত থাকেন তাঁরা।
সেমিফাইনালে লভলিনার প্রতিপক্ষ ছিলেন তুরস্কের বক্সার বুসেনোজ সুরমেনেলি। বিশ্ব ক্রমতালিকায় এক নম্বর তিনি। শুরু থেকেই রিংয়ে দাপট দেখান। কিন্তু কম যাননি লভলিনাও। তাঁকে দেখে মনেই হয়নি চাপে রয়েছেন। বিশ্বের একনম্বর মহিলা বক্সারের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছেন একের পর এক বিষাক্ত ঘুসি। শেষমেশ প্রবল প্রতিপক্ষের কাছে অবশ্য হার মানতে হয়েছে অসমের মেয়েকে। তবে তাঁর এই লড়াই চিরকাল মনে থাকবে দেশবাসীর। আজকের লড়াইয়ে নামার আগেই ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন লভলিনা। এদিন তিনি জিতলে পদকের রং বদলাতো। লভলিনার বাবা বলছেন, “আজ লড়াইয়ে নামার আগেও আমাদের ফোন করেছিল মেয়ে। ওকে আশীর্বাদ করে বললাম, মাথা ঠান্ডা রেখে খেলবে।”
লভলিনা রিংয়ে নামার আগে মেয়ের শুভকামনায় বাবা ও মা স্থানীয় এক হনুমান মন্দিরে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন। টিকেন বরগোঁহাই সেই প্রসঙ্গ উত্থাপ্পন করে বলেন, “মেয়ের উপরে প্রেশার ছিল। বিশ্বের একনম্বর বক্সারের বিরুদ্ধে নেমেছিল। এরকম লড়াই তো সবসময়ে কঠিনই হয়।”
টিকেন জানান, এদিন সকাল থেকেই তাঁদের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছিল মিডিয়া। বলতে গেলে গোটা গ্রাম উঠে এসেছিল লভলিনাদের বাড়িতে। মিডিয়ার কাছেই তাঁরা জানতে পারেন মেয়ে হেরে গিয়েছে। সোনা না এলেও ব্রোঞ্জ নিয়ে দেশে ফিরছেন লভলিনা। কিন্তু তাতেও দুঃখিত তাঁর পরিবার। টিকেন বলছিলেন, “মেয়ের তো স্বপ্ন ছিল সোনা জেতা। আজ পরাস্ত হওয়ায় সোনা জেতা আর হল না।সেই কারণেই দুঃখ একটা রয়ে গিয়েছে।”
লভলিনার লড়াই টোকিওতেই শেষ নয়। আগামী অলিম্পিককেই পাখির চোখ করছেন লভলিনা। সেটা তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলেই বেশ বোঝা যাচ্ছে। টিকেন বরগোঁহাই বলছিলেন, “এবারই প্রথম অলিম্পিক ছিল। সোনা এল না ঠিকই। কিন্তু ওকে আরও কঠিন লড়াই লড়তে হবে। অনুশীলনে ডুবিয়ে দিতে হবে নিজেকে। ওর একটাই স্বপ্ন, সোনা জেতা। এবার আর সেটা হল না। পরের বার আশা পূরণ করতেই হবে।” বরপাথার থেকে টোকিও যাত্রার রাস্তাটা মোটেও সোনায় মোড়ানো ছিল না। অলিম্পিক থেকে ব্রোঞ্জ জিতলেও লভলিনার গলায় কিন্তু উঠে গিয়েছে অদৃশ্য সোনার মেডেলই। একথা বলে দেওয়াই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.