Advertisement
Advertisement
Nadia

চোখে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন, প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে বডি বিল্ডিংয়ে ‘ভারত জয়’ ভাস্করের

'সারা ভারত মিস্টার ইন্ডিয়া জুনিয়র বডি বিল্ডিং' প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থানে নদিয়ার যুবক।

Nadia specially able man won Bronze in all India body building championship | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:March 11, 2023 9:18 pm
  • Updated:March 11, 2023 9:18 pm  

বিপ্লবচন্দ্র দত্ত,কৃষ্ণনগর: উচ্চতা মাত্র ৪ ফুট ২ ইঞ্চি। শারীরিক দিক থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ অক্ষম। রয়েছে প্রবল আর্থিক অনটন। তবুও সমস্তরকম প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এবছর ‘সারা ভারত মিস্টার ইন্ডিয়া জুনিয়র বডি বিল্ডিং’ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করলেন নদিয়ার গাংনাপুরের যুবক ভাস্কর বিশ্বাস। পেলেন ব্রোঞ্জ পদক। ভাস্করের স্বপ্ন একটাই, সবরকম প্রতিবন্ধতাকে পিছনে ফেলে দিয়ে আরও এগিয়ে যাওয়া। ‘সারা ভারত মিস্টার ইন্ডিয়া বডি বিল্ডিং’ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করা।

জন্মের পর থেকেই ভাস্কর শারীরিক দিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম। বর্তমানে তাঁর বয়স ২৬ বছর। উচ্চতা ৪ ফুট ২ ইঞ্চি। কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর চোখে। আর তাই বয়স যতই বেড়েছে, প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা ততই বেড়েছে ভাস্করের। সেই চেষ্টা এখনও চলছে। তবু প্রতিবন্ধকতা তাঁর পিছু ছাড়েনি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: অনশন ছেড়ে আলোচনায় বসুন, DA আন্দোলনকারীদের বার্তা রাজ্যপালের]

২০১৯ সালে ভাস্করের বাবা মারা যান। তখন তিনি স্নাতকস্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তারপর আর লেখাপড়া এগোয়নি। পড়াশোনা হয়নি তো কি আছে, অন্যভাবে স্বপ্নপূরণের চেষ্টা চালিয়ে যান ওই তরুণ। নিয়মিত দেহসৌষ্ঠব বা বডিবিল্ডিং চর্চা শুরু করেন তিনি। শুভেন্দু কর্মকার নামে একজনের জিমে ভরতি হন। ভোরে এক ঘন্টা এবং সন্ধেয় আরও এক ঘন্টা জোরদার শরীরচর্চা চালিয়ে যেতে থাকেন। বাড়িতে মা কুমকুম বিশ্বাসকে নিয়ে তাঁর ছোট্ট সংসার। সেই সংসার চালিয়ে বডি বিল্ডিংয়ের খরচ এবং প্রয়োজনীয় খাবার জোগার করতে কার্যত হিমশিম খেতে হয় ভাস্করকে। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে যা রোজগার হয়,তা দিয়েই এই খরচ চালান।

এ বছর ৪ এবং ৫ মার্চ মধ্যপ্রদেশের রতলমে অনুষ্ঠিত ভারতীয় বডি বিল্ডার্স ফেডারেশন আয়োজিত জুনিয়র মিস্টার ইন্ডিয়া বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় ৬০ কেজি বিভাগে সারা ভারত থেকে আসা ২৫ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন ভাস্কর বিশ্বাস। অদম্য জেদ এবং কঠিন মানসিকতার মাধ্যমে যে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেও এগিয়ে যাওয়া যায়,তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। এর আগে জেলাস্তরে তিনি প্রথম হয়েছিলেন এবং বাংলায় দু’বার রানার আপ হয়েছিলেন তিনি।

[আরও পড়ুন: ৩ দিনের ইডি হেফাজতে শান্তনু, নিয়োগ দুর্নীতিতে জেলবন্দিদের নিশানা কুন্তল ঘনিষ্ঠ নেতার]

ভাস্করের কথায়, “শারীরিক দিক দিয়ে প্রতিবন্ধকতাকে নিয়ে আমাকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আগামীদিনে আরও বড় হওয়ার স্বপ্ন আমার রয়েছে। কিন্তু বডি বিল্ডিংয়ের প্রচুর খরচ। তাই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এগিয়ে যেতে গেলে আমার কিছু সহযোগিতার প্রয়োজন। সরকারি কোনও সাহায্য পেলে আমার পক্ষে সুবিধা হত।” ভাস্করের মায়েরও ছেলেকে উৎসাহ দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। তিনি বলেছেন,”আমি চাই,ও যেন আরও এগিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মত সংসার থেকে কীভাবে সেটা সম্ভব হবে, তা জানি না।” ভাস্করের এই কৃতিত্বে ভীষণ খুশি তাঁর কোচ শুভেন্দু কর্মকার। তিনি জানিয়েছেন,”ও যখন আমার কাছে এল,তখন ও আমাকে ওঁর পারিবারিক সমস্যার কথা জানিয়েছিল। বলেছিল, ইচ্ছার কথাও। আমি ওঁর পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি চাই, বডি বিল্ডিংয়ে মিস্টার ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় আগামিদিনে ভাস্কর প্রথম হোক।” ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে ভাস্কর গোপিনগর বেলেরহাটের বাড়িতে ফিরলেও তাঁকে এখনও পর্যন্ত কেউ সংবর্ধনা দিতে যাননি। তার জন্য অবশ্য ভাস্কর এতটুকুও দুঃখিত নন। বরং বলছেন, কঠিন লড়াই জিতে আকাশ ছুঁতে চান তিনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement