স্টাফ রিপোর্টার : তিনি বরাবরের চ্যাম্পিয়ন। বক্সিংয়ে শুধুমাত্র বিপক্ষকে পর্যদুস্ত করেই তিনি ‘লৌহমানবী’ নন, জীবনযুদ্ধের অসম সংগ্রামেও তিনি সাফল্যের সমার্থক। তিনি মেরি কম (Mary Kom)।
বক্সিং তো বটেই, ভারতীয় ক্রীড়াজগতেরও ‘আইকন’ তিনি। কিন্তু দিল্লির যন্তরমন্তরে ধরনায় বসা কুস্তিগিরদের প্রতিবাদের ঢেউ কোথাও যেন অপ্রতিভ করে তুলেছে ‘ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি’কে। নয়তো কেনই বা তা নিয়ে প্রশ্নে অপ্রস্তুত দেখাবে সদাহাস্যময়ী ভারতীয় বক্সিং কিংবদন্তিকে! রবিবার তেমন ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা।
পিসি চন্দ্র গ্রুপ আয়োজিত ৩০তম পিসি চন্দ্র পুরস্কার সম্মান গ্রহণ করতে এদিন শহরে হাজির হয়েছিলেন মেরি কম। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আটবারের বিশ্ব বিলিয়ার্ড চ্যাম্পিয়ন গীত শেঠীও। সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সেই পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর দিল্লিতে প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই অস্বস্তিতে মেরি কম। কুস্তি সংস্থার সভাপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আইওএ এবং কেন্দ্র সরকার, তার দু’টোতেই রয়েছেন মেরি কম। প্রথমটির চেয়ারপার্সেন তিনি। অথচ সাংবাদিক সম্মেলনে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই মেরির জবাব, “কলকাতায় একটা বিশেষ কারণে আসা। সেই উপলক্ষ নিয়ে কথা বলতে চাই। যখন ওখানে (দিল্লিতে) যাব, এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তখন না হয় এই নিয়ে কথা বলা যাবে।” আসমুদ্রহিমাচল যে প্রতিবাদকে ঘিরে নড়চড়ে বসেছে, তা নিয়ে আশ্চর্যরকম নীরব ছয়বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। শুধু নিজের আগামী লক্ষ্য নিয়ে অকপট কিংবদন্তি বক্সার।
নভেম্বরে ৪১-এ পা দেবেন। নিয়ম অনুযায়ী, চল্লিশের পর আর খেলতে পারবেন না আন্তর্জাতিক কোনও টুর্নামেন্ট। ফলে আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকে খেলার সম্ভাবনাও নেই মেরি কমের। তবু সাফল্যময় কেরিয়ারকে বিদায়টা যথাযথভাবে দিতে চান ‘ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি’। তাই পাখির চোখ করছেন চলতি বছরের এশিয়ান গেমসকে। কিন্তু সেই স্বপ্নের পথেও যে থাবা বসাচ্ছে চোটআঘাত সমস্যা।
মেরির কথায়, “কমনওয়েলথ গেমসের আগে চোটসমস্যা কাবু করে দিয়েছিল। এত বড় চোটের (এসিএল টায়ার থ্রি) কবলে পড়ব স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। বক্সিংয়ের জন্য কখনও চোখের জল ফেলতে হয়নি। প্যারিস অলিম্পিকের সময় একবার পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেছিলাম। মনে হয়েছিল আত্মহত্যা করি। তারপর এই চোটই আমায় মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু নিজেকে বুঝিয়েছি, এখনও অনেককিছু আমার দেওয়ার আছে। এখন আমি চোটমুক্ত। এবার কঠোর ট্রেনিং শুরু করার পালা। মনেপ্রাণে চাই এশিয়ান গেমসে খেলতে।” সঙ্গে ‘চল্লিশের চালশে’পনাকে তুড়ি মেরে মেরির নকআউট পাঞ্চ, “আমি চার-পাঁচ বছর আরও খেলতে চাই। তেমন হলে পেশাদার বক্সিংয়ে যোগ দেব। কিংবা নিজের অ্যাকাডেমিতে নতুন মেরি কমদের তৈরি করব। থেমে থাকব না। কলকাতা থেকে দু’জন আছে আমার অ্যাকাডেমিতে। আরও প্রতিভা এখান থেকে উঠে আসুক।” চেনা জেদটা ঠিকরে বের হয় মেরির অভিব্যক্তিতে।
কিন্তু তাঁর উত্তরসূরীরা? নিখাত জারিন, নীতু ঘাংঘাস কিংবা লভলিনা বংগোহাঁই – প্রত্যেককেই তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক করেছেন মেরি। বলেছেন, “সাফল্য পাওয়ার পর অনেককে দেখেছি, দাম্ভিক হয়ে যায়। সেটা ভাল নয়। নিখাতদের শিখতে হবে কীভাবে চাপ সামলাতে হয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.