শিলাজিৎ সরকার: তখনও কোভিড-পর্ব পুরোপুরি শেষ হয়নি। হঠাৎ করেই একটা খবরে নড়েচড়ে বসেছিল ভারতীয় দাবা। দীর্ঘদিন ফিডে র্যাঙ্কিংয়ে দেশের এক নম্বর তারকা বিশ্বনাথন আনন্দকে সিংহাসনচ্যুত করেছেন অর্জুন ইরিগেসি। সেদিনের সেই সদ্য তরুণ এখন শুধু ভারতের এক নম্বর নন, দাবা বিশ্বের অন্যতম তারকা। টাটা স্টিল চেস ইন্ডিয়ায় যোগ দিতে কলকাতায় এসে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর সামনে অকপট এবছর ভারতকে দাবা অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম কারিগর অর্জুন ইরিগেসি।
প্রশ্ন : ভারতের এক নম্বর দাবাড়ু হওয়ার পর অনুভূতিটা কেমন ছিল?
অর্জুন : দেখুন, রাঙ্কিং নিয়ে আমি এখন আর ভাবনাচিন্তা করি না। ভারতের এক নম্বর হওয়ার পর অবশ্যই আমার দুর্দান্ত একটা অনুভূতি হয়েছিল। তবে ততদিনে আমি র্যাঙ্কিং বা ফিডে এলো রেটিংকে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তাই সেই অনুভূতি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
প্রশ্ন : বিশ্বনাথন আনন্দ দীর্ঘদিন ভারতের এক নম্বর দাবাড়ু ছিলেন। তাকে পিছনে ফেলে এক নম্বরে উঠে এসেছিলেন আপনি। আনন্দের থেকে কী বার্তা পেয়েছিলেন তারপর?
অর্জুন : সত্যি বলতে বিষয়টি নিয়ে আনন্দ স্যরের সঙ্গে তখন বিশেষ কথা হয়নি। আসলে গুকেশ, প্র্যাগ বা আমি দাবাড়ু হিসাবে কেমন, সেটা স্যর ভালোমতোই জানেন। আমরা যে এমন কিছু করতেই পারি, সেটাও স্যরের অজানা ছিল না। তাই স্যর অবাক হননি। পরবর্তীতে দেখা হওয়ার পর অবশ্য স্যর আমাকে শুভেচ্ছা জানান।
প্রশ্ন : আপনার খেলায় কার প্রভাব বেশি? আনন্দ নাকি ম্যাগনাস?
অর্জুন : আমি যখন খেলা শুরু করি, তখন আনন্দ স্যরই আমার রোলমডেল ছিলেন। তবে এখন আমার খেলায় ম্যাগনাসের প্রভাবই বেশি।
প্রশ্ন : আনন্দের কোন বিষয়টি আপনার সবচেয়ে ভালো লাগে?
অর্জুন : আনন্দ স্যর খুবই বিনয়ী। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েও তিনি একেবারে মাটির মানুষ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে এমন বিনয় বিশেষ দেখা যায় না। পাশাপাশি আনন্দ স্যর সহজেই বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে দেন।
প্রশ্ন : আর ম্যাগনাসের ক্ষেত্রে?
অর্জুন : ম্যাগনাস দারুণভাবে খেলাটা বোঝে। চাল দেওয়ার মধ্যে ওর আত্মবিশ্বাস প্রকাশ পায়। বোর্ডে রীতিমতো দাপট দেখায়।
প্রশ্ন : ম্যাগনাস বলেছেন যে টাটা স্টিল চেস ইন্ডিয়ার র্যাপিডে আপনার বিরুদ্ধে ম্যাচটাই ওর সবচেয়ে প্রিয়। আপনি কীভাবে দেখছেন বিষয়টি?
অর্জুন : ম্যাগনাসের বিরুদ্ধে ম্যাচটা থেকে আমিও অনেক কিছু শিখেছি। ম্যাগনাসের বিরুদ্ধে আমি প্রথমদিকে চাল দিতে অনেকটা সময় নষ্ট করেছিলাম। যার ফলে পরের দিকে আর সময় ছিল না আমার হাতে। আমার এই বিভাগে আরও ভালো পারফর্ম করা উচিত ছিল। পরবর্তীতে সেটা মাথায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন : গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, গুকেশ, প্র্যাগ আর আপনার মধ্যে বিশেষ তফাত নেই। গুকেশ ক্যান্ডিডেটস জিতেছে। সেটা আপনি বা প্র্যাগও জিততে পারতেন। আর দাবা অলিম্পিয়াডেও সেটা বোঝা গিয়েছে। পরবর্তীতে কি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে দুই ভারতীয়র লড়াই দেখা যেতে পারে?
অর্জুন : এটা ঠিক যে আমাদের দেশের তিন-চারজন দাবাড়ু আছে যারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার। এরমধ্যে গুকেশ ফাইনালে উঠেছে। ও সর্বকনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়নও হতে পারে। আর দুই ভারতীয়র ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনাও আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, অন্য সব দেশেও ভালো দাবাড়ুরা আছে। ফলে আমাদের কাজটা সহজ হবে না।
প্রশ্ন : এবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে গুকেশ বনাম লিরেন ম্যাচের ফলাফল নিয়ে আপনার মত কী?
অর্জুন : আমি লিরেনের বিরুদ্ধে বিশেষ খেলিনি। তবে এটুকু বলতে পারি, ও প্রচণ্ড শক্তিশালী। হয়তো শারীরিক সমস্যা এবং অন্যান্য কারে ওর সাম্প্রতিক ফর্ম খারাপ যাচ্ছে। তবে ওর মতো দাবাড়ুকে হালকা ভাবে নেওয়া চলবে না।
প্রশ্ন : দাবা বিশ্বের অনেকেই বলছেন ফাইনাল ১৪ রাউন্ড পর্যন্ত গড়াবে না। আপনারও কি একই মত?
অর্জুন : আমিও সেটাই মনে করছি। শেষ রাউন্ডের আগেই নির্ধারিত হয়ে যাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফলাফল।
প্রশ্ন : আনন্দের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে আপনি ২,৮০০ পয়েন্ট পেয়েছেন। ম্যাগনাসের মতে, এবার নতুন লক্ষ্য হবে ২,৮৫০ পয়েন্ট…
অর্জুন : আগেই বলেছি, আমি র্যাঙ্কিং বা এলো রেটিং নিয়ে এখন আর ভাবনাচিন্তা করি না। আর ২,৮৫০ পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেকটা সময় লাগবে। এখন থেকেই এই নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.