শিলাজিৎ সরকার: একজনের দু’টো হাতই জন্ম থেকে নেই। তবে প্যারা অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ, প্যারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জেতার পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি সেই অপূর্ণতা। আরেকজন বিশ্বের প্রথম তিরন্দাজ যাঁর দু’টো হাত তো বটেই, নেই দু’টো পা-ও। পাঁচ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনা হাত-পা কেড়ে নিলেও মানসিক কাঠিন্যে আঘাত হানতে পারেনি তাঁর।
প্রথমজন জম্মু ও কাশ্মীরের শীতল দেবী। দ্বিতীয়জন ওড়িশার পায়েল নাগ। দু’জনেই প্যারা তিরন্দাজ। আর দু’জনেই ধনুকের ছিলা টানার কাজটা করেন চোয়াল আর কাঁধের সাহায্যে। রবিবার দিল্লির জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে খেলো ইন্ডিয়া প্যারা গেমসের ফাইনালে বিশ্বের অন্যতম সেরা প্যারা তিরন্দাজ বছর আঠারোর শীতলের মুখোমুখি হয়েছিলেন সতেরো বছরের পায়েল। ১০৯-১০৩ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে ফাইনাল জিতলেন শীতল। তবে আক্ষরিক অর্থেই চোয়ালচাপা লড়াই করে সকলের নজর কাড়লেন দুই তিরন্দাজ।
ফাইনালে মুখোমুখি হলেও শীতল আর পায়েলের মধ্যের সম্পর্কটা ঠিক প্রতিদ্বন্দ্বীর নয়। বরং বন্ধুত্বের, স্নেহের। তাই তো শীতল অনায়াসে বলে গেলেন, “প্রথমেই বলব, ফাইনালে পায়েল খুবই ভালো পারফর্ম করল। ও ধারাবাহিকভাবে পরিশ্রম করছে। প্রথমবার দেখে বুঝতেই পারছিলাম না পায়েল কীভাবে তিরটা ছুঁড়বে। আশা করছি দ্রুতই ভারতকে পদক এনে দেবে।” প্রতিযোগিতায় টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্রসঙ্গে বললেন, “মাতা রানির আশীর্বাদে আমি এই সোনা জিতলাম।”
এদিন ফাইনালের শুরুর দিকে একটা শট কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায় পায়েলের, পান মাত্র ৭ পয়েন্ট। সেটাই যেন শেষ পর্যন্ত তফাত গড়ে দিল। তিনি অবশ্য সেসব নিয়ে ভাবছেন না। বললেন, “আমি ফাইনালে লড়তে পেরেই খুশি। রুপোটাও খারাপ ফলাফল না আমার জন্য।” কৃত্রিম পায়ে লাগানো বিশেষ যন্ত্র পায়েলকে সাহায্য করে লক্ষ্য স্থির করতে। তবে খেলো ইন্ডিয়া প্যারা গেমসে নামার মাত্র একমাস আগে সেই যন্ত্র পেয়েছেন পায়েল।
এদিন তৃপ্ত দেখাচ্ছিল আরও একজনকে। তিনি কুলদীপ ভেদওয়ান। শীতল আর পায়েলের উঠে আসার ক্ষেত্রে অন্যতম অনুঘটক যিনি। ভূস্বর্গের এই তিরন্দাজি কোচ প্রথমে তৈরি করেছেন শীতলকে। আর মুখ দিয়ে তুলি ধরে ছবি আঁকার ভিডিও দেখে খুঁজে বার করেছেন বোলাঙ্গিরের এক অনাথ আশ্রমের পায়েলকে। ফলে দুই ছাত্রীর এমন দ্বৈরথ দেখে কুলদীপের খুশি হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.