বোরিয়া মজুমদার: শুক্রবার শুরু হকি বিশ্বকাপ (Hockey World Cup)। প্রথমদিনেই নামছে আয়োজক ভারত। প্রতিপক্ষ স্পেনের বিরুদ্ধে ম্যাচ ঘিরে যেমন অনুরাগীদের মধ্যে উৎসাহ তুঙ্গে তেমনই ঘোরাফেরা করছে একটা প্রশ্ন। পারবে ভারতীয় হকি দল ইতিহাস গড়তে? যেমন ইতিহাস রচিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে সেবার কুয়ালা লামপুরে বিশ্বসেরার তাজ মাথায় পরে ছিলেন অজিত পাল সিং, অশোক কুমাররা। সেই প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত শেষ। তারপর ৪৮ বছর অতিক্রান্ত। আর বিশ্বকাপ জয় করা সম্ভব হয়নি ভারতীয় হকি দলের। এবার কি অসাধ্যসাধন করতে পারবেন হরমনপ্রীত সিং, পিআর শ্রীজেশরা? যেমনটা তারা পেরেছিলেন অলিম্পিকের মঞ্চে। ৪১ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে টোকিও গেমসে ব্রোঞ্জ জয় করেছিল মনপ্রীত সিংয়ের ভারত। সঙ্গে তৈরি হয়েছিল নতুন ইতিহাস।
জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রোঞ্জ প্লে অফে ভারতের সেই অবিশ্বাস্য কামব্যাক আজও সকলের স্মৃতিতে টাটকা। ম্যাচের দ্বিতীয় কোয়ার্টার তখন সবে শুরু। জার্মানির মুহূর্মুহূ আক্রমণে তখন দিশেহারা দেখাচ্ছে ভারতীয় হকি দলকে। ২৪ মিনিটের মধ্যে তখন ২-১ এগিয়ে রিও অলিম্পিকের ব্রোঞ্জজয়ী জার্মানরা। দ্বিতীয় গোলের উচ্ছ্বাস কাটতে না কাটতেই ৩-১ লিড নিয়ে নেয় জার্মানি। ভারতীয় শিবিরে তখন যাকে বলে পিনড্রপ সাইলেন্স।খুব কাছে এসে পদক হাতছাড়া হচ্ছে, এমন ধারণা তখন বদ্ধমূল বসে পড়তে শুরু করেছে মনের মধ্যে। ৪১ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে, সেই দীর্ঘশ্বাসও পড়তে শুরু করেছে।
তবে অন্যরকম কিছু হয়ত ভেবেছিলেন ভারতের মনপ্রীত, রুপিন্দার পাল সিং। তৃতীয় গোল হজমের পরেই গোটা ‘ব্যাটেলিয়ন’কে টিম-হার্ডলে ডেকে নিয়েছিলেন ভারতের দুই ‘জেনারেল’। দশ সেকেন্ডের পেপটক দিয়ে মুহ্যমান দলকে উজ্জীবিত করেছিলেন কোচ গ্রাহাম রিড। বাকিটা ইতিহাস।পরের তিরিশ মিনিটে এক অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী ছিল গোটা দেশ। ১-৩ থেকে ৫-৩ করে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন আজকের অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিং, হার্দিক সিংরা। কিন্তু নাটকের ওখানেই শেষ নয়। শেষ কোয়ার্টারে ব্যবধান কমিয়ে ভারতের ওপরে চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল জার্মান ব্রিগেড। একেবারে শেষ সময়ে ম্যাচ-টাইমার বন্ধ হয়ে যাওয়া আর সেই ‘অতিরিক্ত’ সময়ে ভারতের গোলদুর্গের নীচে শ্রীজেশের পাহাড় ওঠা আজও যেন মিথের পর্যায়ে বলে মনে হয়। চাপ-টেনশন-উদ্বেগকে হারিয়ে সেদিন ইতিহাস লিখেছিলেন শ্রীজেশরা। টোকিও-র মাটিতে যদি অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, তাহলে দেশের বুকে বিশ্বকাপ নয় কেন?
টোকিও অলিম্পিকে সাফল্যের পর ভারতীয় হকির অন্দরে অনেককিছুই বদলে গিয়েছে। হকি ইন্ডিয়ার সর্বোচ্চ পদে এখন দিলীপ তিরকের মতো স্বনামধন্য তারকা। মনপ্রীতের বদলে এখন নেতৃত্বের ব্যাটন হরমনপ্রীতের কাঁধে। বদলায়নি শুধু একটা জিনিসই। দলের মধ্যে একতাবোধটুকু। সেই ঐক্যবোধেই টোকিও-তে সাফল্য এসেছিল। এবার? বিশ্বকাপেও কি টোকিও-র ঝলক দেখতে পাওয়া যাবে? ২৯ জানুয়ারি ভুবনেশ্বরে বিশ্বকাপের ফাইনালে পোডিয়াম-ফিনিশ করছেন হরমনপ্রীতের ভারত, সেই আশাতেই যে বুক বাঁধছে গোটা দেশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.