ফাইল ছবি।
বোরিয়া মজুমদার: ১৯৪৮ সালে লন্ডন অলিম্পিকে হকিতে সোনা জেতার পর ভারতীয় দল বিজয়োৎসব করতে গিয়েছিল ফ্রান্সে। এবার অলিম্পিকের আসর আবার বসছে প্যারিসে। অর্থাৎ, সেই ফ্রান্স। প্যারিস অলিম্পিকই আবার ভারতীয় হকির মহাতারকা পিআর শ্রীজেশের শেষ টুর্নামেন্ট। অলিম্পিকের পরই শ্রীজেশ অবসরে চলে যাচ্ছেন। পরোক্ষ ভাবে তাই ১৯৪৮ অলিম্পিক ঘুরেফিরে চলে আসছে।
ফাইনালের মতো ফাইনাল একখানা হয়েছিল সে বার! তখন সদ্য স্বাধীন হয়েছে ভারত। ফাইনালের প্রতিপক্ষ ছিল গ্রেট ব্রিটেন। যারা ২০০ বছর আমাদের দেশ শাসন করে গিয়েছে। পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটলে জানা যায়, ফাইনালের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত। বরং ফাইনালের আগে দু’দিন ধরে ‘আর্মচেয়ার স্ট্র্যাটেজি’তে নিজেদের নিমজ্জিত রেখেছিল। ভারত এবং গ্রেট ব্রিটেন–দু’টো টিমই বুঝতে পারছিল যে, আবহাওয়াই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। ভারত চাইছিল, ফাইনালের আগের দু’দিন জুড়ে রোদ। ব্রিটিশরা চাইছিল, বৃষ্টি। নিদেনপক্ষে মেঘলা।
হাওয়া দেবতাও ভারত (Indian Hockey Team) নয়, ব্রিটেনকেই আশীর্বাদ করেছিলেন। ফাইনালের আগের দিন ঝেঁপে বৃষ্টি শুরু হয়। ভারতীয় প্লেয়াররা ঠিক করেন, খালি পায়ে তাঁরা নামবেন না। স্টাডেড বুট পরে নামবেন। বলবিন্দর সিং সিনিয়রের বিবৃতি থেকে জানা যায়, ‘১৯৪৮ সালের আগে পর্যন্ত ভারতের বিরুদ্ধে কখনও হকি ম্যাচে খেলেনি ইংল্যান্ড। যত দিন ইংরেজরা আমাদের শাসক ছিল, তত দিন ওরা আমাদের বিরুদ্ধে নামেনি। ’৪৮ ফাইনালে প্রথমবার হকিতে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-ব্রিটেন।’
কিন্তু পরিস্থিতি, প্রকৃতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন, ’৪৮ অলিম্পিক ফাইনাল ৪-০ গোলে জিতেছিল ভারত। পুরনো কাগজ থেকে জানা যায়, গোটা ম্যাচে ব্রিটিশরা দাঁত ফোটাতে পারেনি ভারতীদের দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্সের সামনে। নিখুঁত পাসিং, নির্ভুল বল কন্ট্রোল, পজিশনাল প্লে-র বুদ্ধিমত্তা–সব কিছুতে ইংরেজদের শত হাত পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন ভারতীয়রা। বিরতির সময় নাকি ব্রিটেন বুঝে গিয়েছিল, এ ম্যাচ তারা আর জিতছে না। তাই অসম্মান যাতে না বাড়ে, তাতে মন দিয়েছিল তারা।
শোনা যায়, সেই ফাইনাল জেতার পর যে বন্য উৎসব করেছিলেন ভারতীয় প্লেয়াররা, তা অভূতপূর্ব। সেই বিজয়োৎসব টিভিতে দেখানো হয়েছিল। তৎকালীন সাংবাদিকদের লেখা থেকে জানা যায়, মাঠে যে কয়েক হাজার ভারতীয় ছিলেন, আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। সেই উৎসবে যোগ দিতে মাঠে নেমে পড়েছিলেন ভারতীয় হাই কমিশনার ভিকে কৃষ্ণ মেননও! যিনি কি না ছিলেন লন্ডনে স্বাধীন ভারতের সর্বপ্রথম ভারতীয় হাই কমিশনার। পরে তিনি ইন্ডিয়া হাউসকে সরকারি সংবর্ধনাও দেন সমগ্র ভারতীয় টিমকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.