সোহম দে: দেশজোড়া লকডাউনে অনেক সেলিব্রিটি যখন ব্যস্ত নিজেদের ওয়ার্কআউটের ছবি পোস্ট করতে, তিনি তখন লড়াই চালাচ্ছেন। লড়াই, তাঁর জেলায় যাতে কেউ খালি পেটে না ঘুমোতে যায়। লড়াই, করোনা আক্রান্তরা যাতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পায়।হকি মাঠে তাঁর রূপকথার প্রত্যাবর্তনের উপর তৈরি হয়েছিল ‘সুরমা’ নামক বায়োপিক। যে সিনেমায় তাঁর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দিলজিৎ দোসাঞ্জ, রিল লাইফে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তাঁর রিয়েল লাইফ সংগ্রাম। সেই লৌহ মানসিকতা নিয়েই করোনার বিরুদ্ধেও যুদ্ধে নেমেছেন তিনি। তিনি– প্রাক্তন ভারতীয় হকি অধিনায়ক সন্দীপ সিং (Sandeep Singh)।
শুক্রবার দুপুরে যখন ‘সংবাদ প্রতিদিন’ তাঁকে ফোনে ধরল তখনও সন্দীপ যুদ্ধংদেহী মেজাজে। যিনি বললেন, “আমি ভারতীয়। আর ভারতীয়রা সব সময় সঙ্কটের সময় একে অন্যের পাশে থাকে। আমিও সেটাই করছি। আমার লক্ষ্য একটাই। আমার এলাকায় কেউ খালি পেটে ঘুমোতে যাবে না।” বর্তমানে হরিয়ানার ক্রীড়ামন্ত্রী সন্দীপ। কুরুক্ষেত্রের পেহোয়ার বিধায়ক। বাকি সমস্ত রাজ্যের মতো পেহোয়াও রয়েছে লকডাউনে। আর লকডাউনের মধ্যেও প্রাক্তন হকি মহাতারকা ব্যস্ত জনগণের কাছে খাদ্যসামগ্রী ও মাস্ক পৌঁছে দিতে। সন্দীপ বললেন, “আমি চেষ্টা করছি যাতে কারও কোনও সমস্যা না হয়। খাদ্যসামগ্রী থেকে মাস্ক সবকিছুই পৌঁছে দিচ্ছি লোকেদের কাছে।”
নিজের হকি কেরিয়ারে বহুবার সাফল্যের চূড়োয় উঠেছেন। অলিম্পিকে খেলেছেন। অর্জুন পুরস্কার পেয়েছেন। আবার অন্ধকার দিনও দেখেছেন। ২০০৬ সালে হকি বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় শিবিরে যোগ দিতে যাওয়ার সময় তাঁর কুঁচকিতে গুলি লাগে। যার পর এক বছর হুইলচেয়ার ছেড়ে উঠতে পারেননি। প্রতিদিন কাঁদতেন। একা একা বসে ভাবতেন, কবে আবার হকি স্টিক নিয়ে নামবেন দেশের জার্সিতে। শেষ পর্যন্ত হকির প্রতি আবেগ ও প্রত্যাবর্তনের অদম্য জেদ সন্দীপকে আবার ফিরিয়ে আনে। রূপকথার প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে। নিজের যন্ত্রণার দিন দেখেছেন। আর তাই এমন প্রতিকূলতার সময়ে বাকিদের কষ্টটাও ভাল রকম বুঝতে পারছেন। সন্দীপ বললেন, “আমি নিজে একটা সময় প্রচুর কষ্ট করেছি। তাই বুঝতে পারছি এই পরিস্থিতিতে বাকিদের অবস্থাটা ঠিক কী? আমার জেলার প্রতিটা পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে চাই। সেই কারণে রোজ খোঁজ নিচ্ছি, জেলার হাসপাতালে আমার এলাকার মানুষজন পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে কি না? কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত তার নমুনা হাসপাতালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এ ছাড়াও প্রতিটা সংস্থাকে তাদের নির্দিষ্ট এলাকায় লোকেদের কাছে দৈনন্দিন খাদ্যসামগ্রী পৌঁছনোর দায়িত্বও দিয়েছি।”
সন্দীপের জেলা থেকে হরিয়ানা সরকারের ত্রাণ তহবিলে জমা পড়েছে তেত্রিশ লক্ষ টাকা। আর এ হেন দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে জনতার কাছে একটা আবেদনও রাখছেন সন্দীপ। বলছিলেন, “আমার মতো আপনাদের করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। আপনারা শুধু বাড়িতে থাকুন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। আমরা রাস্তায় আছি। বাকিটা আমরা বুঝে নেব।” প্রকৃত অধিনায়ক আর কাকে বলে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.