স্টাফ রিপোর্টার: সুশীল কুমারের পর অলিম্পিকে পদকজয়ী আর এক খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে এবার বন্ধুকে হত্যার অভিযোগ উঠল। তিনি আর কেউ নন, গত এশিয়া কাপে হকি দলের (Indian hockey) দলের অধিনায়ক তথা অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক জয়ী দলের অন্যতম সদস্য বীরেন্দ্র লাকড়া। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে লাকড়ার বিরুদ্ধে হত্যার গুরুতর অভিযোগ এনে দাবি করা হয়েছে, সিবিআইকে দিয়ে পুরো বিষয়টা তদন্ত করা হোক। মনে করা হচ্ছে, ত্রিকোণ প্রেমের জন্যই এমন করুণ পরিণতির শিকার হয়েছেন ওই ব্যক্তি।
আনন্দ কুমার টপ্পো ছিলেন বীরেন্দ্রর (Birendra Lakra) ছোট বেলার বন্ধু। গত ফেব্রুয়ারিতে ভুবনেশ্বরের এক ফ্ল্যাটে রহস্যজনক ভাবে মারা যান আনন্দ। মারা যাওয়ার দু’সপ্তাহ আগে আনন্দ বিয়েও করেছিলেন। কেন বা কী কারণে মারা গেলেন, তা নিয়ে পুরো পরিবার ধন্ধে রয়েছে। আনন্দের বাবা বন্ধন টপ্পো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ‘ছেলে আত্মহত্যা করেনি। বীরেন্দ্র লাকড়া ও বান্ধবী মনজিৎ টেটে এই মৃত্যুর সঙ্গে পুরোপুরি জড়িত। ওকে মেরে ফেলা হয়েছে।’ এই অভিযোগ পেয়ে ভুবনেশ্বরের ইনফোসিটি থানার পুলিশ হত্যার মামলা দায়ের করেছে। তবে এফআইআর নেয়নি। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বন্ধন টপ্পো। ইনফোসিটি থানার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সমিতা মিশ্র জানিয়েছেন, “অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত যথারীতি চলছে।” সেই সঙ্গে সমিতা আরও বলেছেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমাদের হাতে এসেছে। সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। সেখানে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে উল্লেখ করাও হয়নি। এখন ভিসেরা রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।”
আনন্দের বাবা অবশ্য এই রিপোর্টের সত্যতা মানতে নারাজ। তাঁর মতে, এই রিপোর্ট সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট। তাই তিনি ১১ মে ডিসিপির কাছে মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আলাদা ভাবে আবেদন জানান। সেই আবেদনে তাঁর বক্তব্য ছিল, এফআইআর নেওয়া হোক। সেই সঙ্গে অজ্ঞাত অপরাধের মামলা দায়ের করুন। ১৮ মে বন্ধন সশরীরে সেই ডিসিপির সঙ্গে দেখাও করেছিলেন এবং অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরের দিন অর্থাৎ ১৯ মে তিনি কটক-ভুবনেশ্বর পুলিশ কমিশনারের কাছে আলাদা একটা আবেদনপত্র জমা দেন।
এক সাক্ষাৎকারে বন্ধন বলেছেন, “পাশাপাশি থাকার সূত্রে লাকড়ারা ছিল আমাদের প্রতিবেশী। তাই ছোটবেলা থেকে আমার ছেলের বন্ধু। ২৮ ফেব্রুয়ারি লাকড়া আমার ছেলেকে ভুবনেশ্বরের ফ্ল্যাটে ডেকে পাঠায়। কিছুক্ষণ পরে শুনি অচৈতন্য অবস্থায় ছেলেকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। তারপর শুনলাম মারা গিয়েছে। লাকড়ার কাছে জানতে চাই, কী কারণে এমন ঘটল? পরের দিন লাকড়া আমাকে ভুবনেশ্বরে আসতে বলে। সেখানে গেলে স্থানীয় থানায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। থানার অফিসার আমাকে বলেন, ছেলে আত্মহত্যা করেছে। অথচ কোনও সুইসাইড নোট লিখে যায়নি।”
বন্ধন আরও বলেন, “আমাকে আনন্দের মৃতদেহ দেখানো হয়। তবে অনেক বলাবলি করার পর। প্রথম দেখাতেই ওর গলায় হাতের ছাপ দেখতে পেয়েছিলাম।” তিনজন নয়, সেই ফ্ল্যাটে ছিল চারজন ব্যক্তি বলে দাবি করছেন বন্ধন। এই চতুর্থ ব্যক্তিকে আড়াল করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বন্ধন। তাহলে কি আনন্দের সঙ্গে মনজিতের কোনও সম্পর্ক ছিল?
এই প্রশ্নের জবাবে বন্ধন বলেন, “ওরা সকলে ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে পড়াশুনো করত। কোনওদিন আনন্দের সঙ্গে মনজিতের কোনও সম্পর্ক ছিল বলে শুনিনি। তাই এই বিষয়ে বলাটা ঠিক হবে না।” বন্ধনের অভিযোগ, পুলিশের কাছ থেকে প্রকৃত সাহায্য পাচ্ছেন না। ওড়িশা পুলিশের ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার লাকড়া। সত্যিটা তাই চেপে দেওয়া হচ্ছে। কিছু রিপোর্ট তুলে ধরে বন্ধন দাবি করেছেন, আসল রহস্য উদ্ঘাটন করতে হলে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করা হোক। বন্ধনের আরও অভিযোগ, ছেলে আনন্দ ক্রমে ঘনিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন মনজিতের সঙ্গে। যা মোটেই ভালভাবে মেনে নিতে পারেননি লাকড়া।
গত নভেম্বর মাসে আনন্দকে নাকি এই নিয়ে সাবধান করে দিয়েছিলেন টোকিও অলিম্পিকের ব্রোঞ্জ পদক জয়ী। তিহার জেলে এখনও বন্দি রয়েছেন অলিম্পিকে জোড়া পদক জয়ী কুস্তিগির সুশীল কুমার। এবার লাকড়াকে কি সেই পথে চলে যেতে হবে? এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.