ফাইল ছবি।
ভারতীয় হকির সেরাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। প্যারিস অলিম্পিকের পরেই তুলে রাখবেন হকি স্টিক। জীবনের শেষ মেগা টুর্নামেন্টের নামার আগে পি আর শ্রীজেশ (PR Sreejesh ) একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সংবাদ প্রতিদিন. ইনকে। শুনলেন বোরিয়া মজুমদার।
প্রশ্ন: টোকিও অলিম্পিকের পরে যখন আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তখন ভাবিনি যে প্যারিসের আগে আবার কথা হবে। এটা আপনার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আর দাঁতে দাঁত চাপা লড়াইয়ের নিদর্শন।
শ্রীজেশ: আপনি কি আমাকে এখানে দেখতে চাননি নাকি? তবে সত্যি বলতে, আমি নিজেও ভাবিনি এটা। টোকিওতে ওই গোলপোস্টের সামনে যখন বসেছিলাম, তখন জানতাম না যে চার বছর পরে আবার দেশের জার্সিতে আবার নামার সুযোগ পাব। আবার আমাদের সামনে সেই সুযোগ এসেছে। আমি দলের (Indian Hockey Team) সকলকে বলি, এত ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে যেন আমাকে সবাই ছাপিয়ে যায়। দল হিসাবে তো সেটাই সকলের কাছে প্রত্যাশিত। প্যারিসের জন্য নিজেদের সেরা প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন নিজেদের প্রসেসের উপর ভরসা রেখে একটা করে পদক্ষেপ এগোতে চাই।
প্রশ্ন: প্যারিস নিয়ে আলোচনার আগে টোকিও নিয়ে একটা প্রশ্ন করি। আপনারা ইতিহাস গড়া থেকে মাত্র ৬ সেকেন্ড দূরে ছিলেন। সেটা কি আপনার কেরিয়ারের সবচেয়ে টেনশনের ৬ সেকেন্ড? জার্মানির বিরুদ্ধে ওই ম্যাচেই কি জীবনে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে গিয়েছিলেন?
শ্রীজেশ: আপনার নিশ্চই মনে আছে, প্রায় ১৫ সেকেন্ডের মতো গণ্ডগোল ছিল ওই ম্যাচের ঘড়িতে। তা না হলে ম্যাচটা আগেই শেষ হয়ে যেত। ততক্ষণে পদকও জিতে জেতাম। বিষয়টা এমনই ছিল, একচুল ভুলের জন্য হয়তো হাতছাড়া হত পদক। নিজেকে বারবার বলছিলাম, যাই হয়ে যাক না কেন বল যেন আমাকে পেরিয়ে গোল পর্যন্ত যেতে না পারে। অবশ্যই সাংঘাতিক চাপ ছিল। কিন্তু এই চাপ সামলেই তো আমাদের খেলতে হয়। খেলোয়াড় হিসাবে একটাই স্বপ্ন থাকে- দেশের জন্য কিছু করব। সেটা করতে পেরে আমি খুব খুশি।
প্রশ্ন: এবারে ভারতের অলিম্পিক দলে অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের দুরন্ত মিশ্রণ আছে। সাম্প্রতিক ফর্ম যাই হোক না কেন, শারীরিক এবং মানসিকভাবে সকলেই মাঠে নামার জন্য তৈরি?
বোরিয়া: সাম্প্রতিক ফলাফল বলতে আমাদের অস্ট্রেলিয়া সফরের কথা বলতে হয়। সেখানে আমরা উন্নতির জন্যই নতুন ধরণের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। আমরা যেন সেরাটা নিয়ে তৈরি হতে পারি সেই জন্যই ওই বিষয়গুলো দরকার ছিল। গোটা দল অনেক পরিশ্রম করেছে ট্রেনিংয়ের সময়ে। সবদিকে নজর রেখেছেন কোচ ক্রেগ ফুলটন। আমরা সমস্ত দিক দিয়েই প্যারিসের জন্য তৈরি। দলের সকলেই জানে যে অলিম্পিক হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা। একটা ম্যাচও আমাদের জন্য সহজ হবে না। সেরা প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবে প্রত্যেকটা দলই। তবে সেটাই এই প্রতিযোগিতার বৈশিষ্ট্য। সেরা মঞ্চে ভালো খেলার তাগিদ নিয়ে নামে সকলে। এটুকু বলতে পারি, নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব আমরা।
প্রশ্ন: আপনি কোচের নাম উল্লেখ করলেন, তাহলে ওঁর সম্পর্কেও কিছু বলুন। বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। সকলেই তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
শ্রীজেশ: উনি যেসমস্ত টিমকে কোচিং করিয়েছেন তারা বিশ্বমঞ্চে পদক জিতেছে। তাই উনি জানেন কীভাবে কাজ করতে হয়। এরকম কাউকে সঙ্গে পেলে অবশ্যই খুব সুবিধা হয়। ক্রেগের মতো মানুষ কোনও কিছুই ভাগ্যের হাতে ছাড়তে চায় না। প্রত্যেকটা পরিস্থিতির জন্য আমাদের তৈরি করেছেন-সেটাই ওঁর সবচেয়ে বড় গুণ। ক্রেগের মতো শান্ত মানুষকে প্যারিসে (Paris Olympics 2024 ) আমাদের সঙ্গে পাওয়াটাও খুব ভালো।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। অলিম্পিক মানেই প্রচণ্ড চাপ। কে ভালোভাবে চাপ সামলাতে পারল, কে মানসিকভাবে শক্তিশালী। আপনারা আগেও সকলকে দেখিয়েছেন যে এই দল চাপ সামলাতে পারে।
শ্রীজেশ: খেলাধুলো মানেই তো চাপ। যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ তত বেশি চাপ, এটা তো মেনে নিতেই হবে। সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া বা চোখ বুজে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। তবে একবার চাপটা স্বীকার করে নিলে, সেটা কাটিয়ে ওঠার উপায় বের করা যায়। সেখানেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় মানসিক শক্তির। প্যারিসেও চেষ্টা করব ভালোভাবে চাপ সামলে খেলতে। আমরা জানি, গোটা দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। টোকিওতে পদক জিতেছিলাম, এবারেও আমাদের উপর আশা করেছেন দেশবাসী। দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়, সাপোর্ট স্টাফ জানেন সেকথা। সেজন্যই বলছি, আমরা সেরা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। অলিম্পিকে নিজেদের সেরাটাই দেব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.