গুজব ছিল আন্দোলন ছেড়ে তাঁরা ফিরে গেছেন রেলের চাকরিতে। ইতিমধ্যে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও। অতএব যে আন্দোলনের জল গড়িয়েছিল হরিদ্বারের গঙ্গা পর্যন্ত, সে সবে আপাতত ইতি। কিন্তু সত্যিই কি তাই? বিতর্কের আবহে সংবাদ প্রতিদিন-এর কাছে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন তারকা কুস্তিগির সাক্ষী মালিক, শুনলেন অরিঞ্জয় বোস।
‘কে বলেছে আমরা আন্দোলন থেকে সরে গেছি?’- ফোনের ওপারে তাঁর গলা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রশ্নটা বিভিন্ন মহল থেকেই উঠছিল। নিজেদের আন্দোলনকে যে পর্যায় নিয়ে গিয়েছিলেন সাক্ষীরা, সেই জায়গা থেকে কি তাঁরা সরে দাঁড়িয়েছেন? প্রশ্নটি অবশ্য অমূলকও ছিল না। হরিদ্বারের গঙ্গায় যেদিন তাঁরা পদক ভাসাতে গিয়েছিলেন, সারা দেশ তাঁদের দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে ছিলেন। একটা কথাই গুমরে গুমরে উঠছিল দেশবাসীর মনে, এই কি প্রাপ্য ছিল সাক্ষী- ভিনেশদের? নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিন, যখন দিল্লি পুলিশ সরিয়ে দিল তাঁদের, আর মাটিতে পড়ে রইলেন ভারতের সোনার মেয়েরা, তখন থেকেই মনে মনে ফুঁসে উঠেছিল গোটা ভারত। সকলেই ভরসা রেখেছিল তাঁদের আন্দোলনের জোরের উপর, অবস্থানের দৃঢ়তার উপর।
এরপর ঘটনা প্রবাহ দ্রুত বদলাতে থাকে। বালেশ্বরের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী (Sakshi Malik) থাকল গোটা দেশ। কুস্তিগিররা কেন্দ্রকে দেওয়া তাঁদের নির্ধারিত সময়সীমা বাড়িয়ে দেন। এর মধ্যেই দেখা যায় সাক্ষীরা ফিরে গিয়েছেন তাঁদের রেলের চাকরিতে। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন তাঁরা। আর তারপরেই আন্দোলনের গতি যেভাবে স্তিমিত হয়ে পড়ল, তাতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আর সেই প্রশ্নটাকেই প্রতিপক্ষ কুস্তিগিরের মতো ধরাশায়ী করলেন সাক্ষী। সাফ জানালেন, “আমরা আমাদের আন্দোলন থেকে এক পা-ও সরিনি। রেলের কিছু ফাইল সই করার জন্যই কাজে যোগ দিয়েছি। তার মানে এই নয় যে আন্দোলন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি, তিনি পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের তদন্তে সহযোগিতা করার কোথাও বলেছেন, আমরা তা নিশ্চয়ই করব। তবে আমরা আমাদের দাবিতে অনড়। ফেডারেশন সভাপতি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন যেমন চলছিল তেমনই চলবে।”
সাক্ষী এখানেই থেমে থাকেননি। টুইট করে নিন্দুকদের একহাত নিয়েছেন। আক্রমণাত্মক সাক্ষী টুইটে লিখেছেন, ”আমাদের জেতা মেডেলকে পনেরো-পনেরো টাকার বলে এতদিন যাঁরা সরব ছিলেন, তাঁরাই এখন আমাদের চাকরি নিয়ে পড়েছেন। আমরা আজ বিপন্ন, চাকরি তো এর কাছে খুবই মামুলি একটা ব্যাপার। ন্যায়বিচারের আশায় আমরা লড়ছি, যদি দেখি চাকরি এর অন্তরায় হয়ে উঠেছে, তাহলে তা ছাড়তে দশ সেকেন্ডও সময় নেব না। চাকরির ভয় আমাদের দেখাবেন না।”
যেরকম দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেদের অবস্থানের কথা সাক্ষী বললেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে তাঁরা আন্দোলনের মাটি ছেড়ে কোথাও যাবেন না। ন্যায়বিচারের জন্য যে আওয়াজ তাঁরা তুলেছেন, তাঁদের মধ্যে যে আশার আলো দেখেছে গোটা দেশবাসী, তা কিছুতেই নিভতে দেবেন না সাক্ষীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.