অর্ণব আইচ: স্বামী বিবেকানন্দর প্রেরণায় তিনি মন একাগ্র করেন। এরপর ট্রিগারে রাখেন আঙুল। পিস্তল থেকে গুলি ছুটে অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ করে। রাজ্য পুলিশে ‘শার্প শুটার’ বলে পরিচিত আইপিএস অঞ্জলি সিং প্রতিনিয়ত কলকাতায় শুটিং প্র্যাকটিস করেন স্বামীজির প্রেরণা নিয়ে। একইসঙ্গে তিনি শুটিং শেখান পুলিশের কমান্ডো বিশেষ বাহিনীর আধিকারিকদেরও। হেস্টিংসের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে রয়েছে শুটিং রেঞ্জ। সেখানে শুটিং অভ্যাস করেন পুলিশকর্তা ও পুলিশ আধিকারিকরা। বিশেষ করে কমান্ডো ও বিশেষ বাহিনীর আধিকারিক ও পুলিশকর্মীদের শুটিংয়ের অভ্যাস বজায় রাখতেই হয়।
এখানেই ডিআইজি (সাইবার ক্রাইম উইং) অঞ্জলি সিং সপ্তাহে অন্তত দু’দিন শুটিং প্র্যাকটিস করেন। তার মধ্যে একদিন কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের আধিকারিকদের শুটিংয়ের প্রশিক্ষণ দেন। সিমুলেশন ও রিয়েল, দু’ভাবেই প্র্যাকটিস হয়। নাইন এমএম পিস্তল ও অন্য পিস্তলেও অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ করেন অঞ্জলি সিং। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে অঞ্জলি ভোপালে ৬৬তম জাতীয় প্রতিযোগিতায় ১০ মিটার এয়ার ও আইপিএস অঞ্জলি সিং। পিস্তলে ‘রিনাউন্ড শুটার’ পদক লাভকরেন। ২০২৪ সালে ইস্টার্ন জোন শুটিং প্রতিযোগিতায় ২৫ মিটার স্পোর্টস পিস্তলে ব্রোঞ্জ জয়ী হন অঞ্জলি সিং।
সম্প্রতি শুটিং প্রশিক্ষণের সময় ‘ছাত্রছাত্রী’দের স্বামীজির একটি গল্পও শোনান অঞ্জলি সিং। একবার চলার পথে স্বামীজি দেখেন, কয়েকজন কিশোর একটি বন্দুক নিয়ে লক্ষ্যভেদের খেলায় মেতেছে। তারা একটি সেতুতে দাঁড়িয়ে জলে ভেসে যাওয়া ডিমের খোলায় লক্ষ্যভেদের চেষ্টা করছে। স্বামীজির ইচ্ছা হল, তিনিও লক্ষ্যভেদ করবেন। সবার প্রশ্ন, স্বামীজি কি কখনও শুটিং প্র্যাকটিস করেছেন যে এখন করতে পারবেন? কিন্তু স্বামীজি যে অনড়। তিনি হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার পর অন্যদের থেকেও অনেক ভালো লক্ষ্যভেদ করলেন। ফের সবার প্রশ্ন, স্বামীজি কীভাবে শুটিংয়ে সাফল্য পেলেন? স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ফোকাস, অর্থাৎ একাগ্রতাতেই লক্ষ্যভেদ হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (সাইবার ক্রাইম উইং) অঞ্জলি সিং জানান, আইপিএস ট্রেনিংয়ের সময় থেকেই শুটিং তাঁর অত্যন্ত পছন্দের। একই সঙ্গে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত। তিনি স্বামীজির বই পড়তে ভালবাসেন। স্বামী বিবেকানন্দই অঞ্জলির প্রেরণা। আর সেই প্রেরণা থেকেই প্রশিক্ষণের সময় অঞ্জলি তাঁর কমান্ডো ও বিশেষ বাহিনীর ছাত্রছাত্রীদের বলেন, “যেখানে স্বামীজি শুটিং না শিখেও এত ভাল শুট করতে পেরেছেন, সেখানে আমরা শিখে পারব না কেন? স্বামীজির কাছ থেকে আমরা প্রেরণা পেয়েছি। আমরা অবশ্যই পারব। একাগ্রতা থাকলে একশো শতাংশ সাফল্য আসবে।” অঞ্জলির মতে, শুটিংয়ের জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। তার জন্য একশো শতাংশ ‘ফোকাস’ করতে হবে। একাগ্রতার জন্য মনকে শান্ত রাখতে হবে। তখন মাথায় অন্য কোনও ভাবনা বা চিন্তা রাখা চলবে না। তবেই একাগ্রতার দ্বারা সাফল্য আসবে। চেষ্টা করতে হবে। আর কাজ করলে ফল পাওয়া যাবেই। কখনও শুটিংয়ের ছাত্ররা অঞ্জলি সিংকে জিজ্ঞাসা করেন, শুটিংয়ের সময় তাঁদের টেনশন হয়। তা কীভাবে দূর করবেন? পদস্থ পুলিশ আধিকারিক ছাত্রছাত্রীদের বলেন, “লক্ষ্যভেদ হবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই টেনশন হয়। তখনই বোঝা যায়, শুটার ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। সেই ভয়কে কাটিয়ে উঠতে পারলেই শুটিংয়ে আসবে সাফল্য।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.