শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: ‘বেটা কাবিল বন কাবিল, কামিয়াবি ঝক মারকে পিছে আয়েগি।’ ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে আমির খানের সেই বিখ্যাত সংলাপটাই আজ দেশবাসীকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন স্বপ্না বর্মন। অর্থ-কড়ি, সুযোগ-সুবিধা তেমন কিছুই ছিল না। জলপাইগুড়ির পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষপাড়ার মেয়েটির নিজের বলতে ছিল দু’চোখ ভরা স্বপ্ন আর কঠোর পরিশ্রম। আর ছিল পরিবার ও এলাকার বাসিন্দাদের আশীর্বাদ। সেই নিয়েই জাকার্তা পাড়ি দিয়েছিলেন। শারীরিক অসুস্থতাকেও তোয়াক্কা করেননি। তখন শুধুই দেশকে পদক এনে দেওয়ার স্বপ্ন তাঁর চোখে। আর স্বপ্নের ডানায় ভর করেই দৌড় শুরু করেছিলেন। গন্তব্যে পৌঁছতেই সোনার মেয়ে হয়ে উঠলেন স্বপ্না।
Many Congratulations to #SwapnaBarman on winning the first ever GOLD MEDAL for #India in Heptathlon at the #AsianGames #IndiaAtAsianGames pic.twitter.com/DGlCR2horF
— Babul Supriyo (@SuPriyoBabul) August 29, 2018
Heartiest congratulations to @Swapna_Barman96 our heptathlon queen from India and Bangla, on winning the gold at the Asian Games. You have made us very proud
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 29, 2018
ছোটবেলা থেকেই ঘোষপাড়ার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটির খেলার প্রতি ভালবাসা নজর কেড়েছিল স্থানীয়দের। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, আশা ছিল, ঘরের মেয়ে একদিন বিশ্ব মঞ্চে দেশের নাম উজ্জ্বল করবেন। সেই দিনটা যে এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে ভাবেবনি পরিবারের লোকেরা। বাবা পঞ্চানন বর্মন ও মা বাসনা বর্মনের আনন্দে চোখে জল। এতদিনে পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন মেয়ে। ইতিহাস গড়ে হেপ্টাথলনে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। পরিবার ও পাড়ায় আজ উৎসবের আমেজ। গোটা দেশ থেকে শুভেচ্ছা এসে পৌঁছেছে। টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু ট্র্যাকে তাঁকে দেখে কে বলবে, এতখানি যন্ত্রণা লুকিয়ে রেখেছিলেন নিজের ভিতর।
যাঁরা টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন তাঁরা জানেন, স্বপ্নার মুখে কখনও লাল কখনও নীল রংয়ের ব্যান্ডেড লাগানো ছিল। আসলে দাঁতের যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তিনি। কিন্তু তাই বলে তো আর স্বপ্নকে দূরে ঠেলে দেওয়া যায় না। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার শক্তি জুগিয়েছে তো সেই একটা জিনিসই। মঙ্গলবার চারটি ইভেন্টে স্বপ্নার ঝুলিতে এসেছিল ৩৪৮১ পয়েন্ট। আর এদিন ৬০২৬ পয়েন্ট নিয়ে একটি ইভেন্ট বাকি থাকতেই সোনা নিশ্চিত করে ফেলেন তিনি। জাকার্তায় যাওয়ার আগেও বারবার চোটে জর্জরিত হয়েছে স্বপ্নার কেরিয়ার। কোমরের জটিল রোগে কখনও ভেঙে পড়েছেন তো কখনও পায়ের ব্যথায় কাতর হয়েছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। দমেনি মনোবল। আর তাই তো শেষমেশ সাফল্য এল ‘ঝক মারকে’। জাতীয় ক্রীড়া দিবসেই এশিয়ান গেমসে বাংলার সোনার দৌড় শুরু করলেন স্বপ্না। হয়ে উঠলেন আগামীদের অনুপ্রেরণা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.