রাজা দাস, বালুরঘাট: উদ্বোধনের পর তিনদিন কেটে গিয়েছে। এখনও সিঁড়ির নিচেই পড়ে রয়েছে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্রোঞ্জের মূর্তি। অনুমতি ছাড়া সরকারি জমিতে মূর্তিটি বসাতে না পারায় ক্রমশ বিতর্কের জালে আরও জড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বেসরকারি ক্রীড়া সংস্থা। কারণ মূর্তিটি যেখানে রাখা হয়েছে সেই সংস্থার অফিসের সিঁড়ির নিচে ব্রোঞ্জের উপর ধুলো-ময়লা জমতে পারে। চারপাশে কোনও কড়া সুরক্ষা বা নজরদারির ব্যবস্থা নেই। স্বভাবতই চাইলে যে কেউ আঁচড় দিতে পারে মূর্তিতে। বস্তুত এই কারণে সময় যত গড়াচ্ছে ততই উঠে আসছে সৌরভের মূর্তি বসানোর উদ্যোক্তা ক্রীড়া সংস্থার চূড়ান্ত গাফিলতি এবং জেলার রাজনৈতিক টানাপোড়েনের জটিল চিত্র। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের তরফে সোমবার স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, “উদ্যোক্তা সংস্থার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা ও মূর্তি বসানোর জন্য আইন মেনে সরকারি জমির অনুমতি না নেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
ক্রীড়াপ্রেমীদের অভিযোগের কাঠগড়ায় বাম শরিক আরএসপির নিয়ন্ত্রণে থাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থা। দফায় দফায় রাজ্য স্পোর্টস কাউন্সিল ও জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়ার জন্য সতর্ক করলেও অভিযুক্ত ক্রীড়া সংস্থা বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। এখানেই শেষ নয়, স্থানীয় এক মহিলা ক্রীড়াপ্রেমীর অভিযোগের ভিত্তিতে স্পোর্টস কাউন্সিল চিঠি দিয়ে উদ্যোক্তা সংস্থার ‘নথিপত্র সঠিক নয়’ বলে জানিয়ে দিয়েছিল। বাম আমলে সরকারের কাছ থেকে লিজে জমি নিয়ে ক্রীড়া সংস্থা তৈরি করে মাথায় বসা শরিক নেতাদের অবিলম্বে বৈধ নথি জেলা প্রশাসনকে জমা দিতেও বলেছিল স্পোর্টস কাউন্সিল। কিন্তু শাসকদলের জেলার নেতাদের একাংশের মদতে বাম শরিক দলের এই সমস্ত নেতারা রাজ্য স্পোর্টস কাউন্সিল ও প্রশাসনের সেই সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি। তবে মহারাজ সৌরভের উপস্থিতিতে ভিড় ও আইন-শৃঙ্খলা সামলাতে উদ্বোধনে হাজির ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার। যেহেতু সংস্থার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এবং সরকারি অনুমতি নেয়নি তাই জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হয়েও সৌরভের মূর্তি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে হাজির হননি স্বয়ং জেলাশাসক সঞ্জয় বসু। এদিন দেশের অন্যতম ক্রিকেট আইকনের মূর্তি সিঁড়ির নিচে থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলাশাসক বলেন,“ কোনও মন্তব্য নয়। বিতর্ক নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলুন।”
প্রবল বিতর্কের মধ্যে নিজেদের গাফিলতির কথা এদিন প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের পরিচিত আরএসপি নেতা ও ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক গৌতম গোস্বামী। বলেন, “হয়তো মূর্তি বসানোর আবেদন জানানোর পদ্ধতিগত ত্রুটিতেই অনুমতি মেলেনি। এবার নিয়ম মেনে জেলাশাসকের মাধ্যমে ফের রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে। যতদিন অনুমতি না পাওয়া যাবে ততদিন মূর্তিটি এভাবেই রাখা হবে।” বিতর্ক এতটাই ঝড় তুলেছে যে বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর ছাড়াও বীরভূমের সংস্থাও মূর্তিটি নিজেদের দায়িত্বে সরকারি অনুমতি নিয়ে বসাতে চেয়েছে বলে এদিন গৌতমবাবু দাবি করেছেন। সৌরভের মূর্তি উদ্বোধনের কর্মসূচিতে ঘটনার দিন জেলার মন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা উপস্থিত থাকলেও প্রথম থেকেই তিনিও সরকারি অনুমতি নেওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই পরামর্শে কেউ কোনও গুরুত্ব দেয় নি। এদিন রাতে বালুরঘাটে আরএসপির এক প্রবীণ নেতা স্বীকার করেন,“বাম জমানায় এই ক্রীড়া সংস্থা তৈরি হলেও এখন রাজ্য সরকারের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নথি নেই। মন্ত্রীর পরামর্শ মেনে যদি নথি সংশোধন করে এবং জমির অনুমতি নেওয়া হত তবে সৌরভের মূর্তিকে এমনভাবে সিঁড়ির নিচে রাখতে হত না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.