দুলাল দে: একটা সময় মনে হয়েছিল, সামনের মরশুমে বোধহয় আর দেখাই যাবে না আইএসএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি পুণে সিটি এফসিকে। বেশ কিছুদিন ধরেই আর্থিক সমস্যায় ভুগছে আইএসএলের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি। তাই ঠিক হয়েছিল, মুম্বই সিটি এফসির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে পুণেকে। কেন না, তখন পরিকল্পনা ছিল, কলকাতা থেকে আসবে ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান-এটিকে মিলিয়ে অপর দল। এভাবেই পরিকল্পনা হয়েছিল সামনের মরশুমে আইএসএলের দশ দলের। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান যেহেতু পরের আইএসএলে খেলছে না, তাই পুরো পরিকল্পনাটাই বদলে ফেলতে হয়েছে সংগঠকদের।
আইএসএলের দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি পুণে সিটি এফসি এবং দিল্লি ডায়নামোস কেন আর্থিক সংকটে ভুগছে তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কর্তারা প্রথম যে দিকটা খুঁজে পেয়েছেন, তা হল দুটো ফ্র্যাঞ্চাইজির খেলাতেই মাঠে দর্শক আসছে না। পুণে সিটি এফসি হোম ম্যাচ খেলছে পুণের বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামে। আর দিল্লি ডায়নামোস খেলছে দিল্লির নেহেরু স্টেডিয়ামে। বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামে ফুটবল দর্শক খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। যে সমস্যায় একটা সময় ভুগেছিল আই লিগের দল পুণে এফসিও। পরে আই লিগ থেকে নাম তুলে ক্লাব বন্ধ করে দেয় পুণে। এখনও আইএসএলে খেলতে গিয়ে একই সমস্যায় ভুগছে পুণে সিটি এফসি। গেট সেল থেকে সেভাবে অর্থই পাচ্ছেন না ক্লাব কর্তারা। একই সমস্যায় ভুগছেন দিল্লি ডায়নামোসের কর্তারাও।
দিল্লিকে খেলতে হচ্ছে নেহেরু স্টেডিয়ামে। যেখানে জাতীয় দলের খেলা থাকলেই মাঠ ভরানো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে আইএসএলে দিল্লির খেলায় মাঠ একদমই খালি থাকছে। সংগঠকদের ব্যাখ্যা হল, নেহেরু স্টেডিয়ামে লোক আনা মুশকিল। দিল্লির কর্তারাও আইএসএলে হোম গ্রাউন্ড হিসেবে আম্বেদকর স্টেডিয়ামকেই ঠিক করেছিলেন। কিন্তু সেখানে সারা বছর কিছু না কিছু সরকারি অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। তার উপর আইএসএলে স্টেডিয়ামগুলোয় যে যে পরিকাঠামো থাকা উচিত, সেটাও পাচ্ছে না দিল্লি ডায়ানামোস। পুণের মতো দিল্লি ডায়নামোসও ঠিক করেছে, পরের আইএসএল থেকে নিজেদের অন্য রাজ্যের মাঠকে নিজেদের হোম গ্রাউন্ড বানাবে। এই ভাবনা থেকেই পুণে এবং দিল্লি নিজেদের হোম ম্যাচগুলি খেলবে অন্য রাজ্য থেকে।
নিজেদের হোম গ্রাউন্ড খুঁজতে নেমে দুটো দলেরই নজর তিনটি রাজ্যের দিকে। গুজরাট, হায়দরাবাদ এবং ওড়িশা। আমেদাবাদ, গাচ্চিবাউলি এবং ভুবনেশ্বরে গিয়ে নিজেদের হোম গ্রাউন্ড করার জন্য পরিকাঠামোও দেখে এসেছেন সংগঠকরা। বুঝতে চাইছেন, ভিনরাজ্যের কোন স্টেডিয়ামে খেললে, মাঠে দর্শকদের সমর্থন পেতে সুবিধে হবে। সেক্ষেত্রে পরের মরশুম খেকে দিল্লি, পুণে নিজেদের নামেই খেলবে অন্য রাজ্য থেকে। তবে আইএসএলের এই ডামাডোলের মধ্যেই ঠিক হয়েছে, পরের মরশুমে সুপার কাপ দিয়েই শুরু হবে ফেডারেশনের ফুটবল ক্যালেন্ডার।
গত দু’মরশুমে দেখা গিয়েছে আইএসএল কিংবা আই লিগ শেষ হওয়ার পর সুপার কাপ খেলতে গিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ক্লাবগুলি। সে আইএসএলের ক্লাব হোক কিংবা আই লিগ। আইএসএল হয়ে যাওয়ার পর বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজিই খরচ বাঁচানোর জন্য তাদের বিদেশি ফুটবলারদের ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে সুপার কাপে খেলতে আসছে ভাঙা দল নিয়ে। সেরকম অবস্থা আই লিগের ক্লাবগুলিরও। যেন অংশগ্রহণ করতে হয় বলে করা। তারমধ্যে এবার তো আই লিগের ৭টা দল সুপার কাপে অংশগ্রহণই করল না। তাই পরিকল্পনা হয়েছে, যদি সুপার কাপ দিয়ে মরশুম শুরু করা যায়, তা হলে আই লিগ কিংবা আইএসএলের সব দলই পূর্ণশক্তি নিয়ে খেলতে পারবে।
সুপার কাপ শুরুতে করার পিছনে আরও একটা কারণও রয়েছে। আইএসএলের শুরুর আগেই সুপার কাপ করলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির কিছুটা খরচও কমতে পারে। প্রি সিজনে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলার জন্য বেশিরভাগ দলকেই বিদেশে যেতে হয়। ফলে খরচের পরিমাণটাও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর জন্য অনেকটাই বেড়ে যায়। সুপার কাপ হলে আইএসএল শুরুর আগেই আইএসএল-আই লিগ উভয় লিগের দলগুলিই ভাল প্র্যাকটিস ম্যাচ পেয়ে যাবে। যা লিগের প্রস্তুতিতে কাজে দেবে।
তবে সুপার কাপ শুরুতে করলে প্রশ্ন উঠছে, গ্রুপ বিন্যাস কী ভাবে হবে? কোন ৬টা দল মূলপর্বে খেলবে আর কোন ৪টে দল খেলবে বাছাইপর্বে? আপাতত যে আলোচনা হয়েছে, তাতে ঠিক হয়েছে, এই মরশুমে আইএসএল আর আই লিগে যে ৬টি দল প্রথম দিকে থেকেছে, তারাই পরের মরশুমের সুপার কাপে মূলপর্বে খেলবে। ফলে কলকাতার দুই দল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান খেলবে সুপার কাপের মূলপর্বেই। আর আই লিগের মিনার্ভা, নেরোকার মতো আইএসএলের পুণে, কেরালা ব্লাস্টার্সরা খেলবে সুপার কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে। সুপার কাপ শুরুর জন্য ফেডারেশনের ক্যালেন্ডারে সময় ধরা হয়েছে, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ। চলবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তারপরই শুরু হবে আই লিগ এবং আইএসএল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.