সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৯ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে খুন করার পর আত্মঘাতী মিউনিখের হামলাকারী জঙ্গি৷ শপিং মলে হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের হাতে ধরা পড়া নিশ্চিত জেনে নিজের মাথায় গুলি চালায় আলি সনবলি নামে ১৮ বছরের ওই জঙ্গি৷ ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে৷
জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক মাস আগে আলি ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করেছিল ভুয়া নামে৷ তাতে থাকত ১৬ থেকে ২০ বছরের মেয়েদের ছবি৷ সবাই ভাবত স্কুল-কলেজে পড়া একটা নিরীহ মেয়ে যে গান গায়, মডেলিং করে আর প্রেম বা বন্ধুত্ব করতে চায়৷ খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেয়ে৷ ওভারস্মার্ট ঠিকই কিন্তু বিপজ্জনক নয় নিশ্চয়৷ আর হলেই বা ওইটুকু মেয়ে কতটাই বা বিপজ্জনক হবে? তাই তার ডাকে যারা বন্ধুত্ব আর প্রেমে সাড়া দিয়েছিল তারা তখনও জানে না কী দুর্দান্ত বিস্ময় অপেক্ষা করছে তাদের জন্য৷ শুধু বিস্ময়? তারা এও জানে না, তাদের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে কী ভয়ংকর বিপদ, একেবারে মৃত্যুর হাতছানি৷
ফেসবুকে অনেককে ‘পোক’ করত আলি৷ নানা গেমস খেলার লিঙ্ক ও গেম রিকোয়েস্ট পাঠাত৷ যারা তার ডাকে সাড়া দিত তাদের মধ্যে সম-মানসিকতার ‘শিকার’কে বেছে নিত সে৷ শিকারদের মধ্যে থাকত সাদা চামড়ার জার্মান মেয়ে বা ছেলেরাই৷ সম্প্রতি ওই ফেসবুক-বন্ধুদেরকে আলাদা আলাদা করে নেমন্তন্ন করে৷ কিন্তু সবাইকে ‘একই’ জায়গায় দেখা করতে বলে৷ শিকাররা এসে পৌঁছতেই এলোপাথাড়ি গুলি চালায় সনবলি৷ নিহত ৯ জনের মধ্যে চার-পাঁচজন ছিল তার ফেসবুকের বন্ধু৷
মিউনিখ পুলিশকে উদ্ধৃত করে বিবিসি ও সিএনএন জানিয়েছে, মিউনিখের ‘অলিম্পিয়া আইনকাউফ সেন্থম’ নামে ওই শপিং সেন্টারের মধ্যে রয়েছে ম্যাকডোনাল্ডস রেস্তোরাঁ৷ সেখানে গুলি করে চারজনকে মারে ১৮ বছরের জার্মান মুসলিম তরুণ আলি সনবলি৷ ইরানি বংশোদ্ভূত এই জার্মান তরুণ গুলি করে মারার আগে জার্মানির অভিবাসন আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল৷ তারপর ‘আল্লা হু আকবর’ বলে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ম্যাকডোনাল্ডস রেস্তোরাঁর সামনে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েন দু’জন তরুণী ও দু’জন তরুণ৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, মেয়েদের ছবি দিয়ে ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে বন্ধুত্ব করত নানা বয়সের মহিলা ও পুরুষদের সঙ্গে৷ তাদেরই কয়েকজনকে নেমন্তন্ন করে কথা দিয়েছিল ম্যাকডোনাল্ডসে খাওয়ানোর৷ সেই ফেসবুক- বন্ধুরা এসে অপেক্ষা করছিল ‘তার’ জন্য৷ গোয়েন্দাদের অনুমান, নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করে ওই ফেসবুক বন্ধুদের গুলি করে মারে জার্মান জঙ্গি ১৮ বছরের আলি সনবলি৷
পুলিশের মতে, সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগত বলেই বাড়িতে বেআইনিভাবে একটি গ্লক পিস্তল ও ৩০০টি বুলেট রেখেছিল৷ তাছাড়া সে মানসিক অবসাদেও ভুগছিল৷ নিয়মিত মানসিক অবসাদের ওষুধ খেত৷ তার পুরনো অপরাধের কোনও রেকর্ড নেই৷ ছিল না কোনও গার্লফ্রেন্ডও৷ পড়াশোনায় মোটামুটি ছিল৷ গত দু’বছর ধরে মিউনিখে ছিল৷ বাবা পেশায় ট্যাক্সিচালক৷ নজরে পড়ার মতো কোনও কাণ্ড সে এতদিন ঘটায়নি৷ কিন্তু বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া গেল ভয়ংকর তথ্য৷ নরওয়ের কুখ্যাত বর্ণবিদ্বেষী জঙ্গি যে মেশিনগান দিয়ে একাই ৭৭ জন নিরীহ নারী ও পুরুষকে গুলি করে মেরেছিল নরওয়ের সমুদ্রসৈকতে সেই আন্দ্রে বেহরিং ব্রেভরিককে ‘গুরু’ মানত সনবলি৷ সনবলির সঙ্গে ব্রেভরিংয়ের একটা যোগসূত্রও মিলেছে৷ গণহত্যা, রক্ত এসব পছন্দ করত সনবলি৷ গুলি, বন্দুক দিয়ে গণহত্যা চালানোর অনেক ভিডিও, ভিডিও গেমস মিলেছে তার ঘর থেকে৷ শান্তশিষ্ট ছেলের এই কুকর্মে হতবাক প্রতিবেশীরা৷ কিন্তু সে তো ইসলামিক স্টেটের লোক নয়৷ তাহলে হামলার পিছনে মোটিভ কী? মোডাস অপারেন্ডি কী? শুধুই জেহাদ? নাকি হতাশার বহিঃপ্রকাশ? অথবা মানসকি বিকৃতি? একাকীত্ব থেকে প্রতিহিংসা ধরা পড়ার ভয়েই কি আত্মহত্যা করল সনবলি? নাকি মুসলিম শরণার্থীদের প্রতি জার্মানদের আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য? উত্তর খুঁজছে জার্মান পুলিশ৷ রীতিমতো গোলকধাঁধাঁয় অ্যাঞ্জেলা মর্কেলের সরকার৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.