সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বক্সিং রিংয়ের মধ্যে রাজকীয় হাঁটাচলা, প্রতিপক্ষকে বিদ্ধ করার কায়দা দেখে সকলে বলতেন, ‘প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ায় আর মৌমাছির মতো হুল ফোটায়৷’ তিনি নিজে নিজেকে বলতেন, ‘অ্যাম দ্য গ্রেটেস্ট, অ্যাম দ্য গ্রেটেস্ট, অ্যাম দ্য কিং অফ দ্য ওয়ার্ল্ড৷’ শনিবার সেই সিংহাসন খালি করে চলে গেলেন বক্সিং রিংয়ের রাজা মহম্মদ আলি৷ তিন দশকের বেশি সময় ধরে প্রাণঘাতী পার্কিনসন ডিজিজের সঙ্গে চলছিল তাঁর হার না-মানা লড়াই৷ এর আগেও বার কতক মৃত্যুকে মুষ্টিযুদ্ধে কাবু করে ফিরে এসেছিলেন জীবনের আঙিনায়৷ কিন্তু এবার পারলেন না অদম্য সাহসী কিংবদন্তি বক্সার মহম্মদ আলি৷ ৭৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিন বারের হেভিওয়েট বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বক্সার৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে শনিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷
দিন কয়েক ধরে শরীর ভাল যাচ্ছিল না মহম্মদ আলির৷ জন্মস্থান, আমেরিকার কেন্টাকি প্রদেশের লুইভিল শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন৷ শুক্রবার থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়৷ সেখানেই এদিন মৃত্যু হয় আলির৷ তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন প্রবাদপ্রতিম এই বক্সার৷ মৃত্যুর সময় তাঁর শয্যার পাশেই ছিলেন পরিজনেরা৷ তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে আপামর বিশ্বের ক্রীড়ামহলে৷
জন্মসূত্রে নাম ক্যাসিয়াস ক্লে৷ কিন্তু ধর্মান্তরিত হয়ে নাম হয় মহম্মদ আলি৷ মাত্র ২২ বছর বয়সে সেই নামেই হেভিওয়েট বক্সিংয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন৷ তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বক্সিং রিংয়ের রাজাকে৷ ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাননি আলি৷ প্রবল বিরোধিতা করেন সরকারি নীতির৷ প্রকাশ্যে বলেন, ‘আমার বিবেক আমাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি দিচ্ছে না৷ কেন মারব ওই গরিব-গুর্বো লোকগুলোকে যারা কোনও দিন আমাকে কৃষ্ণাঙ্গ বলে ঘৃণা করেনি, দূরে ঠেলে দেয়নি? কেন নির্বিচারে হত্যা করবে আমার ভাইদের কেন না তারা প্রবলপরাক্রমী আমেরিকার বিরোধিতা করেছে?’
এই সরকারির বিরোধিতার ফল হয় মারাত্মক৷ কেড়ে নেওয়া হয় বক্সিং রিংয়ের সমস্ত অর্জিত পুরস্কার৷ জেলের অন্ধ কুঠুরিতে কাটাতে হয় পাঁচটি বছর৷ ১৯৭১ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ফিরে পান হারানো সম্মান৷ ফিরে পান বক্সিংয়ের লাইসেন্স৷ সেই বছরই ম্যাডিশন স্কোয়্যারে জো ফ্রেজারের কাছে প্রথমবার হারেন আলি৷ সেই ম্যাচটিকে বলা হয় ‘শতাব্দীর লড়াই’৷ টানা পনেরো রাউন্ড ধরে চলে ডুয়েলটি৷ ১৯৭৪ সালে এই ফ্রেজারের কাছ থেকেই নিজের হারানো মুকুট ছিনিয়ে নেন ‘কিং’ আলি৷ ২০০৫ সালে পান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.