সুলয়া সিংহ: দু’জনই ময়দানের পুরনো সৈনিক। দু’জনই ডার্বি খেলেছেন ও খেলিয়েছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা এবং পরিসংখ্যানের বিচারে একজন আরেকজনের থেকে অনেকটা এগিয়ে। একজন গুরু আর অন্যজন শিষ্য। আর রবিবাসরীয় যুবভারতীতে একদিকে যখন চলবে তিন পয়েন্টের লড়াই তখন সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা হবে দুই মগজাস্ত্রের। সুভাষ ভৌমিক এবং শংকরলাল চক্রবর্তীর।
শেষ ছ’টি ডার্বিতে অপরাজিত মোহনবাগান। কিন্তু গত পাঁচ বছরে কলকাতা লিগের বড় ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি সুবজ-মেরুন শিবির। সুতরাং রবিবারের ম্যাচের আগে মোহনবাগান ৫০-৫০ জায়গায় দাঁড়িয়ে। অন্যদিকে গত ডার্বিতে জয় না পাওয়াটাই তাতাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল টিডিকে। এই ম্যাচ জিতেই এগিয়ে যেতে চাইছেন তিনি। কারণ ডার্বির লড়াইয়ের পরই লিগের রং একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যাবে। কিন্তু মাঠে বল গড়ানোর আগে মাইন্ড গেম শুরু হয়ে গিয়েছে দুই তাঁবুতেই। ধারে-ভারে দুই কোচই একে অপরকে এগিয়ে রাখলেন। একদিকে শংকরলাল বলে দিলেন, “ওরা সিঙ্গল স্ট্রাইকারে খেললেও পিছন থেকে চারজন অ্যাটাক করছে। আবার অ্যাকোস্টাও নেমে পড়বে ডার্বিতে। সেটপিস থেকে সেও গোল করার চেষ্টা করবে। সুতরাং লড়াইটা বেশ কঠিন।” ময়দানের ভোম্বলদার বক্তব্য, “মোহনবাগানের ফরোয়ার্ড লাইন দারুণ শক্তিশালী। ডিকা-হেনরিরা ভাল ফর্মে রয়েছে। গোটা দলই ভাল খেলছে।” ডিকা-হেনরির জন্য যেমন স্পেশ্যাল ছক কষছেন সুভাষ, ঠিক তেমনই আমনার দিকে বিশেষ নজর বাগান কোচের।
টিকিটের হাহাকার, ডার্বির উত্তাপের মধ্যে দুই শিবিরে দুই তারকার দিকে শনি সকালে নজর ছিল সমর্থকদের। একজন রাশিয়া বিশ্বকাপে নেইমারকে আটকানোর দায়িত্বে ছিলেন। প্রথমবার লাল-হলুদ জার্সি গায়ে রবিবার নামার কথা সেই অ্যাকোস্টার। তাঁকে নিয়ে বাড়তি একটা উত্তেজনা রয়েছে লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যে। তাঁর প্রশংসা শোনা গেল শংকরলালের মুখেও। “অ্যাকোস্টা লাল-হলুদে যোগ দেওয়ায় নিঃসন্দেহে ওদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। কলকাতার ময়দানে বিশ্বকাপার খেলবেন, এটা সকলের কাছেই বড় প্রাপ্তি। তবে ডার্বিতে কী হবে, কে কেমন খেলবে, আগে থেকে বলা কঠিন। এর আগেও অনেক নামী ফুটবলার খেলেছেন। কিন্তু মাঠে নামটাই সব নয়।” বলছেন বাগান কোচ। চলতি লিগে অ্যাকোস্টার খেলা দেখার সুযোগ হয়নি। তবে কোস্টারিকানকে সামলানোর ভোকাল টনিক দিয়ে রেখেছেন ডিকা-আজহারদের।
সল্টলেক গ্রাউন্ডে যেমন অ্যাকোস্টাকে ঘিরে উত্তেজনা, তেমনই সবুজ-মেরুন তাঁবুতে প্র্যাকটিস শেষ হতেই শোনা গেল একটি নাম। ‘মেহতাব-মেহতাব।’ হ্যাঁ, আট বছর পর দলকে ডার্বি জেতাবেন বলেই তো হাজার বিতর্কের পরও এই জার্সি গায়েই মাঠে নেমেছেন। তাঁকে কোচ প্রথম থেকে খেলাবেন কিনা এখনও জানা নেই। তবে ইস্টবেঙ্গলকে তিনি চেনেন হাতের তালুর মতোই। তাই ডার্বিতে অভিজ্ঞতার দিক থেকে লেটার মার্কস পেয়ে বসেই আছেন বাগানের মিডফিল্ডার। তবে আবেগও রয়েছে ভরপুর। এতবছর ধরে যে দলের হয়ে ডার্বিতে লড়াই করেছেন, এবার খেলতে হবে সেই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেই। মুখে অবশ্য কোনও আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করলেন না। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে দলকে জেতানোই তো লক্ষ্য তাঁর। সবমিলিয়ে রবিবারের ডার্বি শুধুই চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় নয়, শুধুই তিন পয়েন্টের টক্কর নয়। লড়াই গুরু-শিষ্যের। লড়াই বিশ্বকাপার আর দেশীয় অভিজ্ঞতারও। ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী ডার্বি যুদ্ধে সাফল্যের রং কার গায়ে লাগে, সেটাই দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.