স্টাফ রিপোর্টার: একদিকে নেই কোনও মুখ। সচিব পদপ্রার্থী অঞ্জন মিত্র শেষ মুহূর্তে নাম তুলে নেওয়ায় দিশেহারা মোহনবাগানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী। আরেকদিকে রোজই টুটু বোস ও তাঁর প্যানেলের সঙ্গে নাম লেখাচ্ছেন সমাজের বিভিন্ন অংশের একের পর এক প্রতিষ্ঠিতরা।
চমক শুরু দু’সপ্তাহ আগে। সৃঞ্জয় বোসদের সমর্থনে ভোট প্রচারে প্রথম দেখা যায় বাঙালির ‘মহারাজ’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। গত সপ্তাহে সবুজ-মেরুন তোতা ব্যারেটো। রবিবার বোস অ্যান্ড কোম্পানির হয়ে গলা ফাটালেন বাঙালির বুম্বাদা। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
স্টার থিয়েটারে টুটু বোস গোষ্ঠীর সভা। সেখানে চমক থাকবে না, তা হয়! প্রসেনজিতের আসার খবর আয়োজকদের কাছে ছিল। তাই অতি উৎসাহী চোখগুলোকে দেখে অনেকেই মুচকি হাসছিলেন। ভাবটা এমন, ‘আরে বাবা ধৈর্য ধর। তারপর দেখবে মজা’। উত্তর কলকাতার বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে দাপট শতাব্দী প্রাচীন বনেদিয়ানার। বাগানের আঁতুড়ঘর শহরের এদিকেই। তাই শুরু থেকে স্টার থিয়েটার হাউসফুল। মিটিং শুরু হল চেনা ছন্দে। তবে হঠাৎ করেই বিস্ফোরণ। সামনের দিকে বসে থাকা এক মহিলা সমর্থক লাফিয়ে উঠলেন। প্র–সে–ন–জি–ৎ। সাদা টি-শার্ট, ডেনিম জিন্সে অডিটোরিয়ামে ঢুকলেন বুম্বাদা। মাইক হাতে নিয়ে শুরুতেই নস্ট্যালজিক প্রসেনজিৎ। পৌঁছে গেলেন নিজের কৈশোরে। বলছিলেন, “আজ আমি যাই হই না কেন, জীবনের প্রথম নাটক এই স্টার থিয়েটারে। বয়স তখন ১৭। এখান থেকেই বড় হওয়া। এখানে আসার কথা বললেই মনের মধ্যে কেমন যেন একটা ভাল লাগা তৈরি হয়।”
একটু থেমে জীবনের গাড়ি নিয়ে গেলেন ব্যাক গিয়ারে। বললেন, “ফুটবল নিয়ে বেশি কিছু বলব না। আমার বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে কলকাতা, বোম্বে সব জায়গায় দেখেছি সুযোগ পেলে মোহনবাগানের খেলা দেখতে দৌড়ে মাঠে যেতে। তিনি, শচীন দেববর্মণ একসঙ্গে মাঠে বসে খেলা দেখতেন। অসম্ভব মোহনবাগান সাপোর্টার ছিলেন। ছোটবেলায় দেখেছি হারলে তিনদিন বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। সেই ট্র্যাডিশন ফ্যামিলিতে এখনও চলছে। আমার ছেলে বাইরে পড়াশোনা করে। ওর ধ্যান-জ্ঞান ফুটবল। ক্লাসের ক্যাপ্টেন। ভোর পাঁচটায় রোজ প্র্যাকটিসে যায়। কপালে থাকলে ফুটবলার হতেই পারে।”
কিশোর কুমার জুনিয়র ছবির প্রচারের ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি এসেছিলেন। সবাইকে অভিবাদন জানিয়ে স্টেজে বসলেন। সব বক্তার বক্তব্য শুনলেন। যেহেতু তাঁর নতুন ছবির নাম ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’, তাই দর্শকাসন থেকে অনেকে গান গাওয়ার অনুরোধ করলেন। তবে মোহনবাগানের অনুষ্ঠানে নিজের ছবির প্রচার করতে চাইলেন না বুম্বাদা। শুধু বললেন, “কিশোর কুমারের গান নিয়ে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি। সবাই দেখুন। আশা করি ভাল লাগবে।”
শুরুতে মোহনবাগান বা নির্বাচন নিয়ে কিছু বলতে চাইছিলেন না। তবে একটা সময় ঢুকে গেলেন সেই প্রসঙ্গে। যুক্তি দিয়ে গলা সাধলেন টুটু বোস, টুম্পাই বোসদের হয়ে। বললেন, “আমাদেরও একটা ফোরাম আছে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তার প্রেসিডেন্ট। আমি ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট। ৩৫ বছর এই লাইনে কাজ করছি বলে আমায় সৌমিত্রবাবু দায়িত্ব দেননি। হয়তো ওঁর মনে হয়েছে এই মানুষটা ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব নিতে পারে। তাই আমার উপর ভরসা রেখেছেন। দায়িত্ব দিয়েছেন। এখানে সেই দায়িত্ব আপনাদের। আপনারাই বেছে নিন কার হাতে ক্লাবের দায়িত্ব দিতে চান। সৃঞ্জয়ের কথা নতুন করে বলব না। ও আমার আদরের, ভালবাসার, স্নেহের পাত্র। তবে আপনারা ভাবুন কী করবেন। মনে রাখবেন, ক্লাবের সঙ্গে ঐতিহ্য জড়িয়ে। যা শুধু খেলার নয়। গোটা বাংলার। এবার সেই ঐতিহ্য বজায় রাখার দায়িত্ব আপনাদের।”
সকালে স্টার থিয়েটারের পর বিকেলে শহরের দুই প্রান্তে হয় আরও দু’টি মিটিং। একটি উল্টোডাঙা। অন্যটি কামালগাজিতে। মাঝে বাকি তিন সপ্তাহ। ২৮ অক্টোবর মোহনবাগান মাঠে নির্বাচন। অনেকেই বলছেন, নামেই ভোট। আসলে সেদিন হবে নির্বাচনী বিজয়োৎসব। দেখার শুধু তার রূপটা কেমন হয় সবুজ-মেরুনে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.