শুভজিৎ মণ্ডল: খেলোয়াড় আসেন, খেলোয়াড় যান। রেকর্ড গড়ে-রেকর্ড ভাঙে। কেউ ইতিহাস গড়েন, কেউ কালের অতলে তলিয়ে যান। কিন্তু খেলাটা চিরস্থায়ী। নিজের গতিতে স্বমহিমায় চলতেই থাকে। রাইকার্ড, ক্রুয়েফরা এসেছেন, বিশ্ব ফুটবলকে মাতিয়েছেন, আবার কালের নিয়মে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। কিন্তু মেসি-রোনাল্ডোরা? এদের সময় যেন শেষই হয় না।
ইংরেজিতে যাকে বলে Domination, পাতি বাংলায় দাপট, খেলার মাঠে যে ডমিনেশেন এই জুটি দেখিয়েছেন তার যেন অন্ত নেই। নয় নয় করতে করতে টানা দশটি বছর, নিজেদের ঐশ্বরিক ক্ষমতায় ভর করে ফুটবল বিশ্বকে দ্বিধাবিভক্ত করে দিয়েছিলেন এই দুই কিংবদন্তী। যেন দুই অক্ষ, দুই মেরু। এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায়। ২০০৮ সালের পর থেকে মেসি-রোনাল্ডোদের ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে বিশ্ব ফুটবল। এর মাঝে ইব্রাহিমোবিচ, অঁরি, জাভি, ইনিয়েস্তা, জেরার্ড, ল্যাম্পার্ড, রুনি এবং সবশেষে নয়া প্রজন্মের নেইমার, হ্যাজার্ড, বেলদের মতো অতিমানবিক প্রতিভাও অবদমিত।
শেষবারের মতো মেসি-রোনাল্ডোদের বাইরে শেষবার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছিলেন রিকার্ডো কাকা। সেসময় তাঁকেও অনেকে তুলনা করতেন ইশ্বরের সঙ্গেই। সালটা ২০০৭। ২০০৮ থেকে শুরু হল নয়া জমানা। তখন থেকে ফুটবল মানেই মেসি-রোনাল্ডো। ফুটবল মানেই গোল, অ্যাসিস্টের অবিশ্বাস্য প্রদর্শনী, ফুটবল মানেই দুই কিংবদন্তীর স্কিল-গতি-ক্ষীপ্রতার অদ্ভুদ সমাপতন। কিন্তু এসবই দুজনকে ঘিরে আবর্তিত। ফুটবল ঘরানাও যেন পুরনো ল্যাটিন, ইউরোপের গণ্ডি পেরিয়ে মেসি তথা রোনাল্ডো ঘরানায় পরিবর্তিত হয়েছিল। কেউ ভাল খেললেই বলা হয় মেসির মতো খেলছে কিংবা রোনাল্ডোর মতো ফ্রি-কিক নিচ্ছে। সমর্থকদের কাছে তাঁরা ছিলেন ঈশ্বর, আবার অনেকের কাছে নিজের প্রিয় ফুটবলারের প্রধান শত্রুও বটে।
টানা দশ বছরের এই ডমিনেশনের বুঝি শেষ নেই? যে গুটিকয়েক ফুটবল ভক্ত মেসি-রোনাল্ডোর এই দ্বন্দ্বে নিজেদের আড়াল করে রেখেছিলেন, তাদের মনে এই একটাই প্রশ্ন ছিল। অবশেষে কী তবে এই দাপুটে যুগের অবসান ঘটালেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ক্রোয়েশিয়ার নায়ক লুকা মদ্রিচ? কারণ এক দশকে এই প্রথমবার এমন হল যখন ফিফা বর্ষসেরার মঞ্চে দেখা গেল না মেসি বা রোনাল্ডোর কাউকে। সৌজন্য, বিশ্বকাপে মেসি-রোনাল্ডোদের হতাশা এবং ক্লাব-দেশ দুই জার্সিতেই মদ্রিচের সাফল্য। টানা দশ বছর পর ফের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতলেন।
তাহলে কি মেসি-রোনাল্ডো জমানার অবসান? বর্ষসেরা মঞ্চে কী আর উঠতে পারবেন না দুই ঈশ্বর। এত তাড়াতাড়ি হয়তো কিছুই বলা যায় না। কারণ, কী মেসি, কী রোনাল্ডো। বিগত দশবছরে দেখা গিয়েছে যখনই চাপের মুখে পড়েছেন দুর্দান্ত কামব্যাক করেছেন। এবারেও হয়তো তেমনটাই হবে। আবার হয়তো ফুটবল বিশ্ব সমাহিত হবে মেসি-রোনাল্ডোর দ্বন্দ্বে। তাই বলায় যায়, ঈশ্বররা সাময়িক ছুটি নিয়েছেন, আর সেই সুযোগে মদ্রিচদের হাত ধরে স্বাভাবিক হচ্ছে ফুটবল বিশ্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.